1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাসপাতালে ‘দুর্নীতি’: খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকের হাতে হাতকড়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ জুলাই ২০২১

‘৩০০ টাকা বরাদ্দে রোগী পায় ৭০ টাকার খাবার’, এমন খবর প্রকাশ করে ঠাকুরগাঁওয়ের তিন সাংবাদিক ডিজিটাল আইনের মামলার শিকার হয়েছে৷ তাদের একজনকে গ্রেপ্তারের পর অসুস্থতার কারণে আদালত জামিন দিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3wKSz
তানভীর হাসান তানুকে রোববার আদালতে হাজির করা হলে অসুস্থতার কারণে জামিন দেয়া হয়৷ ছবি: Jeebon Haq

খবরটি ছিলো ঠাকুরগাঁও সদর আধুনিক হাসপাতাল নিয়ে৷ সপ্তাহ খানেক আগে বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় ওই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য প্রতিদিন খাবারের বরাদ্দ ৩০০ টাকা৷ কিন্তু তাদের প্রতিদিন যে খবার দেয়া হয় তার দাম ৭০ টাকা৷

প্রতিবেদনগুলোতে খাবারের ছবি, রোগীদের অভিযোগ ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু এরপর গত শুক্রবার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল ইসলাম৷ মামলায় যে তিনজনকে আসামি করা হয় তারা হলেন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের তানভীর হাসান তানু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আব্দুল লতিফ লিটু এবং নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোর ডটকমের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি রহিম শুভ৷

তানভীর হাসান তানু শনিবার সন্ধ্যায় সদর থানায় গেলে পুলিশ তাকে ওই মামলায় আটক করে৷ রোববার তাকে আদালতে হাজির করা হলে অসুস্থতার কারণে আদালত জামিন দেন৷ মামলার আসামি অন্য দুইজন সাংবাদিকের একজন রহিম শুভ জানান, ‘‘আটকের পর তানুকে হাতকড়া পরিয়ে থানার লকআপে রাখা হয়৷ তিনি করোনা পজেটিভ ছিলেন, দুইদিন আগে নেগেটিভ হন৷ গভীর রাতে তার শ্বাসকষ্ট হলে থানা থেকেই তাকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেখান থেকেই রবিবার তাকে একই অবস্থায় আদালতে পাঠানো হয়৷

তানভীর হাসান তানু

জামিন পাওয়া সাংবাদিক তানভির হাসান তানু অভিযোগ করেন, ‘‘গোপনে মামলা করায় আমি জানতাম না৷ থানায় পেশাগত কাজে গেলে আমাকে আটক করা হয়৷ আমি বারবার অসুস্থতার কথা বলার পরও আমাকে হাতকড়া পরানো হয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রতিবেদনে কোনো অসত্য তথ্য নাই৷ নানা ফলসহ হরলিক্স দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় না৷ বাজার যাচাই করে দেখেছি যে খাবার দেয়া হয় তার দাম ৭০-৮০ টাকার বেশি না৷ অথচ বরাদ্দ ৩০০ টাকা৷ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কও আমাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন করোনার ব্যস্ততার কারণে নজর দিতে পারেননি, কিছু সমস্যা হয়েছে৷ তারপরও মামলা করা হলো৷’’

তিনি অভিযোগ করেন, এই মামলায় স্থানীয় এমপির হাত আছে৷ কারণ খাবারের ঠিকাদার এমপির কাছের লোক৷ আর মামলা করার কথা ঠিকাদারদের কিন্তু মামলা করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক৷

তিনি জানান, ‘‘ওই প্রতিবেদনের পর ৩০০ কোটি টাকার আরেকটি অনিয়ম নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম৷ ধারণা করি সে কারণেই মামলা হয়েছে৷’’ তিনি বলেন, সাংবাদিকদের চাপে রাখতে এখন মামলার কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে৷ দুর্নীতি অনিয়মের খবর প্রকাশ করায় এর আগেও একইভাবে মামলা হয়েছে৷ এটা নিয়ে সাংবাদিকরা আতঙ্ক আছেন৷

আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল ইসলাম মামলার অভিযোগে বলেছেন, তারা তদন্ত করে দেখেছেন ওই প্রতিবেদনের তথ্য সত্য নয়৷ ওই খবর প্রকাশ হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে৷ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

ডা. মো. নাদিরুল ইসলাম

তিনি রোববার সন্ধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবছর করোনা বেড়ে যাওয়ার পর কয়েকটা দিন অসঙ্গতি দেখা দেয়৷ দুধ পাওয়া না যাওয়ায় দুধ দেয়া হচ্ছিল না৷ আমরা ঠিকাদারকে বলেছি দুধের সমপরিমাণ দামের ডিম দিতে৷ তারা লিখেছেন, ৭০ টাকার খাবার দেয়া হয়৷ আমার প্রশ্ন ৭০ টাকায় তিন বেলা খাবার দেয়া কি বাংলাদেশে সম্ভব?’

তার দাবি, ‘‘প্রতিবেদনে আমাদের বক্তব্য দেয়া হয়েছে৷ তারা আসলে হাসপাতালে আসেননি, আমাদের সঙ্গে কথাও বলেননি৷’’

ঠিকাদারের পরিবর্তে তিনি মামলা কেন করলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘‘ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্দেশে মামলা হয়েছে৷ স্থানীয় এমপি এই কমিটির সভাপতি৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এর আগেও কিছু প্রতিবেদন হয়েছিল সামাজিক দূরত্ব না মানা এবং মাস্ক না পরা নিয়ে৷ তখন আমরা সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছিলাম আর প্রতিবেদন না করতে৷ সমস্যার সমাধান যদি হয়ে যায় তাহলে প্রতিবেদন করা কী দরকার৷ কারণ প্রতিবেদন করলে জনরোষ হয়৷ চিকিৎসকরা বিপদে পড়েন৷ কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেননি৷’’

তার কথা , ‘‘আমরা করোনার জন্য এত কাজ করছি সেটা নিয়ে প্রতিবেদন না করে অসত্য প্রতিবেদন করা হচ্ছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান