‘স্নোডেন এফেক্ট’
২৬ জুন ২০১৩সন্ত্রাসীরা যদি তাদের যোগাযোগের পন্থা বদলায়, তাহলে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী আক্রমণ অঙ্কুরে বিনষ্ট করা আরো শক্ত হবে, এই হলো তাঁদের যুক্তি৷ একাধিক মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা দৃশ্যত পর্যবেক্ষণ করেছে কিভাবে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা তাদের পারস্পরিক যোগাযোগের ধরনধারণ বদলে ফেলছে৷ এদের মধ্যে সুন্নি ও শিয়া, দু'ধরনের সংগঠনই আছে, বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা, যাঁরা কেউই নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নন৷
রয়টার্স সংবাদ সংস্থার বিবরণ অনুযায়ী কর্মকর্তারা বলেছেন, স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যের ফলে ক্ষতি নিশ্চয় ঘটেছে, যদিও তার পরিমাণ সম্পর্কে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না৷ সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় কি ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, সে বিষয়েও কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজি নন, কেননা তার ফলে সন্ত্রাসীদেরই সুবিধা হবে৷ তবে এক মার্কিন টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগতভাবে রয়টার্সকে বলেছেন, সন্ত্রাসীরা সম্ভবত ইলেকট্রনিক বার্তাপ্রেরণ কমিয়েছে এবং বার বার তাদের সেল ফোন বদলাচ্ছে৷ অপরদিকে তারা তাদের বার্তা গোপন সংকেতে পরিণত করার পন্থা উন্নততর করার চেষ্টা করছে৷
ও কার পায়ের ছাপ?
সন্ত্রাসীরা বহুদিন আগে থেকেই তাদের ইলেকট্রনিক ‘পদাঙ্ক' লুকনোর চেষ্টা করে আসছে৷ তার সেরা দৃষ্টান্ত হলো আল-কায়েদা নেতা বিন লাদেনের পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে আত্মগোপন করে থাকা৷ বিন লাদেন শুধুমাত্র লিখিত বার্তা ও বিশ্বস্ত দূতদের উপর নির্ভর করতেন৷ ইসলামপন্থি জঙ্গিদের প্রতি বিন লাদেনের পরামর্শ ছিল, ইলেকট্রনিক যোগাযোগ সম্পর্কে অত্যন্ত সাবধানী হবে৷ যে থাম্ব ড্রাইভ কিংবা সিম কার্ডে তথ্য পাচার করা হয়েছে, তা ব্যবহারের পর বিনষ্ট করে ফেলবে৷
স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ সম্পর্কে যা কিছু ফাঁস করেছে, তা নিয়ে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের ওয়েবসাইটগুলিতে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে বলে লক্ষণ করা গেছে৷ এক মনিটরিং এজেন্সি তার একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছে: ‘‘সহজ নীতি হলো, বোকামি করো না, আমাদের বাস্তব তথ্য ইন্টারনেটে দিও না, জিহাদি কাজকর্মের জন্য যে ই-মেল ব্যবহার করো, তা ব্যবহার করো না৷ ভুয়ো আইডি আর নিজের পরিচয় বা অবস্থান গোপন রাখতে টিওআর ব্রাউজার ব্যবহার করাটা অত্যাবশ্যক৷''
স্নোডেন এফেক্ট সর্বত্র
‘স্নোডেন এফেক্ট' থেকে অন্যান্য ক্ষতির আশঙ্কাতেও রয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ পশ্চিমি গুপ্তচর সংস্থাগুলি কিভাবে ইলেকট্রনিক যোগাযোগের উপর আড়ি পাতে, তারা কি ধরনের লিংক মনিটর বা ট্যাপ করে, এ সব তথ্য রাশিয়া কি চীনের মতো বিদেশি সরকারদের জানা হয়ে যেতে পরে কিংবা গেছে৷ দ্বিতীয়ত, উইকিলিক্স-এর সঙ্গে যুক্ত স্নোডেন ভবিষ্যতে আরো গোপন তথ্য ফাঁস করতে পারে৷ তৃতীয়ত, আগামী মাসেই বেইজিং-এর সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে: সেখানে চীনের দিকে আঙুল তোলাটা আগের মতো সহজ হবে না৷
কিন্তু সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো – তা সে মার্কিন মুলুকেই হোক আর যুক্তরাজ্যেই হোক – ‘‘স্বদেশের জনগণের আস্থা হারানো, যেটা ইতিমধ্যেই অনেক কমে এসেছে''৷ এ কথা বলেছেন পশ্চিমি গুপ্তচর সেবার এক সাবেক কর্মী৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, এসি)