২০১২ সাল ইউরো এলাকার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
১১ জানুয়ারি ২০১২বর্তমান পরিস্থিতি
২০১১ সালে ইউরো এলাকায় যে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছিল, নতুন বছরেও সেগুলি মোটেই কেটে যায় নি৷ সমস্যা আসলে তিন রকমের৷ আর্থিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক৷ কড়া হাতে সংস্কার চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও গ্রিস, ইটালি, স্পেন ও পর্তুগালের মতো দেশ এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না৷ কিন্তু সমস্যা হলো, ব্যয় সংকোচন ও সংস্কার করতে গিয়ে ইউরো এলাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেমে যাচ্ছে৷ মানুষের আয় কমিয়ে তাদের উপর আরও করের বোঝা চাপালে তারা ব্যয় করবে কীভাবে? এটাও একটা বড় সমস্যা৷ আর এবছর ফ্রান্স ও গ্রিসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ নিকোলা সার্কোজি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ আমরা জানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি ফ্রান্স ও জার্মানি৷ এতদিন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সার্কোজির সঙ্গে একযোগে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছেন৷ সেই ক্ষমতাকেন্দ্রে শূন্যতা এলে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে৷ সেক্ষেত্রে ম্যার্কেল ও আইএমএফ'এর প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ হাল ধরবেন বলে অনেকে মনে করছেন৷
গ্রিস তথা ইউরো এলাকার ভবিষ্যৎ রূপরেখা সম্পর্কে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হলো, কোনো দেশকেই যাতে ইউরো এলাকা ছেড়ে চলে যেতে না হয়৷ গ্রিসের বিষয়টি অবশ্য একেবারে আলাদা৷ সেদেশের সংকট কাটাতে বেসরকারি ক্ষেত্র এগিয়ে এসেছে বটে, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়৷ গ্রিসকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে৷ ব্যাংকগুলি যাতে স্বেচ্ছায় গ্রিসের ঋণভার কিছুটা লাঘব করে, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি৷ মোটকথা, এই সব পদক্ষেপের ফলে গ্রিস একটা বড় সুযোগ পাচ্ছে৷ তবে এটা একেবারেই একটা ব্যতিক্রম৷''
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
তবে শুধু ম্যার্কেল ও সার্কোজি নয়, ইউরোপীয় নেতাদের বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে৷ গত বছরে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করাই হবে প্রথম পদক্ষেপ, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভবিষ্যতে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নতুন কাঠামো৷ মন্দা এড়াতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করার বিষয়েও ইইউ নেতারা কথা বলবেন৷ ৩০শে জানুয়ারি বছরের প্রথম ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে সোমবারই বার্লিনে ম্যার্কেল-সার্কোজি বৈঠক হয়ে গেলো৷ গোটা ইউরো এলাকায় আর্থিক লেনদেনের উপর কর চাপাতে চান ম্যার্কেল৷ কিন্তু তার ফলে আখেরে ব্রিটেনেরই লাভ হবে বলে মনে করছে ম্যার্কেল'এর জোটসঙ্গী দল৷ তাই বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয় নি৷ সার্কোজি নির্বাচনের আগে ভোটারদের মন জয় করতে তড়িঘড়ি করে ফ্রান্সে এই কর চালু করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু এমন একক উদ্যোগে ফল পাওয়া কঠিন৷
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
তবে আশার আলো কি একেবারেই দেখা যাচ্ছে না? সামগ্রিক পরিস্থিতি বেশ জটিল, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু এবছর ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে৷ ব্যাংকের নতুন প্রধান মারিও দ্রাগি গত মাসেই ব্যাংকগুলিকে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে বাজারে অনেকটা আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন৷ এখন প্রশ্ন হলো, ইউরোপীয় নেতারাও ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নিতে পারবেন কি না৷ বিশেষ করে ব্রিটেনের ‘একলা চলো রে' নীতির কারণে সেই ঐক্যে আরও চিড় ধরতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক