তিব্বতি শিল্পকর্ম প্রদর্শনে বাধা
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬তিব্বতি শিল্পীরা চীনের নির্যাতন ও দমন-পীড়ন তাঁদের চিত্র ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রদর্শনীতে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ গত ছয় বছর যাবৎ বিভিন্ন সময়ে তিব্বতে যেসব দমন-পীড়ন ও আত্মাহুতির ঘটনা ঘটেছে, তা মাল্টিমিডিয়ার প্রদর্শন হওয়ার কথা ছিল ঢাকা আর্ট সম্মেলনে৷ এতে ঢাকাস্থ চীনের দূতাবাস আপত্তি জানালে পাঁচটি চিত্রকর্ম সাদা কাগজ দিয়ে ঢেকে দেয় আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান৷
ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতু সারিন ও তাঁর স্বামী তেনজিং সোনাম ছিলেন এর আয়োজক৷ তেনজিং সোনমের মূল বাসস্থান তিব্বত হলেও বর্তমানে তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন৷
ঋতু সারিন ও তেনজিং সোনাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘তিব্বতিদের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চিত্রকর্ম আমরা ঢাকা আর্ট সামিটে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম''
এই সামিটের প্রশাসন শাখার প্রধান সাজ্জাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং ওই চিত্রকর্ম দেখে মর্মাহত হয়েছেন৷ আর তার পরেই তিনি এর প্রতিবাদে আমাদের ই-মেল পাঠান এবং চিত্রকর্ম সরিয়ে ফেলতে বলেন৷ তখন আমরা সাদা কাগজ দিয়ে পাঁচটি চিত্রকর্ম ঢেকে দিই৷''
তবে চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও, তাঁদের কেউই আলোচনার বিষয় নিয়ে কথা বলেননি৷
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিব্বতিদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে বাধা দিয়ে বাংলাদেশের আয়োজকরা ক্ষুদ্র মনের পরিচয় দিয়েছেন৷ চিত্রকলার ভাষা আছে৷ স্বাধীন চিত্রকর্মে বাধা দেয়া মানে বাকস্বাধীতায় হস্তক্ষেপ৷ চিত্রকর্ম এক মানবিক অস্তিত্ব৷ আর মানবিকতায় বাধা দেয়া যায় না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কারণে হয়ত এরকম করা হয়ে থাকতে পারে৷ কিন্তু আমার কাছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ শিল্পের স্বাধীনতার কোনো ভৌগলিক সীমারেখা নেই৷''
এর আগে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকায় তিব্বতি ছাত্রদের আয়োজনে ধানমন্ডির দৃক গ্যালারির একটি চিত্র প্রদর্শনী ভন্ডুল করে দেয় পুলিশ৷ সে সময় প্রদর্শনীটির উদ্বোধনই করতে দেয়া হয়নি৷ তিব্বতি ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর এ ফ্রি তিব্বত' আয়োজিত ঐ প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘ইনটু এক্সাইল – ১৯৪৯ থেকে ২০০৯'৷ পুলিশ তখনও চীনা দূতাবাসের আপত্তির মুখে চিত্র প্রদর্শনীটি বন্ধে দৃক গালারিতে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল৷
প্রসঙ্গত, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশ ‘এক চীন' নীতিতে বিশ্বাসী৷
আপনার কী মনে হয়? তিব্বতের শিল্পকর্ম ঢাকায় প্রদর্শিত হতে না দেয়াটা বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না কূটনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা? লিখুন নীচের ঘরে৷