২০১৯ বার্লিনালে ক্যামেরা পেলেন আনিয়েস ভার্দা
১৯৫৫ সাল থেকে সিনেমা বানাচ্ছেন আনিয়েস ভার্দা৷ ২০১৭ সালে সম্মানসূচক অস্কার দেয়া হয় এই বেলজিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি নির্মাতাকে৷ এবার ৬৯তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে পেলেন বার্লিনালে ক্যামেরা৷
আনিয়েস বাই ভার্দা
‘ভার্দা পার আনিয়েস’ বা ইংরেজিতে ‘আনিয়েস বাই ভার্দা’ সেলুলয়েডে নির্মাতার আত্মজীবনীই বলা চলে৷ ৯০ বছর বয়সের এই নির্মাতা বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে এটি প্রদর্শন করেন৷ নিজের জীবন ও কাজকে সিনেমাটিক দৃষ্টিতে রূপালি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি৷ ফেস্টিভ্যাল প্যালেসে তাঁকেই দেয়া হয়েছে ২০১৯ সালের সম্মানসূচক বার্লিনালে ক্যামেরা৷
‘মোমেন্টস: ফেসেস অফ আ জার্নি’
এটি ছিল তাঁর সবশেষ চলচ্চিত্র৷ ২০১৮ সালে জার্মানিতে মুক্তি পায় এটি৷ নিজের দেশ ফ্রান্সকে নিয়ে হাস্যরসাত্মক এই সিনেমাটিতে তুলে ধরা হয়েছে বন্ধুত্বের গল্পও৷ জেআর নামে এক স্ট্রিট আর্টিস্টকে নিয়ে ফ্রান্সে বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন ভার্দা৷ শুধু ফরাসি জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নয়, তাঁদের জীবনের আনন্দও উঠে এসেছে এই সিনেমায়৷
এখনো লড়াইয়ে
গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ৮২ জন নারী, চলচ্চিত্র ব্যবসায় নারীদের কাজের অপ্রতুলতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন৷ তখনই রেড কার্পেটে আনিয়েস ভার্দা ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক তারকা৷ সেই ১৯৫০-এর দশক থেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত তিনি৷ শিল্প, প্রত্যয় ও রসবোধে তিনি অতুলনীয়৷
ভার্দার নানা কীর্তি
দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষাকৃত পরিচিত পুরুষ সহযোদ্ধা ফঁসোয়া ট্রুফো, ক্লোড শ্যাবল এবং জঁলিক গদারের আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিলেন ভার্দা৷ কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের সাথে মিলেই তিনি ফরাসি চলচ্চিত্রে নুবেল ভাগ বা নতুন ঢেউ নামের এক আন্দোলনের সূচনা করেন৷ পুরো ইউরোপ জুড়েই চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিবর্তন নিয়ে আসে এই আন্দোলন৷
‘লা পন্টে কোর্তে’দিয়ে শুরু
১৯৫৫ সালে এই সিনেমা নিয়েই প্রথম কোনো বড় উৎসবে আসেন ভার্দা৷ কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর এই ডকু-ফিচার ফিল্ম প্রদর্শিত হয়৷ ফরাসি ভূমধ্যসাগরে এক তরুণ দম্পতির গল্প তুলে ধরা হয় এই চলচ্চিত্রে৷ নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় ফরাসি জেলেদের জীবন সংগ্রাম ছিল সিনেমার গল্প৷ বক্সঅফিসে অবশ্য এটি তেমন সাফল্য বয়ে আনতে পারেনি৷
‘ওয়েডনেসডে বিটুইন ফাইভ অ্যান্ড সেভেন’
প্রথম সিনেমা সফল না হওয়ায়, পরবর্তী বেশ কিছু বছর ফরমায়েশি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ভার্দা৷ ১৯৬১ সাল থেকে আবার শুরু করেন এই সিনেমার কাজ. দ্বিতীয় ফিচার ফিল্মে ক্যানসার পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমান এক তরুণ পপ গায়কের গল্প তুলে ধরেন নির্মাতা৷ সিনেমাটির মূল বিষয় ছিল সময়, ভয় এবং মৃত্যু৷
রূপকথার গল্প: ‘দ্য ক্রিয়েচারস’
ফরাসি সিনেমার দুই তারকা ভার্দার পরিচালনায় ১৯৬৬ সালে এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন৷ মিশেল পিকোলি এবং কাটরিন দানুভ ছোট এক দ্বীপে ছুটি কাটানো এক দম্পতির ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ নায়ক একজন সায়েন্সফিকশন লেখক আর নায়িকা এক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন বাকশক্তি৷ পুরো সিনেমায় সাদা-কালো আর রঙিন দৃশ্য ব্যবহার করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রূপকথার আমেজ৷
ফ্রান্সে প্রত্যাবর্তন
১৯৬০-এর দশকের মধ্যভাগে যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণ করেন৷ ফ্রান্সে ফিরে আসার পর ১৯৭৭ সালে ‘ল্যু শাঁত, লুতে পাঁ’ (কেউ গায়, কেউ না) নামের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করেন৷ বন্ধুত্ব নিয়ে নারীবাদী বিতর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সিনেমায়৷
‘সান তোয়াঁ নি লোঁয়া’ (মুক্ত পাখি)
১৯৮৫ সালে আসে ভার্দার সবচেয়ে বড় সাফল্য৷ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জিতে নেন৷ নিজের জীবনের ছায়া অবলম্বনে তিনি এক বুর্জোয়া পরিবার থেকে উঠে আসা তরুণীর গল্প তুলে ধরেছেন এই সিনেমায়৷
জেন বিরকিনের সঙ্গ
আগের চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেত্রী জেন বিরকিনের সঙ্গে পরপর দুটি সিনেমা বানান ভার্দা৷ একটি পোর্ট্রেট ফিল্মের পর ১৯৮৭ সালে তৈরি করেন ‘ল্য পেতিঁ আমোর’ (দ্য টাইম উইথ জুলিয়েন)৷ এই সিনেমায় ৪০ বছরের এক নারীর সঙ্গে ১৪ বছরের এক ছেলের প্রেমের গল্পের কথা তুলে ধরা হয়৷ সিনেমাটিতে বার্দার ছেলে এবং বিরকিনের মেয়েও অভিনয় করেন৷
স্বামীকে বিদায়
ভার্দার দীর্ঘদিনের স্বামী জাঁক ডেমি মারা যান ১৯৯০ সালে৷ তাঁকে নিয়ে পরের বছর খুবই ব্যক্তিগত আবেগনির্ভর চলচ্চিত্র ‘জাঁকুয়ো দে নন্তে’ তৈরি করেন ভার্দা৷