1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানি-তুরস্কে: কেমন ছিল ২০১৭?

২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

২০১৭ সালে তুরস্ক জার্মান নাগরিকদের গ্রেপ্তার করেছে, বার্লিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে, আংকারার রাজনীতিকরা কথায় কথায় নাৎসিদের তুলনা দিয়েছেন৷ আপাতত উত্তেজনা কিছুটা কমেছে – সেটা কি আশার চিহ্ন?

https://p.dw.com/p/2pxS5
ম্যার্কেল ও এর্দোয়ান
ছবি: picture-alliance/POP-EYE/B. Kriemann

জার্মানি ও তুরস্কের সম্পর্ক বোধহয় এর আগে কখনো এতো নীচে নামেনি৷ ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর পারস্পরিক সন্দেহ ও সংঘাত নিত্যনতুন সংঘাতের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

ফেব্রুয়ারি মাসে তুর্কি-জার্মান সাংবাদিক ডেনিজ ইউচেল তুরস্কে গ্রেপ্তার হন৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকার সংবাদদাতা ইউচেলকে ‘‘সন্ত্রাসবাদী'' ও ‘‘গুপ্তচর'' বলে অভিহিত করেন৷ ইউচেলের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তা সত্ত্বেও তিনি গত ১০ মাস ধরে কারারুদ্ধ৷ বার্লিন ইউচেলের গ্রেপ্তারি ও আটককে ‘‘রাজনৈতিক পণবন্দি গ্রহণের'' সঙ্গে তুলনা করেছে৷ 

পরবর্তী সংকট দেখা দেয় এপ্রিলে তুরস্কের সাংবিধানিক গণভোটের ঠিক আগে, যে গণভোটের লক্ষ্য ছিল, প্রেসিডেন্টকে নতুন ও ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান৷ একাধিক জার্মান পৌর প্রশাসন ঐ গণভোটের ব্যাপারে জার্মানিতে তুর্কি রাজনীতিকদের প্রচারণা নিষিদ্ধ করে৷ জরিপে তখন বলছে যে, গণভোটের ফলাফল যে কী হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷

জার্মানির তুর্কিরা প্রধানত এর্দোয়ানের পক্ষেই ভোট দেন

জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে তখন নির্বাচন চলেছে৷ তাঁকে ও তাঁর সরকারের প্রতিনিধিদের যে জার্মানিতে জনসভা করতে দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে ক্ষিপ্ত এর্দোয়ান উভয় দেশকেই নাৎসি জার্মানির সঙ্গে তুলনা করেন – তাঁর উত্তেজনা বাড়ানোর স্ট্র্যাটেজি বিদেশে নিন্দিত হলেও, দৃশ্যত স্বদেশে তাঁকে আরো বেশি সমর্থন এনে দেয়৷

এর্দোয়ান সমর্থিত গণভোট সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গৃহীত হয়৷ জার্মানিতে বসবাসকারী অধিকাংশ তুর্কি সংবিধান পরিবর্তনের সপক্ষে ভোট দেন৷ দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট এএফডি (‘জার্মানির জন্য বিকল্প') দল এর সুযোগ নিয়ে যে সব তুর্কিরা গণভোটের সপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের তুরস্কে প্রত্যাবর্তন দাবি করে৷ অন্যান্য রাজনীতিকরাও উপলব্ধি করেন যে, আংকারার সঙ্গে কূটনৈতিক কাজিয়া ঘরোয়া রাজনীতির আখড়াতেও কাজে লাগানো যেতে পারে৷ কাজেই তুরস্কের ইইউ-তে যোগদান সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনার অবসান ঘটানোর দাবি জার্মান সংসদীয় নির্বাচনে একটা বড় প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়৷

উভয় দেশেই নির্বাচনি প্রচার অভিযানে পারস্পরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির নীতিকে কাজে লাগানো হয়, বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা৷ ‘‘২০১৭ সালের নির্বাচনি বছর কোনো তরফের জন্যই ভালো ছিল না,'' বলে আংকারার গাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মুস্তাফা নেইল আলকানের ধারণা৷ ‘‘উভয় পক্ষ তাদের সংসদীয় কর্মকালে অভ্যন্তরীণ নীতির সপক্ষে যুক্তি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছে ও সে কাজে সফল হয়েছে৷''

বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে?

ইস্তানবুলের হাইনরিশ ব্যোল নিধির প্রধান ক্রিস্টিয়ান ব্রাকেল জার্মান নির্বাচনি প্রচারণায় তুরস্ক প্রসঙ্গে ‘‘মাত্রাধিক উত্তেজনা'' প্রদর্শনের অভিযোগ করেছেন৷ নিরপেক্ষ হাইনরিশ ব্যোল নিধি জার্মানির সবুজ দলের সঙ্গে যুক্ত৷ ব্রাকেলের মতে ‘‘তুরস্কের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী নীতির সমালোচনা যুক্তিযুক্ত, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে৷ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের সমালোচনা জার্মানিতে খুবই জনপ্রিয়৷ যারা তুরস্কের রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত নন এবং নিজেরাও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি অনুরাগের জন্য পরিচিত নন, তারাই সর্বদা মানুষের মন জয় করার জন্য তুরস্কের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে থাকেন৷'' 

তুর্কি গণভোটের পরও উত্তেজনা কমেনি৷ জার্মান রাজনীতিকদের তুরস্কের ইনচিরলিক বিমানঘাঁটিতে জার্মান সৈন্যদের পরিদর্শন না করতে দেওয়া নিয়ে বিরোধ শেষমেষ ঐ সৈন্যদের জর্ডানে নিয়োগ করার সিদ্ধান্তে পর্যবসিত হয়৷ ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে আংকারা কর্তৃপক্ষ যে সব তুর্কি সামরিক কর্মকর্তার খোঁজ করছিলেন, তাদের অনেকে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন৷ জুলাই মাসের সূচনায় জি-টোয়েন্টি শীর্ষবৈঠক উপলক্ষ্যে এর্দোয়ান হামবুর্গে আসেন, কিন্তু জার্মান সরকার তাঁকে তুর্কিদের একটি জনসভায় ভাষণ দেবার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন৷ প্রায় একই সময়ে জার্মান মানবাধিকার আন্দোলনকারী পেটার স্টয়েডনারকে ইস্তানবুলে গ্রেপ্তার করা হয়৷

বার্লিন থেকে সতর্কতা

জুলাই মাসের শেষে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘‘তুরস্কের প্রতি নীতির পুনর্বিন্যাসের'' কথা ঘোষণা করেন৷ তুরস্ক যাত্রার ব্যাপারে সাবধানতার নির্দেশ জারি করা হয়, এছাড়া তুরস্কে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে জার্মান সরকারের গ্যারান্টি ও ইইউ-তে যোগদানের আগে তুরস্কের প্রতি অর্থসাহায্য পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ তুর্কি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলকানের মতে এই পদক্ষেপের পিছনে কোনো বাস্তব অভিপ্রায় ছিল না, বরং তা ছিল তুরস্কের প্রতি এক সতর্কতা৷ বাস্তবে জার্মানি আর তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী, যাদের পরস্পরকে প্রয়োজন, এবং উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবনতির ফলে দু'পক্ষেরই ক্ষতি হতো, বলে আল্কানের অভিমত৷

ব্যোল নিধির ব্রাকেল বলেন যে, তিনি তুরস্কের প্রতি জার্মান নীতিতে ‘‘কোনো বড় পরিবর্তন'' লক্ষ্য করেননি এবং অবস্থান আরো অনমনীয় করলে, তা তুরস্কে জার্মান কোম্পানিগুলির স্বার্থের হানি ঘটাতে পারে৷ ‘‘ইইউ-এর প্রাক-সদস্যতা সাহায্যের মতো টাকার অঙ্কটা অনেক ক্ষেত্রে সামান্য,'' বলেন ব্রাকেল৷ জার্মানির পক্ষে তুরস্ককে আঘাত দেবার একমাত্র পন্থা হল, ইউরোপীয় ব্যাংককে তুরস্কের প্রতি বিনাশর্তে ঋণদান বন্ধ করতে বলা৷''

শ্রোয়ডারের গোপন দৌত্য

সেপ্টেম্বরের শেষে জার্মান সংসদীয় নির্বাচনের পর মিডিয়ায় খবর বেরোয় যে, সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর গ্যারহার্ড শ্রোয়ডার একটি গোপন মিশনে তুরস্কে গিয়ে এর্দোয়ানের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন ও দৃশ্যত এই দৌত্যের প্রস্তাব এসেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলের তরফ থেকে, যিনি আগে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা বলে নিয়েছেন৷ শ্রোয়ডার যে স্টয়েডনারের ব্যাপারে এর্দোয়ানের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন, আংকারা তা অস্বীকার করলেও, স্টয়েডনার অক্টোবর মাসেই মুক্তি পেয়ে জার্মানিতে প্রত্যাবর্তন করতে সমর্থ হন৷

আলকান সাবেক চ্যান্সেলরের উদ্যমের প্রশংসা করে বলেন, যেমন জার্মান, তেমন তুর্কি রাজনীতিকরা শ্রোয়ডারের উপর আস্থা রাখেন৷ ‘‘দু'পক্ষই উত্তেজনা লাঘব করতে চায়, নয়তো তারা এই মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করত,'' বলেন আলকান৷

নভেম্বরের শেষে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ও ম্যার্কেল এর্দোয়ানের সঙ্গে এক পর্যায় টেলিফোনালাপে‘‘সম্পর্কের উন্নতিসাধন''নিয়ে কথাবার্তা বলেন৷ ডিসেম্বরের সূচনায় ডেনিজ ইউচেল-এর কারাবাসের শর্তাবলীর উন্নতি ঘটে৷ এর দু'সপ্তাহ পরে জার্মান অনুবাদিকা মেজালে টোলু-কে তুর্কি কারাগারে সাত মাস আটকে রাখার পর মুক্তি দেওয়া হয়৷

উত্তেজনা কমতির দিকে?

ব্রাকেলের মতে বার্লিন ও আংকারার মধ্যে একটি ‘‘নীরব আপোশ'' সংঘটিত হচ্ছে৷ স্বভাবতই তার অর্থ এই নয় যে, সংকটের অবসান ঘটেছে৷ যতদিন তুরস্কে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক মানের অবনতি ঘটতে থাকবে, ততদিন জার্মানিতে তুরস্কের প্রতি সঠিক মনোভাব নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে৷

২০১৮ সাল অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকবে, বলে আলকানের ভবিষ্যদ্বাণী৷ তবে নতুন সংকটও দেখা দিতে পারে, যেহেতু পুরনো সংকটগুলির কোনো সমাধান হয়নি৷ তাঁর মতে ২০১৯ সালে জার্মান ও তুরস্কে বিভিন্ন নির্বাচনের ফলে উত্তেজনা আবার বাড়তে পারে৷ আলকানের মতে দু'পক্ষের মধ্যে পুনরায় আস্থা সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যে কাজে শুধু সরকার নয়, উভয় দেশের সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকেও সামিল হতে হবে৷

বেকলান কুলাকসিজোগলু/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান