হাঙরের জন্য হয়েছে অভায়াশ্রম
১৩ জানুয়ারি ২০১১পাহাড়ের উপর সুন্দর ছিমছাম গ্রাম৷ নিচে একটি ছোট্ট বাজার৷ পাহাড়ের জুম থেকে সেখানে আসে সবুজ লকলকে আনাজপাতি৷
সবুজ পাহাড়ের কোলে রোয়াংছড়ি বাজারে কথা হলো দোকানি হরিহর দাসের সঙ্গে৷ তিনিই জানালেন, হাঙরের শুটকি বিক্রি লাভজনক৷ কক্সবাজার, মহেশখালি এবং কুয়াকাটার শুটকি পল্লিতে হাঙরের শুটকি তৈরি হচ্ছে৷ আর এই শুটকি সবই হাঙরের বাচ্চা৷ বঙ্গোপসাগর থেকে ধরে আনা হয় বাচ্চাগুলোকে৷ পাহাড়ি মানুষের কাছে এই শুটকির বেশ কদর৷
কেবল বাংলাদেশ বলছি কেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হাঙরের পাখনা একটি জনপ্রিয় খাবার৷ আর তাই অনেক প্রজাতির হাঙরের জীবন আজ বিপদাপন্নের তালিকায়৷
হাঙর নিয়ে রয়েছে নানা ভয়ঙ্কর গল্প৷ মানুষের ভীতির কারণ বোধ হয় এই সব গল্পই৷ তবে শুনলে অবাক লাগবে যে বেশির ভাগ হাঙরই আচার আরচরণে বিপজ্জনক নয়৷ বলে রাখা ভালো, বিশ্বে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির হাঙর রয়েছে৷ আর বছরে ৭ কোটি ৩০ লাখ টন হাঙর ধরে এর পাখনা বিক্রি হচ্ছে বলেই জানাচ্ছে দ্য পাউ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংগঠন৷
পালাও নামের সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্রের কথা আমরা সকলে জানি৷ প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রের একটি সংগঠন নিয়েছে নতুন এক পদক্ষেপ৷ তারা সমুদ্রের হাঙর প্রজাতির জন্য গড়ে তুলেছে অভায়াশ্রম৷ ডারমট কেয়ানো নামের এক আইরিশ নাগরিক এই অভয়াশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা৷ তিনি জানালেন, সেই ১৯৯৫ সালে তিনি যখন প্রথম এসেছিলেন এই দ্বীপে, তখন দেখেছেন ৫০ থেকে ৬০টি বড় নৌকায় জেলেরা কেবল ব্যস্ত থাকতো হাঙর ধরার কাজে৷ হাঙর ধরে তা কেটে টুকরো করার সময় সাগরের পানি হয়ে যেত লাল রক্তে রাঙা৷ এই দুর্দশা দেখে তিনি উদ্যোগ নেন হাঙর নিধন বন্ধের৷ সঙ্গে যোগ দেন আরও অনেকে৷
তাঁদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে৷ ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পালাও দেশের সরকার তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় অর্থাৎ ৬ লাখ ৩০ হাজার বর্গ মাইল এলাকায় নিষিদ্ধ করেছে হাঙর নিধন৷ এই এলাকাকে ঘোষণা করা হয়েছে হাঙর অভয়াশ্রম হিসাবে৷ এখানে কেউ যদি হাঙর ধরে তবে তার বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা৷ ডারমট কেয়ানোর কথায়, ‘আসলে হাঙরই মানুষকে ভয় পায়৷' তিনি জানান, ‘সুন্দর এবং ভারসাম্যর প্রকৃতির জন্যই এই প্রজাতিকে রক্ষা করতে হবে৷'
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক