বাবাদের আকাঙ্খা ও বাস্তবতা
১৭ জানুয়ারি ২০১৪সন্তান লালনপালন ও পেশা – এই দুই-এর মধ্যে কীভাবে সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে এখন গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে জার্মানিতে৷ জার্মানির পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মানুয়েলা শোয়েসিগ মা-বাবার জন্য সাপ্তাহিক কাজের সময়সীমা কমিয়ে ৩২ ঘণ্টা করার কথা বলছেন৷ তাঁর মতে, এর ফলে বাজেটে যে টানাটানি পড়বে, সেটা রাষ্ট্রীয় খাত থেকে আংশিক হলেও পুষিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল অবশ্য এই প্রস্তাবে সায় দেননি৷
পরিবারবান্ধব কর্মজগত
তবে এর মাধ্যমে পরিবারবান্ধব কর্মজগতের ব্যাপারে আলোচনার আরেকটি ক্ষেত্র তৈর হয়েছে৷ এর কিছুদিন আগে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন জার্মান সেনাবাহিনীতেও পারিবারিক আবহ তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন৷
বলা বাহুল্য, এই মন্ত্রীরা চান এক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন আনতে৷ তাঁরা চান জার্মানিতে আরো শিশুর জন্ম হোক, তরুণী মায়েরা কর্মজগৎ থেকে ছিটকে না পড়ুক৷ কিন্তু এসব সম্ভব হবে, যদি পুরুষরা সহযোগিতা করেন৷ এখনও তাঁদের মনমানসে নারী পুরুষের সেই সনাতন চিত্রটা গেঁথে আছে৷
মতামত জরিপ ইনস্টিটিউট ফর্সার আজকের বাবাদের নিয়ে এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ১০ জনে ৯ জন বাবা ‘ফুলটাইম' চাকরি করেন৷ গত কয়েক বছরে এই অবস্থার খুব কমই পরিবর্তন হয়েছে৷ উল্লেখযোগ্য যে, অর্ধেকেরও বেশি বাবা মনে করেন, তাঁরা যথেষ্ট সময় সন্তানদের সঙ্গে কাটাতে পারছেন না৷ একই সঙ্গে ফুলটাইম কাজকেই তাঁরা প্রিয় ‘ওয়ার্কিং মডেল' বলে মনে করেন৷
বাবারা পরিবারে বেশি সম্পৃক্ত
এটা অবশ্য ঠিক যে, আজকের বাবারা পারিবারিক জীবনে অনেক বেশি সম্পৃক্ত৷ সমাজেও পরিবারঘেঁষা পুরুষদের ‘নরম-ইমেজে'-র চিত্রটা বদলেছে৷ জানান সমাজতত্ত্ববিদ টোমাস গ্যাস্টারকাম্প৷
তবে পুরুষরা এখন অনেকটা উভয়সংকটে পড়েছেন৷ তাঁরা সব জায়গাতেই দক্ষ হতে চান৷ যেমন বাড়িতে তেমনি চাকরিক্ষেত্রে৷ ‘‘সবচেয়ে ভালো হয়, মাসে ১০.০০০ ইউরো বেতন পেলে৷ আর দুপুরের মধ্যেই কাজ শেষে বাড়িতে ফিরতে পারলে৷'' জানান গবেষক গ্যাস্টারকাম্প৷ অবশেষে পুরুষরা কাজ ও ক্যারিয়ারের দিকেই ঝুঁকে পড়েন৷ বিশেষ করে প্রথম সন্তান জন্মের পর আবার সনাতন চিন্তাধারাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷
পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সময়
আজকের বাবারা পিতৃত্বকালীন ছুটি নিলেও খুব বেশি হলে সেটা হয় দুই মাস৷ তবে পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সময়৷ আর এই দুই মাসে তাঁদের মধ্যে পিতৃত্বের মমতাবোধ জেগে ওঠে৷ সেই সাথে দায়িত্ববোধও৷ আজকের পুরুষরা সন্তান জন্মের সময় কাছে না থাকার কথা ভাবতেই পারেন না৷ পরিবার, গৃহস্থালী ও বাচ্চার জন্য সময় দিতে না পারলে বিবেকের দংশনেও ভোগেন অনেকে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে কাজ কমিয়ে দেন না তাঁরা৷এ
এক্ষেত্রে জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের পুরুষদের মধ্যেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, পুনরেকত্রীকরণের ২৫ বছর পরেও৷ জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের ৬৫ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, তাঁরা ধোয়ামোছা কিংবা রান্নাবান্না খুব কম বা একেবারেই করেন না৷ পূর্বাঞ্চলের মাত্র ৪৪ শতাংশ পুরুষ এই কথা জানিয়েছেন৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির ৩৯ শতাংশ বাবা মনে করেন, পুরুষ ও নারী দু'জনেরই পরিবারের জন্য সমান দায়িত্ব রয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের মাত্র ১৭ শতাংশ পুরুষ এই ধারণা পোষণ করেন৷