হেমন্ত থেকে শীতে জার্মানরা যে দশটি কাজ বা ‘অকাজ’ করেন

প্রতিবছর নভেম্বরের গোড়ার দিকে আসে সেন্ট মার্টিনস ডে, সেই খ্রিষ্টান সন্ত যিনি এক ঝড়ের দিনে এক ভিখিরিকে তাঁর ক্লোক দান করেছিলেন৷ ছোটরা এদিন তাদের নিজেদের তৈরি কাগজের লন্ঠন হাতে নিয়ে মিছিল করে যায় সন্ত মার্টিনের গান গাইতে গাইতে৷ বড়দের কেউ একজন সন্ত মার্টিন সেজে সাদা ঘোড়ায় চড়ে শোভাযাত্রার সাথে যান৷

কার্নিভালের সূচনা হলো বছরের এগারো নম্বর মাস অর্থাৎ নভেম্বরের এগারো তারিখে সকাল এগারোটা বেজে এগারোটা মিনিটে৷ জার্মানিতে কার্নিভালের তিনটি মূল ঘাঁটি কোলোন, ড্যুসেলডর্ফ আর মাইঞ্জে এই দিনটি বিশেষ ধুমধামসহ পালন করা হয়৷ কার্নিভালের মরশুম শেষ হয় পরের বছর অ্যাশ ওয়েডনেস ডে-তে, ২০১৭ সালে যা পড়বে পয়লা মার্চে৷

বিশেষ করে চেস্টনাট৷ বাদামগুলো ঢাকা থাকে কাঁটাওয়ালা সবুজ খোলার মধ্যে৷ এই চেস্টনাট খাওয়ার চেস্টনাট নয়, কিন্তু ছোটরা এগুলো কুড়োতে ভালোবাসে, তাই দিয়ে নানা ধরনের ছোট ছোট জন্তুজানোয়ার বানাতে ভালোবাসে৷

হেমন্তের জঙ্গলে ব্যাঙের ছাতা খুঁজতে বেরোন অনেকে, খাওয়া যায়, এমন সব ব্যাঙের ছাতা; ভেজে বা রান্না করে কিংবা ওমলেটে দিয়ে৷ মুশকিল হলো, বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতারও কোনো অভাব নেই, তার ওপর তাদের অনেককে অন্য কোনো নির্দোষ ও সুস্বাদু ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে৷ কাজেই মাশরুম খোঁজার কাজটা আনাড়িদের জন্য নয়, নয়তো হাসপাতালে যেতে হতে পারে৷

হেমন্ত মানেই পাতা ঝরার দিন৷ তবে ঝরার আগে গাছের পাতা যেন বহুরুপীর মতো রঙ বদলায়, সবুজ থেকে বেগুনি, লাল হয়ে হলুদ ও শেষমেশ বাদামি৷

ইংরেজিতে বলে থার্মাল বাথ, অর্থাৎ সারা বছর গোসল করা যায়, এমন গরম পানির সুইমিং পুল৷ এগুলো শীতেও খোলা থাকে এবং জার্মানদের অতি প্রিয়৷ মুশকিল এই যে, স্পা’র কোনো কোনো বিভাগে, যেমন সনায়, জামাকাপড় পরার নিয়ম নেই, কাজেই সাথে একটা তোয়ালে রাখা ভালো৷

পশমের মোজা থেকে শুরু করে আন্ডায়ওয়্যার হয়ে মাথা ঢাকার টুপি অবধি, পশম ছাড়া জার্মানিতে শীত কাটানোর কথা ভাবাই যায় না৷ প্রশ্ন হলো, গরমে এই শীতের পোষাকগুলো কোথায় থাকবে এবং কিভাবে রাখা হবে, নয়তো সেগুলো পোকায় কেটে দিতে পারে৷

বাড়িতে হিটিং ছাড়া এই ঠাণ্ডার দেশে বাঁচা যায় না৷ গোড়ায় ছিল কয়লা কিংবা তেলের ওভেন বা চুল্লি; পরে আসে গ্যাস বা বিদ্যুতের সেন্ট্রাল হিটিং; আরও আধুনিক হলো আন্ডারফ্লোর হিটিং বা মেঝের তলার হিটিং৷

এই কাজটা এতোই জার্মান যে এর কোনো ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই৷ জার্মানে বলে ‘‘স্টোস-ল্যুফ্টেন’’ যার অর্থ, ‘এক ধাক্কায় হাওয়া লাগানো’৷ হিটিং চলা অবস্থাতেই কয়েক মিনিটের জন্য বাইরের জানলা দরজা হাট করে খুলে দেওয়ার নাম ‘স্টোস-ল্যুফ্টেন’৷ এতে নাকি ঘরে ড্যাম্প লেগে শ্যাওলা ধরে না৷

বড়দিনের আগের শেষ ২৪ দিনের হিসেব রাখার জন্য যে বিশেষ ক্যালেন্ডারটি ব্যবহার করা হয়, তার নাম অ্যাডভেন্ট ক্যালেন্ডার বা খ্রিষ্টাগমনের বর্ষপঞ্জি৷ এই ক্যালেন্ডারের বিশেষত্ব হল, এর খোপে খোপে চকোলেট রাখা থাকে, প্রতিটি দিনের জন্য একটি করে চকোলেট৷