হারিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের মজাদার স্ট্রিট ফুড
স্ট্রিট ফুডের জন্য বিখ্যাত সিঙ্গাপুরে একসময় প্রায় ছয় হাজার দোকান ছিল. রাস্তার পাশের সেই দোকানগুলোতে মজাদার, লোভনীয় স্বাদের খাবার বিক্রি হতো৷ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের সেই ঐতিহ্য৷
আন্তর্জাতিক পরিচিতি
অল্প দামে সেরা স্বাদের খাবার বিক্রি হয় বলে আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে সিঙ্গাপুরের স্ট্রিট ফুডের৷ যেমন, দুই ডলার খরচ করে উৎকৃষ্ট মানের নুডলস পাবেন আপনি, যা কিনা আন্তর্জাতিক মানের হোটেল রেস্তোঁরায় পাওয়া যায়৷ আন্তর্জাতিক এ খ্যাতির জন্য ‘ক্রেজি রিচ এশিয়ানস’ নামে হলিউডের একটি মুভিতে দেখানো হয়েছিল সিঙ্গাপুরের এ খাবারের দোকানগুলোকে৷
প্রায় ৫০ বছরের এতিহ্য
প্রায় ৫০ বছর ধরে সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশের এ খাবারের দোকানগুলো৷ সিঙ্গাপুর শহরে এমন দোকানের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার৷ কিন্তু এসব দোকান মালিকদের অনেকেই ব্যবসাটি হস্তান্তর করার জন্য উত্তরাধিকারী পাচ্ছেন না, কেননা, খাবারের দোকানের রান্না ঘরে ঘর্মাক্ত হওয়ার চেয়ে এখন কোন অফিসের কাজই বেশি আনন্দ দেয় নতুন প্রজন্মকে৷
নুডলসের দোকানের এক বৃদ্ধা
বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন লেওং ইউয়েট মেং৷ তারপরও সকাল আটটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সিঙ্গাপুর শহরে নুডলসের এ দোকানটি চালান তিনি৷ তাঁর ছেলে-মেয়েদের কেউই এ ব্যবসাটি আর করতে চান না৷ ‘‘আমার খুব খারাপ লাগে যখন মনে হয়, আমি না থাকলে এ দোকানটি আর চলবে না, কেননা, আমার ছেলে-মেয়েরা এটি চালাতে চায় না,’’ বলেন ইউয়েট মেং৷
সকাল-সন্ধ্যার খাঁটুনি
নব্বই বছর বয়স্ক ইউয়েট মেং ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে খাবারের দোকানের জন্য যা যা কিনতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করেন৷ ভোর পাঁচটায় তিনি তাঁর ৬৬ বছর বয়সি ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা করতে বাজারে যান৷ এভাবেই দিন শুরু হয় তাঁর৷
খরচ বেশি নতুন ব্যবসায়ীদের
সিঙ্গাপুর শহরের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত একটি মার্কেটে ইউয়েট মেং-এর এই দোকান৷ ১৯৭০ সালে সরকার এ মার্কেটটি বানিয়েছিল৷ সেই সময় যাঁরা এখানে জায়গা পেয়েছে, তাঁদের ব্যবসার পেছনে খরচ অনেক কম হয়েছে৷ কিন্তু এখন যাঁরা এ ব্যবসায় আসছেন, তাঁদের অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে৷
চেষ্টা করছে সরকার
স্ট্রিট ফুডের এ ঐতিহ্যটি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার৷ যেমন, ব্যবসায় জড়িতদের নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে৷ তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যবসার প্রকৃত সমস্যার সমাধান করতে পারছে না৷
প্রয়োজন জ্ঞান সংরক্ষণের
রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে মজার মজার খাবার তৈরি করতে দরকার হয় বিশেষ দক্ষতার৷ কিন্তু যাঁদের দক্ষতা আছে তাঁদের কাছ থেকে যদি পরবর্তী প্রজন্ম প্রয়োজনীয় কৌশলটুকু রপ্ত না করে, তাহলে হারিয়ে যাবে এ এতিহ্য৷ আর এটিই এ সময়ের সবচেয়ে বড় আশঙ্কা৷