মিউনিখে হাসিনা-ম্যার্কেল বৈঠক হবে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭শেখ হাসিনা ৫৩তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগদানের জন্য তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করছেন৷ ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সম্মেলন শুরু হবে৷
প্রধানমন্ত্রী ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেবেন এবং একই দিনে সম্মেলনের প্যানেল আলোচনায় জলবায়ু নিরাপত্তা এবং ‘গুড কপ ব্যাড কপস’ বিষয়ক পর্যালাচনা সভায়ও যোগ দেবেন৷
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানান, ‘‘বর্তমান বিশ্বের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় ‘বেস্ট থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কনফারেন্স’ হিসেবে বিবেচিত এই সম্মেলনে বিশ্বের ২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যোগ দেবেন৷’’
সম্মেলনে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ইস্যু ছাড়াও খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, উদ্বাস্তু এবং অভিবাসনের মতো বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি৷
বৈঠকে শেখ হাসিনা ও ম্যার্কেল রোহিঙ্গা ইস্যুসহ উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পারষ্পরিক সহযোগিতাসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রশমন, ইউরোপে চলমান শরণার্থী ও অভিবাসন সংকট এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে মত বিনিময় করবেন বলে জানাগেছে৷ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ নিরোধে নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনার লক্ষ্যে একটি যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হতে পারে৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক এম হুমায়ূন কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সম্মেলনের অনেক গুরুত্ব আছে৷ বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতাদের মনোভাব বোঝার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ আর নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যে অস্থিরতা ও সংকট, অভিবাসী সমস্যা এগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট অবস্থান নিতে পারবে বাংলাদেশ৷ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প জামনায় ইউরোপ কী ভাবছে, তা জানতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী৷’’
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘জার্মানি বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী, বাংলাদেশি পন্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার জার্মানি৷ এছাড়া জার্মানিতে বাংলদোশি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে৷ এসব বিষয়ে আরো ক্ষেত্র হয়তো বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘জার্মানি সব সময়ই শরণার্থীদের ব্যাপারে উদার৷ এছাড়া মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের যে সম্পর্ক, তা কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে জার্মানি৷’’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘‘জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ৷ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী ইউরোপের প্রথম দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি অন্যতম৷ ইউরোপ জুড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী রাজনৈতিক শক্তির আকস্মিক উত্থান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রশমন, ইউরোপে চলমান শরণার্থী ও অভিবাসন সংকট, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে পারষ্পরিক বোঝাপড়া আরও সুসংহত হবে বলে আশা করা যায়৷’’
১৯৬৩ সালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের যাত্রা শুরু হয়৷ পাঁচ দশক ধরে এই সম্মেলনে বিশ্ব নিরাপত্তা ও শৃংখলার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ মিউনিখ কনফারেন্সে পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, তুরস্কসহ বিশ্বের ২০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ অংশগ্রহণ করবেন৷ এছাড়াও এ সম্মেলনে ন্যাটো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, গ্রীন পিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করবেন৷
এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷