শরণার্থী শিশুদের শিক্ষার জন্য কি করছে ইরান?
১ অক্টোবর ২০১৭২০১৫ সালে ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই ইরানের শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আদেশ দেন যাতে তারা আফগান শিশুদের দেশটির সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ করে দেয়৷ বৈধভাবে এবং অবৈধভাবে আসা, অর্থাৎ সব আফগান শিশুরই পড়ার সুযোগ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি৷ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ইরানে ৯৫ ভাগেরও বেশি অভিবাসী আফগানিস্তান থেকে আসা এবং তাদের মোট সংখ্যা অন্তত ১৫ লাখ৷ খামেনেইয়ের এই নির্দেশের পরও সরকারি স্কুলগুলো অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের স্কুলে নিবন্ধন করতে রাজি হয়নি৷
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানবিদ নাদের মুসাভি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খামেনেইয়ের আদেশ কার্যকর হলে তিন চতুর্থাংশ আফগান শিশু স্কুলে পড়ার সুযোগ পেতো৷'' মুসাভি নিজেও একজন আফগান৷ তেহরানের আফগান শিশুদের স্কুলের ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন গত ১৯ বছর ধরে৷ তিনি জানালেন, ঐ আদেশের পরপরই ২০০ থেকে ৩০০ আফগান শিক্ষার্থী ইরানের সরকারি স্কুলে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল৷ এখন যেসব স্কুলে আফগান শিশুরা পড়ে, সেগুলো বেসরকারি এবং আফগানদের দ্বারা পরিচালিত৷ ইরানি কর্তৃপক্ষ এই স্কুলগুলোকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি৷ এসব স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা আফগান দূতাবাস থেকে সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে৷
ইউনিসেফে কর্মরত শিশু অধিকার কর্মী আকরাম খাতাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইরানে আফগান শরণার্থীদের এখনো সেভাবে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নেই৷'' অনেক বিশ্লেষক অবশ্য তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন৷ তাঁরা বলছেন, ধীরে ধীরে আফগান শরণার্থী ও অভিবাসীদের প্রতি ইরানের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে৷ যেমন মুসাভি বললেন, ‘‘ইরানের তরুণ প্রজন্ম আফগান অভিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখায়৷ বর্তমানে অনেক ইরানিই আফগান অভিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে৷''
টুইটারে ‘মেহর হ্যাশট্যাগ' ব্যবহার করে ইরানের শিশু অধিকার কর্মীরা কয়েক সপ্তাহ আগে একটা প্রচারণা শুরু করেছেন, যাতে চলতি বছরে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার সময় আফগান অভিবাসী শিশুদের স্কুলে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়৷ এই সামাজিক আন্দোলনের পর দেশটির শিক্ষামন্ত্রী তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, কোনো আফগান শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না৷
অধিকারকর্মীরা এবং শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা ৫ বছর আগে একটা জরিপ চালিয়েছিলেন, যেখানে দেখা গেছে ইরানে ৪ থেকে ৫ লাখ শিশু স্কুলে যায় না এবং এদের প্রায় শতভাগ অভিবাসী৷ সম্প্রতি তারা একটি প্রতিবেদনে দেখেছেন, এই সংখ্যাটা বেড়ে ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে৷
মুসাভি আফগান অভিবাসী শিশুদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন, ‘‘একটি হলো যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, দ্বিতীয় দলের বৈধ কাগজপত্র আছে, কিন্তু তাদের অভিভাবকরা কাজের খোঁজে অন্য বড় শহরগুলোতে যাওয়ার চেষ্টায় আছে এবং তৃতীয়ত বয়সের কারণে যাদের স্কুলে যাওয়ার যোগ্যতা হয়নি৷''
অধিকার কর্মীরা এখনো তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে অভিবাসী শিশুদের জন্যও শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়৷
শিরিন সাকিব/এপিবি