হাথরাসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১২১
৩ জুলাই ২০২৪ঘটনাটি ঘটেছে হাথরাসের ফুলরাই গ্রামে। মঙ্গলবার সেখানে ধর্মীয় গুরু বাবা নারায়ণ হরির সৎসঙ্গ ছিল। সেখানেই যোগ দিয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। ঘটনায় প্রচুর মানুষ আহত হয়েছেন। অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
এই স্বঘোষিত বাবার আসল নাম সূরয পাল। তিনি সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবা নামেও পরিচিত। তার আশ্রম মৈনপুরীতে। তিনি ফুলওয়ারিতে এসেছিলেন সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানের জন্য।
বাবার খোঁজে পুলিশ সেই আশ্রমে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে পায়নি। তবে এফআইআরে আয়োজকদের নাম রয়েছে, বাবার নাম নেই।
দুর্ঘটনার কারণ
স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছে, ছোট জায়গায় এই অনুষ্ঠান ছিল। প্রচুর মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন। যখন অনুষ্ঠানের পর তারা বেরোতে যান, তখনই এই ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভি-র রিপোর্ট বলছে, ভোলে বাবার গাড়ি যাতে আগে চলে যেতে পারে, সেজন্য ভক্তদের প্রথমে বেরোতে দেয়া হয়নি। বেরোবার জায়গায় প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যান।
তারপর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তখনই পদপিষ্ট হয়ে অনেকে মারা যান।
স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছেন, প্যান্ডেল করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে ফ্যানের ব্যবস্থা ছিল না। আবহাওয়া প্রচণ্ড আদ্র থাকায় উপস্থিত অনেকেই দ্রুত বেরোতে চাইছিলেন। কিন্তু বাইরে যাওয়ার গেট ছোট ছিল। ফলে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তাতেই পদপিষ্ট হয়ে এতজন মারা গেলেন।
অনেকে বলেছেন, সোমবার রাত থেকে সৎসঙ্গ যেখানে ছিল, তার সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। শেষ হওয়ার পর রাস্তা খোলা হয়। ফলে সেখানে যানজট ও ভিড় ছিল।
এটার পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার বলেছেন, কীভাবে এই ঘটনা ঘটলো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এফআইআরে বলা হয়েছে, ৮০ হাজার মানুষের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আর এসেছিলেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এতজন আসবেন তা উদ্য়োক্তারা বলেননি। তাই পুলিশি ব্যবস্থা ও ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট ঠিকভাবে করা যায়নি।
শুধু হথরাস বা আশপাশের এলাকা বা জেলাগুলি থেকে নয়, প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও প্রচুর মানুষ সেখানে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছেন, জনা চল্লিশ পুলিশ সেখানে ছিলেন, যা এতবড় জমায়েতের জন্য খুবই কম।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে আছেন পুলিশের অতিরিক্ত ডি়জি এবং দুই মন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধুরী ও সন্দীপ সিং।
কে এই ধর্মীয় গুরু?
সাকার নারায়ণ বাবা অতীতে অনেকবার তার ভক্তদের বলেছেন, তিনি আগে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতেন। পরে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
তিনি উত্তরপ্রদেশের এটার কৃষক পরিবারের সন্তান। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা শাখার হেড কনস্টেবল ছিলেন। ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দেন এবং আধ্যাত্মিক পথে চলতে শুরু করেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
সরকারের বক্তব্য
হাথরাসের জেলাশাসক আশিস কুমার জানিয়েছেন, এটা বেসরকারি অনুষ্ঠান ছিল। এসডিএম এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। উচ্চ পর্যায়ের দল গঠন করা হয়েছে। এখন প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য হলো, মৃতের পরিবারকে সাহায্য করা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বুধবার হাথরাস যাচ্ছেন। তিনি মৃতের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উত্তরপ্রদেশ সরকার মৃতের পরিবারকে দুই লাখ ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেবে।
ভাষণ থামিয়ে মোদীর শোক
মঙ্গলবার লোকসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বিতর্কের জবাব দিচ্ছিলেন তিনি। সেই ভাষণ থামিয়ে হাথরাসের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে মোদী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যথাসম্ভব সাহায্য করবে। তিনি মৃতের পরিবারকে দুই লাখ ও আহতদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানান।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, যে ভুলের জন্য এই ঘটনা ঘটলো তা চিহ্নিত করা দরকার এবং ভবিষ্যতে যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। তিনি বলেছেন, বিস্তারিত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এই ধরনের অনুষ্ঠান করার মতো প্রস্তুতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের ছিল কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
হাথরাসের ঘটনা
২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরাসে দলিত তরুণীর গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গোটা দেশ আলোড়িত হয়েছিল। বাড়ির কাছে মাঠে কাজ করতে গিয়ে তিনি ধর্ষিত হন।
চারবছর পর সেই হাথরাসেই পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ১১৬ জন, যা নিয়ে দেশ আবার আলোড়িত হয়েছে।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই, এনডিটিভি, নিউজ১৮)