হাসপাতাল আছে, ডাক্তার নেই, রচনার কথায় বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪মেদিনীপুরে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় হাসপাতাল থাকলেও সেখানে যথেষ্ট চিকিৎসক নেই। রচনার কথায়, ''বড় বড় হাসপাতাল রেডি করেছি কিন্তু ডাক্তার নেই।'' চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তার তার বক্তব্য, ''আপনাদের বলবো, জেলার হাসপাতালগুলির দিকে একটু নজর দিন।'' এখানেই শেষ নয়, রচনা বলেছেন, ''মানুষকে তো সেই কলকাতাতেই ছুটতে হচ্ছে আর যেতে যেতে রাস্তায় মারা যাচ্ছে।''
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে চিকিৎসক মহলে। চিকিৎসক সাত্যকি হালদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''রচনা সম্ভবত না বুঝে সত্যি কথা বলে ফেলেছেন। রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক যে অপ্রতুল, তা একজন সাংসদ হিসেবে তার জানা উচিত।''
সাত্যকির বক্তব্য, কলকাতা বা শহরাঞ্চলের বাইরে চিকিৎসা ব্যবস্থার কী হাল, একজন সাংসদ হিসেবে অন্তত নিজের জেলায় রচনার তা ঘুরে দেখা উচিত। হাসপাতালগুলিতে সামান্য ব্যান্ডেজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না সময় সময়। যার জেরে চিকিৎসকদের মার খেতে হয়। এই বিষয়গুলি নিয়ে কি রচনা ভেবেছেন?
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাতো। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তা অর্ধসত্য। এটা ঘটনা জেলার হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ট চিকিৎসক নেই। কিন্তু কেন নেই, সে কথা বলেননি তিনি।''
অনিকেতের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ঠিকমতো নিয়োগই হচ্ছে না। সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা তিন বছরের বন্ডে থাকেন। অর্থাৎ, ওই সময় তাদের সরকারি হাসপাতালে কাজ করতেই হয়। জেলায় জেলায় এই সিনিয়র রেসিডেন্টদেরকে দিয়েই চিকিৎসা করানো হচ্ছে। সামগ্রিক পরিকাঠামোই সেখানে নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ড শেষ করে চিকিৎসকদের একটি অংশ সরকারি কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, জেলার হাসপাতালগুলিতে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিকাঠামো নেই, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন অনিকেত।
পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ ডাক্তারই সাত্যকি এবং অনিকেতের সঙ্গে সহমত। তাদের বক্তব্য, কোনো ডাক্তারই চান না রোগীদের ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতালে যথেষ্ট শয্যা নেই, সাধারণ পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের কলকাতায় পাঠাতে হয় রোগীদের। সে কারণেই আন্দোলনরত ডাক্তাররা পুরো বিষয়টিকে ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ করার কথা বলছেন। প্রতিটি হাসপাতালে ডিসপ্লে বোর্ড লাগিয়ে শয্যা সংখ্যা লেখার কথা বলেছেন তারা। ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেমের কথা বলেছেন তারা। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনো পর্যন্ত তা তৈরি করে উঠতে পারেনি।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অনেকেরই বক্তব্য, রচনার কথাগুলিই তারা অনেকদিন ধরে বলার চেষ্টা করছেন। জেলায় জেলায় চিকিৎসা পরিষেবা উন্নতির জন্যই তারা লড়ছেন।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)