হাটে হাঁড়ি ভাঙতে চলেছেন বোল্টন
১৭ জুন ২০২০ঘরের খবর বাইরে যাক, এমনটা বরদাস্ত করতে পারেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ তাই তাঁর প্রাক্তন জাতীয় উপদেষ্টা জন বোল্টন হাটে হাঁড়ি ভাঙতে যে বই লিখেছেন সেটি যাতে প্রকাশিত হতে না পারে, সেই লক্ষ্যে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তাঁর প্রশাসন৷ মার্কিন প্রশাসনের যুক্তি, গোপন সরকারি তথ্য ফাঁস করলে আইন লঙ্ঘন করা হবে৷ তাই বোল্টনের বিরুদ্ধে মামলা করে এমন পরিস্থিতি আগেভাগেই এড়ানোর চেষ্টা চলছে৷ উল্লেখ্য, আগামী মঙ্গলবার বইটি প্রকাশিত হবার কথা৷
হোয়াইট হাউসে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন বোল্টন৷ নাম ‘দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড: আ হোয়াইট হাউস মেমোয়ার’৷ উল্লেখ্য, প্রায় ১৭ মাস কাজ করার পর গত সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প তাঁকে বরখাস্ত করেন৷ হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মতে, বইয়ের খসড়ার বেশ কিছু অংশে ‘ক্লাসিফাইড’ বা অতি গোপন জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য স্থান পেয়েছে৷ ফলে এই বই প্রকাশিত হলে অপূরণীয় ক্ষতি হবে – আদালতে এমন যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে৷
ট্রাম্প নিজে মনে করিয়ে দিয়েছেন, গোপন সরকারি তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করার ক্ষমতা রয়েছে, এমন কোনো প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখতে চাইলে সরকারি ছাড়পত্রের এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ তিনি বলেন, বোল্টন সেই চেষ্টাও করেন নি৷ মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেন, তাঁর দফতর বোল্টনকে দিয়ে ছাড়পত্র নেবার প্রক্রিয়া পূর্ণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ খসড়ায় গোপন তথ্য বাদ দিলে তিনি সেই বই প্রকাশ করতে পারবেন৷
বলা বাহুল্য, সরকারি তৎপরতার ফলে বোল্টনের অপ্রকাশিত বইকে ঘিরে কৌতূহল আরও বাড়ছে৷ প্রকাশক সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার হোয়াইট হাউসের অভিযোগ খণ্ডন করে জানিয়েছে, বোল্টন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে খসড়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছেন৷ প্রকাশনা সংস্থা এরই মধ্যে বইটি সম্পর্কে কিছু পূর্বাভাষ দিয়েছে৷ ট্রাম্প যেভাবে কোনো সঙ্গতি ছাড়াই ক্ষণিকের আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেন, সেই বিষয়টি জানাজানি হলে তাঁর ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে৷ তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বইটির প্রকাশ বন্ধ করার জন্য এত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে প্রকাশ মনে করছেন৷ পাঠকদের মনে কৌতূহল জাগাতে প্রকাশক সংস্থার বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছে ‘‘ডনাল্ড ট্রাম্প চান না আপনারা এই বইটি পড়ুন৷’’
কট্টর রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত বোল্টনের সঙ্গে ট্রাম্পের সখ্য বেশিদিন স্থায়ী হয় নি৷ বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া ও আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে সমঝোতার লক্ষ্যে ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগকে তিনি ভালো চোখে দেখেন নি৷ এমনকি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট তদন্তের সময়ে তিনি সেনেটে সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন৷ শুধু প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের বিষয়ে ইউক্রেনের উপর তদন্তের জন্য চাপ সৃষ্টি করা নয়, ট্রাম্প আরও অন্যায় করেছেন বলে তিনি জানুয়ারি মাসে ইঙ্গিত দেন৷ তবে রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সেনেট তাঁকে তলব করতে পারে নি৷ ট্রাম্পের অনেক পদক্ষেপের পেছনে বোল্টনের প্রভাব নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে৷
ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে বোল্টন নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন৷ মঙ্গলবার তিনি মার্কিন সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের একটি বার্তা রিটিউট করেন৷ তাতে ৫০ বছর আগে গোপন নথিপত্র প্রকাশ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট রিটার্ড নিক্সনের ব্যর্থ উদ্যোগের উল্লেখ রয়েছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)