1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২ বছরে ৪৩ হত্যা মামলার আসামি রোহিঙ্গারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ গত দুই বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে ৪৭১টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ৪৩টি৷ রয়েছে ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক চোরাচালানের অভিযোগও৷

https://p.dw.com/p/3OQRL
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ৪৭১টি মামলায় আসামি এক হাজার ৮৮ জনছবি: DW/ P. Vishwanathan

গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনয়িনের জাদিমুরা এলাকায় হত্যা করা হয় স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে৷ তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ৷ এই হত্যার সঙ্গে রোহিঙ্গা অস্ত্রধারীরা জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ প্রতিবাদে জাদিমুরা ক্যাম্পের আশেপাশে ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান স্থানীয়রা৷

শুক্রবার গভীর রাতে টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ শাহ ও মো. শুক্কুর নামে দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হন৷

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস জানান, ‘‘ওই দু'জন যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার আসামি৷ তারা জাদিমুরা ক্যাম্পে অবস্থান করছে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে করে গুলি ছোড়ে৷ পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়লে ওই দু'জন নিহত হয়৷ তাদের অবস্থান থেকে দু'টি দেশে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে৷''

এর আগে গত ২২ আগস্ট বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দু'জন রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হন৷ তারা ইয়াবার চালান নিয়ে আসছিলো বলে জানিয়েছিল বিজিবি৷

মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা বাংলাদেশে আশা শুরু করে৷ এই ধাপের আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আসে কক্সবাজারে৷ তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন৷

মো. ইকবাল হোসেন

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে৷ গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ৪৭১টি মামলা হয়েছে৷ আর এইসব মামলায় আসামির সংখ্যা এক হাজার ৮৮ জন৷''

দুইশতাধিক মাদক চোরাচালান মামলা রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে৷ মানব পাচারের মামলাও রয়েছে চারটি৷ এছাড়া অস্ত্র, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, নারী নির্যাতন, অপহরণ ও পুলিশের ওপর হামলার মামলাও রয়েছে৷ কিছু রোহিঙ্গা নারীর বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে৷

ইকবাল হোসেন বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে৷ ইয়াবার উৎস যেহেতু মিয়ানমার, আর তারা এসেছেনও মিয়ানমার থেকে, তাই এই ব্যবসায় তাদের যোগাযোগ ভালো৷ সে কারণেই তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে হয়৷''

তবে রোহিঙ্গাদের এই অপরাধ প্রবণতা তাদের নিজেদের মধ্যেই বেশি বলে তিনি জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের তেমন বিরোধ নেই৷ দুই বছরে যে ৪৩ জনকে রোহিঙ্গারা হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে একমাত্র বৃহস্পতিবার নিহত যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকই স্থানীয় বাংলাদেশি৷ বাকি ৪২ জনই রোহিঙ্গা শরণার্থী৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তাকে (ফারুক) রোহিঙ্গা ডাকাতরা হত্যা করেছে৷ ফারুক ক্যাম্পগুলোতে ঠিকাদারির কাজ করত৷ আমরা ধারণা করছি, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আধিপত্যের দ্বন্দ্বে তাকে হত্যা করেছে৷''

মো. ইউনূস আরমান

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুখপাত্র মো. ইউনূস আরমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষুদ্র একটি অংশের অপরাধে জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত দু:খজনক৷ এটা আমাদেরও বিব্রত করে৷ কিন্তু যারা মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ করছেন, তাদের মূলত স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে৷ আর যেসব রোহিঙ্গা এইসব অপরাধ করছে তারা ক্যাম্পে থাকে না৷ ক্যাম্পের নাম্বার থাকলেও তারা বাইরে থাকে৷ তবে অপরাধ করার পর অনেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়৷''

মো. ইউনূস আরমানের অভিযোগ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তাদের ইয়াবা পাচারের ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা৷ তিনি বলেন, ‘‘কক্সবাজারে মাদক ব্যবসা করে কারা বিলাসবহুল বাড়ি ও সম্পদের মালিক তা তো আপনারাই জানেন৷ স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোও একইভাবে গরীব রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে৷ হত্যাকাণ্ডগুলোও ক্যাম্পের বাইরে হয়েছে৷''

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলছেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা বাড়লেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি৷ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে নয়টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে৷ ক্যাম্পগুলোতে ১১শ' পুলিশ ফোর্স সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান