1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হেফাজতে মৃত্যু কমছে না

২২ জানুয়ারি ২০২৩

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর গত এক বছরে বাংলাদেশে ‘‘ক্রসফায়ারে'' মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও হেফাজতে মৃত্যু তেমন কমছেনা৷ চলতি মাসেই গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে একজনের মৃতুর ঘটনায় স্থানীয়রা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন৷

https://p.dw.com/p/4MYcT
সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিল থানা হেফাজতে সুমন শেখ নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়৷ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী থানার সামনে বিক্ষোভ করেনছবি: Abdullah Al Momin/DW

২০২১ সালের ডিসেম্বরের র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ২০২২ সালে এক বছরে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন তিনজন৷ কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছেন ১৬ জন৷ ক্রসফয়ারে ২০২১ সালে ৫১ জন নিহত হয়েছেন, হেফাজতে মারা গেছেন ৩৯ জন৷

এর বাইরে কারা হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসেনা বা আড়ালেই থেকে যায়৷ ২০২২ সালে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৬৫ জন৷ এদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ২৮ জন৷ বিচারাধীন ৩৭ জন৷ ২০২১ সালে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৮১ জন৷ তাদের মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ২৯ জন৷ বিচারাধীন ৫২ জন৷ এইসব তথ্য মানবাধিকার সংঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক)৷

মানবাধিকার কর্মী এবং আসকের সাধারণ সম্পাদক নূর খান এ বিষয়ে বলেন, ‘‘কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা এখন অনেক বেশি৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে তাদের একটি অংশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে গিয়ে মারা যান৷ আসলে এটা পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ফল৷''

চলতি মাসের উদাহরণ

কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি: নূর খান

মুঠোফোনে বিটকয়েন দিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে গত ৭ জানুয়ারি রাতে চারজনকে আটক করে গাজীপুরের বাসন থানার পুলিশ৷ পরের দিন তিনজনকে ছেড়ে দিলেও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে থানায় আটকে রাখা হয়৷ মঙ্গলবার রাতে বাসন থানার এসআই নুরুল ইসলাম ও মাহবুবসহ একদল পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে আসেন৷ পরে রাতে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, রবিউল মারা গেছেন৷ শুরুতে পুলিশ ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানালে পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে৷ দু'জন সাব ইন্সপেক্টরকে প্রত্যাহার করা হয়েছ৷ নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে৷ তার পরিবার অভিযোগ করেছে ছেড়ে দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিলো পুলিশ৷ পরিবারকে পুলিশ মামলাও করতে দেয়নি৷ পুলিশ বাদী হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মামলা করেছে৷

নূর খান বলেন, ‘‘আমরা একটিও ক্রসফায়ার চাইনা৷ তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ার কমেছে৷ কিন্তু থানা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা কমছে না৷ তারা মৃত্যুর ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে৷ যেগুলো পারেনা সেগুলো আমরা জানতে পারি৷ মৃত্যু ছাড়াও থানা হেফাজতে আরো অনেক নির্মম নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ বাংলাদেশের যা পরিস্থিতি তাতে কেউ সাধারণত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায়না৷ আপস করতে বাধ্য হয়৷''

আর মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘আগে ক্রসফায়ার করত র‌্যাব৷ এখন পুলিশ হেফাজতে মারা যায়৷ এটা কৌশলের পরিবর্তন৷ সার্বিক পরিস্থিতির কোনো উন্নয়ন নয়৷ আমরা দেখছি ক্রসফায়ারের পরিবর্তে এখন হেফাজতে মারা যাচ্ছে৷''

তার কথা, ‘‘মানসিকতা ও আচরণগত পরিবর্তন এবং ঘটনার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় না আনা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবেনা৷''

হেফাজতে মৃত্যুর মাত্র একটি ঘটনায় শাস্তি

বাদীকে আপস করতে বাধ্য করা হয়: ইশরাত

২০১৩ সালের হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণ আইনে একটিমাত্র ঘটনার বিচার হয়েছে৷ ১০ বছরে আর কোনো শাস্তির নজীর নেই৷ ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার মিরপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে দুই ভাই ইশতিয়াক হোসেন জনি ও ইমতিয়াজ হোসেন রকিকে আটক করে পুলিশ৷ পরে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় বড় ভাই জনির৷ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ওই আইনে মামলা করেন ইমতিয়াজ হোসেন রকি৷ ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলার রায়ে রায়ে মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ এক লাখ টাকা করে জরিমানা ও দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত৷ রায়ে বলা হয়, জরিমানা ও ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে আরও ছয় মাস করে কারাদন্ড ভোগ করতে হবে৷ এছাড়া দুই আসামিকে সাত বছরের কারাদন্ড দেন আদালত৷

এই সময়ে মামলাও তেমন হয়নি৷ সর্বোচ্চ ৩৫টির মতো মামলা হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, এই আইনটি জাতিসংঘ সনদ মেনে করা হয়৷ ফলে আইনটি একটি ইউনিক আইন৷ এই আইনে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক নির্যাতনও অপরাধ৷ আর প্রচলিত স্বাক্ষ্য আইনের মত মামলা প্রমাণের দায়িত্ব বাদীর নয়, আসামিদের৷ ঘটনা যেখানেই ঘটুক বাংলাদেশের যে কোনো আদালতে মামলা করা যায়৷পুলিশের কাছেও মামলা করা যায়৷ সেটা নেবেন এসপি পদ মর্যাদার কর্মকর্তা৷ সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ আর হেফাজত বলতে সব ধরনের পুলিশ, কারাগার, এমনকি সরকারি কর্মকর্তার হেফাজতকেও বোঝানো হয়েছে৷

তার কথা, ‘‘প্রথমত এই আইন সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নয়৷ এরপর কেউ মামলা করতে গেলে পুলিশ তাকে প্রভাব খাটিয়ে বিরত রাখে৷ আমি কয়েকটি মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছি বাদীকে আপস করতে বাধ্য করা হয়৷ শুধু তাই নয় মামলা হলে প্রশিক্ষণের অভাবে তদন্তকারীরা ঠিকমত তদন্ত করতে পারেন না৷ আমি একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখেছি তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, বাদী ঘটনা প্রমাণ করতে পারেননি৷ কিন্তু এই আইনে সেটা বাদীর দায়িত্ব নয়, আসামির দায়িত্ব৷''

জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘এই আইনটি করা হয়েছে জাতিসংঘের চাপে৷ কিন্তু খেয়াল করবেন পুলিশ তাদের প্রত্যেকটা কনফারেন্সে এই আইনটি বাতিলের দাবি তোলে৷ তারা এই আইনটি চায়না৷ ফলে এই আইনের প্রচার নাই৷ আবার কেউ এই মামলা করতে গেলে তাকে বিরত রাখার সব কৌশল নেয়৷''

তার কথা, ‘‘জেলা ও দায়রা জজ আদালত পর্যন্ত এই আইনে মামলা করা যায়৷ ওই পর্যায়ে মামলা না নিলে মামলা করার আর সুযোগ থাকেনা৷ আবার তদন্ত দেয়া হয় পুলিশকে৷ তাহলে তদন্ত তো পুলিশের মতই হয়৷''

 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য