অস্ত্র মামলার তদন্ত নিয়ে বিতর্ক
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় ১৪ জনের ফাঁসির রায় দেয়ার পরও বিতর্ক শেষ হয়নি৷ বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে অস্ত্র ধরা পড়ার পর, তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রহস্যজনক নীরবতা এবং হাওয়া ভবনের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছেন৷ তখন গুলশানের হাওয়া ভবন ছিল খালেদা জিয়ার বড় ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কার্যালয়৷
মঙ্গলবার রাতে সংসদে এ ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেন, বিচারকের পর্যবেক্ষণে খালেদা জিয়া এবং হাওয়া ভবনের নাম আসায় তাঁদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তদন্ত করা হবে৷ তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে বিচার প্রক্রিয়ার আওতায়ও আনা হবে ঘটনাটি৷ তবে এর পিছনে কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে কিনা, কোথা থেকে টাকা এসেছে এবং এর সঙ্গে অন্য কারা জড়িত, সেটাও তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট স ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, কোনো মামলার বিচারের রায় হয়ে যাওয়ার পরও প্রয়োজনে অধিকতর তদন্ত হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে, অর্থাৎ অধিকতর তদন্তে নতুন কারুর বিরুদ্ধে অভযোগ প্রমাণ হলে তদন্তকারীরা সম্পূরক চার্জশিট দিতে পারেন৷ আর আদালত তখন নতুন অভিযুক্তদের ব্যাপারে বিচার শুরু করতে পারে৷ তবে এই অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিতে হয় সরকারকে৷ আদালত বা কোনো তদন্ত সংস্থা নিজ উদ্যোগে এটা করে না বা করতে পারে না৷ রেজাউল করিম উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড মামলায় আদালতে অভিযোগ গঠন করার পর, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্দেশে এক সময় অধিকতর তদন্ত এবং সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়৷
তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিচারের রায় দেয়ার পর এই মামলায় নতুন করে তদন্ত শুরু এবং নতুন কাউকে অভিযুক্ত এবং বিচারের মুখোমুখি করার কোনো সুযোগ নেই৷ এমনকি এর কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই৷ তিনি বলেন, বিচারকের পর্যবেক্ষণ আর রায় এক জিনিস নয়৷ সেক্ষেত্রে নতুন তদন্ত হলে আগের তদন্ত কি বাতিল হবে?
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলেই ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা হয়েছিল৷ এরপর সাত বছর ধরে এ ঘটনার নানা তদন্ত শেষে বিচার হয়েছে৷ তখনকার বিএনপি সরকার এই অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকলে অস্ত্র ধরা হতো না৷ ঘটনাটির সঙ্গে খালেদা জিয়া বা তাঁর ছেলে যুক্ত থাকলে অস্ত্র ছেড়ে দিতে পারতেন বা গোপন করতে পারতেন৷ কিন্তু তখনকার সরকার তা না করে অস্ত্র আটক করে মামলা দিয়ে জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা করেছে৷ আর বর্তমান সরকার তা নিয়ে রাজনীতি করছে৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এখন আবার নতুন করে তদন্তের কথা বলছে আইনকে তোয়াক্কা না করে৷ অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের কথায়, সংসদে প্রধানমন্ত্রী এই অস্ত্র নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা অগ্রণযোগ্য এবং দুঃখজনক৷
উল্লেখ্য, গত ৩০শে জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার রায়ে তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর এবং কয়েকজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়৷