স্মৃতি ফেরাতে গবেষণা
২ মে ২০১৪প্রতিদিনই আমরা কত কিছু ভুলে যাই৷ তার জন্য কত কথাই না শুনতে হয়! তবে ভুলে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক৷ কিন্তু কোনো দুর্ঘটনার ফলে মাথায় ধাক্কা লেগে যদি স্মৃতিভাণ্ডারের একটা অংশ পুরোপুরি হারিয়ে যায়, সেটা একটা চিন্তার বিষয় বৈকি৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষকরা এবার মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট বসিয়ে সেই ‘মিসিং লিংক' আবার ভরাট করার তোড়জোড় করছেন৷
খুবই গোপন সেই কর্মসূচি৷ মানুষের মস্তিষ্কের রহস্য উন্মোচন করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ১০ কোটি ডলার অঙ্কের যে উদ্যোগ শুরু করেছেন, তারই আওতায় সামরিক গবেষকরা চার বছরের এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন৷ তাঁরা এমন ‘মেমরি স্টিমুলেটার' তৈরি করতে চান, যা স্মৃতিভাণ্ডারকে উসকে দিতে পারবে৷ তাঁদের মূল উদ্দেশ্য, যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈন্যদের স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনা৷ তবে আল্সহাইমার রোগের রোগীদের উপরও এই প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যেতে পারে৷
প্রযুক্তি যদি এই অসম্ভবকে সম্ভবও করে তোলে, তার পরেও নৈতিকতার প্রশ্ন থেকে যায়৷ মানুষের মস্তিষ্কে এমন ‘ম্যানিপুলেশন'-এর পরিণাম কী হতে পারে, সেটাও চিন্তার বিষয়৷ কারণ সে ক্ষেত্রে মানুষের আত্মপরিচয় বদলে যেতে পারে৷ বাছাই করে নির্দিষ্ট কোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনা বা মুছে দেওয়া সম্ভব হলে এর অপব্যবহার অনিবার্য বলে মনে করছেন অনেকে৷
অন্যদিকে এমন প্রযুক্তির প্রবক্তারা বলছেন, শুধু অ্যামেরিকায়ই ৫০ লক্ষ আল্সহাইমার-এর রোগী আছেন৷ ইরাক ও আফগানিস্তানে মস্তিষ্কে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন প্রায় ৩ লক্ষ সৈন্য৷ এদের জীবন বদলে দিতে পারে ‘মেমরি স্টিমুলেটার'৷ অনেক সৈন্য মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে নিজের পরিবারের লোকজনকেও চিনতে পারছেন না৷ তাদের সেই হারানো স্মৃতি আবার জাগিয়ে তোলা যেতে পারে৷
মস্তিষ্ক ও স্মৃতিভাণ্ডারের মতো জটিল কাঠামো নিয়ে কাজ যে অত্যন্ত কঠিন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ হারানো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞরা তাই নানা পথের কথা বলছেন৷ প্রথম পথ হলো মস্তিষ্কের যে অংশে স্মৃতি ভরা থাকে, সেই ‘হিপোক্যাম্পাস'-এর মধ্যে প্রয়োজনীয় স্পন্দন সৃষ্টি করা৷ তবে নির্দিষ্ট কোনো স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে হলে কোনো ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট ‘মেমরি প্যাটার্ন' জানা প্রয়োজন৷ দ্বিতীয় এবং আরও সহজ পথ হলো খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে মস্তিষ্ককে আঘাত পাওয়ার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা৷
মার্কিন সামরিক গবেষকরা শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবেন, হলেও সে ক্ষেত্রে নৈতিকতা, আইন ও সামাজিক প্রভাব সংক্রান্ত প্রশ্নগুলি কতটা গুরুত্ব পাবে – তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, এপি)