স্বস্তি, শঙ্কায় আসছে দুর্গাপূজা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯পূজা শুরুর আগেই দেশের নানা স্থানে ঘটে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা৷ এবারও নানা জায়গায় গত এক মাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এবার তা অনেকটাই কম বলে মনে করছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ি এখন পর্যন্ত ১২ থেকে ১৫টি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ ঘটেছে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাও৷
এই পরিস্থিতিতে এবার পূজার প্রস্তুতি কেমন? জানতে চাইলে রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্য বছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতি ভালো৷ কিন্তু কয়েক জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর তো হয়েছে৷ সেগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে৷ কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে খ্রিষ্টান দুই নারী ও দুই শিশুকে হত্যা, খুলনায় একজন হিন্দু নেতাকে হত্যা করা হয়েছে৷ তাকে মাদক ব্যবসায়ি বলে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুলনায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে মাদক ব্যবসায়ি বললেও আমরা তেমন তথ্য পাইনি৷ এই ঘটনা জাতীয়ভাবে প্রভাব না ফেললেও স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সন্দেহ নেই৷''
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুরের মহেষপুর গ্রামে রাতের আঁধারে মাওরা বাড়ি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারে সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে৷ এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করলেও মূল অপরাধীরা ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ হিন্দু নেতাদের৷ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের কদুপুরে ভৈরব মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে৷ এ ঘটনায়ও জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসেব অনুযায়ী, এবার সারাদেশে ৩১ হাজার মণ্ডপে পূজা হচ্ছে৷ এবার ঢাকায় পূজা হচ্ছে ২৩৭টি মণ্ডপে৷ পূজামণ্ডপগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে তিন লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন৷ কয়েকদিন আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার ঢাকা মহানগরীর পূজামণ্ডপে সিসিটিভি, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর থাকবে৷ রাজধানীতে প্রায় ২০ হাজার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে৷ এর বাইরে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা পূজা কমিটির সদস্যদের নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে৷''
রানা দাসগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘অন্য বছরের মতো এবারও আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থা রাখতে চাই৷ তাদের আমরা বারবার বলেছি, তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছে৷ আমরা আশ্বস্ত হতে চাই৷ কিন্তু পূজা ঘিরে কেউ কোন চক্রান্ত করছে কি-না তা তো আমরা জানি না৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের যেভাবে বলছে, আমরা সেভাবেই অবহিত হচ্ছি৷ তাদের আন্তরিকতা আছে, আমরা সেটা আরো ভালোভাবে দেখতে চাই৷''
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার মণ্ডপের আশপাশে ইভটিজারদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকবে৷ এছাড়া মহিলা স্বেচ্ছাসেবক দল, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশ উপস্থিত থাকবে৷ পূজার সময় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে৷ এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ‘৯৯৯' সার্ভিস আরও কার্যকর থাকবে৷ যে কেউ চাইলে ফোন দিতে পারবেন৷''