২০ দিনে ৩০ গুণ সংক্রমণ
২০ জানুয়ারি ২০২২২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ জন৷ মারা গেছেন চার জন৷ সংক্রমণের হার ২৬.৩৭ ভাগ৷
এর আগের দিন বুধবার ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় হাজার ৫০০ জন৷ মারা গেছেন ১২ জন৷
গত ১০ দিনের চিত্র দেখলে ভয়াবহ পরিস্থিতি বোঝা যাবে৷ ১১ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৪৫৮ জন, মারা গেছেন দুইজন৷ ১২ জানুয়ারি আক্রান্ত দুই হাজার ৯১৬, মৃত্যু চার৷ ১৩ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৩৫৯, মৃত্যু ১২৷ ১৪ জানুয়ারি আক্রান্ত চার হাজার ৩৭৮, মৃত্যু ছয়৷ ১৫ জানুয়ারি আক্রান্ত তিন হাজার ৪৪৭, মৃত্যু সাত৷ ১৬ জানুয়ারি আক্রান্ত পাঁচ হাজার ২২২, মৃত্যু আট, ১৭ জানুয়ারি আক্রান্ত ছয় হাজার ৬৭৬, মৃত্যু ১০৷ ১৮ জানুয়ারি আক্রান্ত আট হাজার ৪০৭, মৃত্যু ১০৷ ১৯ জানুয়ারি আক্রান্ত ৯ হাজার ৫০০, মৃত্যু ১২৷ ২০ জানুয়ারি আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ হন, মারা গেছেন চার জন৷ এই বিবেচনায় ১০ দিনে সংক্রমণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ৷ আর যদি ১ জানুয়ারির বিবেচনা করা হয় তাহলে সংক্রমণ বড়েছে ৩০ গুণ৷ ১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে ৩৭০ জন৷ মারা গেছেন চার জন৷
বাংলাদেশে এপর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন৷ মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৮০ জন৷ দেশের ১২টি এলাকাকে নতুন করে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে৷ ওই ১২টি এলাকা হলো: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় ও খাগড়াছড়ি৷ তবে এখন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগই ঢাকায়৷ ঢাকায় আক্রান্তদের ৬৯ ভাগ ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ এর বাইরে ৩১টি জেলা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে৷
আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, এখন ঢাকা শহরে ৭০-৭৫ ভাগই ওমিক্রনের সংক্রমণ৷ আর ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি৷ ফলে দ্রুত ছাড়াচ্ছে৷ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাওয়ায় এখন ঢাকার বাইরে এবং গ্রামাঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷
তিনি বলেন,"আগামী দুই-তিন সপ্তাহ এটা বাড়তে থাকবে৷ এই হারে বাড়লে দিনে সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে৷ আর আগে দেখা যেত পিক-এ গিয়ে কমে যায় কিন্তু এবার সহসা পিক থেকে নামবে না৷ এবার ছাড়ানোর হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ হাসপাতালেও আগের পিকের সমান রোগীই যাবে৷ যাদের টিকা দেয়া আছে তারা আক্রান্ত হলেও বেশি জটিলতা হবেনা৷ কিন্তু যারা এখনো টিকা দেননি এবং বয়ষ্ক ও নানা শারীরিক জটিলতা আছে তাদের জন্য বিপদ৷ তাই টিকা নিতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে৷ মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি৷”
বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম মনে করেন, হাসপাতালে নেয়া নয়, সংক্রমণ ঠেকানোই হলো মোকাবেলার উপায়৷ নয়তো কোনোভাবেই হাসপাতালে সবাইকে জায়গা দেয়া যাবে না৷ তাই তিনি মনে করেন,"টিকা দেওয়ার গতি আরো বাড়াতে হবে৷ মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে আইন প্রয়োগ করতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করতে হবে৷ আর ঘরে বাইরে সবখানেই সভা-সমাবেশ বন্ধ করতে হবে৷ কারণ বদ্ধ জায়গায় করোনা বেশি ছড়ায়৷ সরকার নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকতে পারে না৷ এটা কার্যকর করাও তার দায়িত্ব৷”
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের করোনা ঠেকাতে ১৫ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর হতে বলেছেন৷ তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়নে তাদেরই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে৷ টিকা দেয়ার গতিও বেড়েছে বলে তিনি জানান৷
সরকারি হিসেবে এপর্যন্ত করোনা টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৯ কোটি ১৩ লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন৷ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭২ জন৷ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন আট লাখ ৭৩ হাজার ৪৪১ জন৷ দেশে প্রথম বারের মত বৃহস্পতিবার জনসন এন্ড জনসনের তিন লাখ ৩৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে৷