হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার দেখাতে মডেল প্রকল্প
৩ জানুয়ারি ২০২২জার্মানির প্রথম মডেল প্রকল্পের আওতায় উত্তর প্রান্তে একটি অঞ্চলে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি পুরোপুরি বর্জন করার চেষ্টা চলছে৷ শুধু হাইড্রোজেনের উপর নির্ভর করে সেটা করা হচ্ছে৷ কিন্তু এর ফলে কতটা সাফল্য আসছে? বাসিন্দাদেরই বা কতটা ব্যয় হচ্ছে?
কয়েক সপ্তাহ ধরে দুটি হাইড্রোজেন-চালিত বাস নিয়মিত যাত্রী পরিবহণের কাজে লাগানো হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের আওতায় বেশ কয়েকটি পাম্প তৈরি করা হয়েছে, যেখানে গাড়িতে হাইড্রোজেন ভরা যায়৷
নতুন বাস চালাতে চালকের কেমন লাগছে? বাস ড্রাইভার জানালেন, ‘‘এই বাসের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, কোনো শব্দ করে না৷ ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ও স্টিয়ারিং ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই৷ বাকি সব শান্ত৷ যাত্রী বাসে উঠলে অবশ্যই তাদের কথোপকথন কানে আসে৷ কখনো ভালো লাগে না বটে, কিন্তু কোনো এক সময় আর মন দিয়ে শুনি না৷ বাসের বাকি বিষয় ও পথঘাটের প্রতি মনোযোগ দেই৷''
এমন বাস দৈনন্দিন ব্যবহারের কতটা যোগ্য? বাস কোম্পানির প্রধান ডানিয়েল মাক্স বলেন, ‘‘বর্তমানে কখনো কখনো জ্বালানি ভরতে সমস্যা হয়৷ অর্থাৎ বাস ও পাম্পের মধ্যে ঠিকমতো সংযোগ হয় না৷ এটা সফটওয়্যারের সমস্যা৷ কয়েকটি আপডেট করলে নিশ্চয় এই সমস্যা দূর হবে৷''
হাইড্রোজেন প্রকল্পের একটি প্রাণকেন্দ্র রয়েছে৷ আন্ড্রে স্টাইনাউ এই মডেল প্রকল্পের উদ্যোক্তা৷ তার কোম্পানি ইলেকট্রোলাইজারটি চালায়৷ সেটি কিনতে বেশ কয়েক কোটি ইউরো ব্যয় হয়েছে৷
কন্টেনারের মধ্যে মূল্যবান হাইড্রোজেন আলাদা করা হয়৷ তার জন্য অনেক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়৷ স্টাইনাউ জানালেন, ‘‘আমাদের এলাকায় গ্রিডের একটা সমস্যা রয়েছে৷ অর্থাৎ বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নিয়ে কী করা যায়? তখন আইডিয়া এলো৷ বাড়তি বিদ্যুৎ অপচয় না করে সেটি প্রথমে জমা রেখে ব্যবহার করার কথা ভাবা হলো৷ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি না থাকলে সেই বিদ্যুৎ কাজে লাগানো যায়৷ গ্রিডে সরবরাহের বদলে পরিবহণ বা ঘর গরম রাখার কাজেও বাড়তি বিদ্যুতের ব্যবহার সম্ভব৷''
এভাবেই সেই কাজ চলছে৷ বায়ুশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে ডিস্টিলড ওয়াটার থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করা হচ্ছে৷ তারপর স্থানীয় পাম্পে সেই হাইড্রোজেন পাঠানো হচ্ছে৷
হাইড্রোজেন উৎপাদনের সময় অনেক উত্তাপও সৃষ্টি হয়৷ সেই উত্তাপ স্থানীয় হিটিং নেটওয়ার্কে পাঠানো হচ্ছে৷ ফলে কার্বন নির্গমন ছাড়াই শীতে বাড়িঘর গরম রাখা সম্ভব হচ্ছে৷
কাছের বোসব্যুল গ্রামও সেই সুবিধা ভোগ করছে৷ গ্রামের বাসিন্দা মাক্স ব্যোম এখনো কোনো সমস্যার মুখোমুখি হন নি৷ তিনি বলেন, ‘‘সার্বিক প্রকল্পের মধ্যে উত্তাপ সূচনামাত্র৷ বাস চালানোর ক্ষেত্রেও এটা একটা নতুনত্ব বটে৷ আরো ভালো হতো, যদি দুই-একটা হাইড্রোজেন-চালিত গাড়িও দোরগড়ায় থাকতো৷ বর্তমানে উচ্চ মূল্যের কারণে এমন গাড়ি কেনার সামর্থ্য আমাদের মতো অনেকেরই নেই৷ তবে আমার মতে, এমন গাড়ির ভবিষ্যৎ সত্যি উজ্জ্বল৷''
হাইড্রোজেন-চালিত গাড়ির মূল্য একই ধরনের ডিজেল-চালিত গাড়ির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷ তাই বড়জোর তিরিশটির মতো গাড়ি সেই অঞ্চলে পথে নামছে৷
জ্বালানির দামও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ ৫০০ কিলোমিটার গাড়ি চালাতে প্রায় ৫০ ইউরো মূল্যের হাইড্রোজেন লাগে৷ ডিজেল গাড়ির ক্ষেত্রে সেই মাসুল ৪৭ ইউরো এবং ইলেকট্রিক গাড়ির ২৫ ইউরো লাগে৷ আন্ড্রে স্টাইনাউ বলেন, ‘‘জীবাশ্মভিত্তিক অর্থনীতির তুলনায় জলবায়ু সংরক্ষণ-ভিত্তিক অর্থনীতির মূল্য যে বেশি, আমাদের এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে৷ জগত বাঁচাতে জলবায়ু সংরক্ষণ আমাদের সবার স্বার্থে প্রয়োজন৷ আমরা বহুকাল আগের এক প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি৷ এখনো বিশাল আকারে এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে না৷ সেটা হলে মূল্যও কমে যাবে৷''
কয়েক বছরের মধ্যেই পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের মূল্য প্রচলিত জ্বালানির সমান হবে বলে এখানে অনেকেই মনে করছেন৷ এমন প্রযুক্তি যে দৈনন্দিন জীবনের উপযুক্ত, এই প্রকল্প সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরছে৷
মিলাটেডেস স্মিট/এসবি