মিশরে হিজাব
৩ সেপ্টেম্বর ২০১২সপ্তাহান্তে নতুন ইতিহাসের সূচনা৷ এমন খবর মনে সচরাচর খুশির আবেশই ছড়ায়৷ কিন্তু মিশরের এ খবর সে দেশের কত লোককে আশ্বস্ত করেছে বলা মুশকিল, তবে কারো কারো মনে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে ঠিকই৷ কারণটা আর কিছু নয়, ফাতমা নাবিলের অন্যরকম এক সাফল্য! গত রোববার দেশের ইতিহাসে হিজাব পরা প্রথম সংবাদপাঠিকা হয়ে ফাতমা ঢুকে পড়েছেন ইতিহাসের পাতায়!
মুসলিম অধ্যুষিত প্রতিটি দেশের মতো মিশরেও হিজাব খুব পুরোনো ব্যাপার৷ চাইলে পরা যেতেই পারে এবং রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা অনেকদিন ধরে তা পরে আসছেনও৷ কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে হিজাব নিষিদ্ধ ছিল বহুকাল৷ হোসনি মুবারক হিজাব পরে টেলিভিশন খবর পড়া বা যে কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন৷ কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে গণবিক্ষোভের মুখে সাবেক এই স্বৈরশাসকের পতনের পর থেকে মিশর কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুরু করেছে উল্টো পথে হাঁটা৷ ফাতমা নাবিল হিজাব পরে রোববার রাত ১২টার খবর পড়ে নতুন ইতিহাস গড়ার সুযোগ পেয়েছেন সে কারণেই৷ মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আরো তিনজন নাবিলের মতোই ইতিহাসে নাম লেখাবেন একে একে৷
কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে রক্ষণশীলতাকে এভাবে উৎসাহিত করার বিষয়টি দুশ্চিন্তায় ফেলছে উদারপন্থীদের৷ মুবারক আমলের শেষ তথ্য মন্ত্রী আনাস আল ফিকি গত জানুয়ারিতেও এক উপস্থাপিকার হিজাব পরে টিভি পর্দায় হাজির হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন৷ কিন্তু কাজ হয়নি তাতে৷ ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে আদালত সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়৷ তারপর থেকে মিশরময় হিজাবের ব্যবহার বাড়ছে হু হু করে৷
মুবারকের পতনের পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে রক্ষণশীলরা দুই তৃতীয়াংশ আসন পাওয়ায় অনেকে ধারণা করছিলেন রাষ্ট্রের নানা সিদ্ধান্তে এর প্রভাব দেখা দেবে শিগগিরই৷ গত মাসেই নতুন তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের সালাহ আব্দুল মাকসুদ৷ তারপর এক মাস না যেতেই হিজাব পরে খবর পরে ফাতমা নাবিলের এই ইতিহাস রচনা৷ অনেকের মতো মিশরের এক আঞ্চলিক টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারকর্মী মোনা সালমান শঙ্কিত, ‘‘এ দেখে ভয় হচ্ছে ভবিষ্যতে না আবার হিজাব পরেন না এমন মেয়েদের টিভি পর্দায় হাজির হওয়াই বন্ধ করে দেয়৷'' সরকার নিয়োজিত কর্তাব্যাক্তিরা অবশ্য সে আশঙ্কাকে কথার তোড়ে উড়িয়েই দিচ্ছেন৷
এসিবি / এসবি (ডিপিএ)