1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্থায়ী বহিষ্কারের পরও নির্বাচনে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা

১৮ মে ২০২৩

দেশের পাঁচ সিটিতে বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে গাজীপুরের ২৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বহিস্কারের চিঠি দেয়া হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4RXn8
বিএনপি সমর্থকদের মিছিল (ফাইল ফটো)
বিএনপি সমর্থকদের মিছিল (ফাইল ফটো)ছবি: Mortuza Rashed/DW

কিন্তু তাতে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা দমে যাবেন বলে মনে হচেছ না। কারণ গাজীপুরে বহিষ্কারের আগে মোট ৩০ জনকে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। সেই নোটিশ পেয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছেন মাত্র একজন ।

বিএনপি জানিয়েছে, তফসিলের তারিখ অনুযায়ী আন্য চার সিটিতেও নোটিস দেয়া হচ্ছে। যারা প্রত্যাহার করবেন না তাদেরও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

গাজীপুরে মোট ওয়ার্ড ৫৭টি। এই সিটিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়ও শেষ হয়ে গেছে। সময় শেষ হওয়ার পর বুধবার মোট ২৯ জন প্রার্থীকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে নোটিশ দেয়া হলে মাত্র একজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন। এখন বাকিরা কী করবেন সেই খোঁজ নিতে গেলে জানা যায় তাদের প্রায় সবাই প্রার্থী হিসেবে থেকে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, "দল আমাদের বহিষ্কার করেছে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজ করি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই করব।”

গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সভাপতি আজমল ভূঁইয়া গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ২৮ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ওই ওয়ার্ডের চার বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। তার কথা, "দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে বহিষ্কারের সেটা আমি দেখব। তবে আমি এই ওয়ার্ডের চার বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। এখানকার মানুষ আমাকে কাউন্সিলর হিসেবে দেখতে চায়। তাই আমি প্রার্থী হয়েছি। তাই তাদের সঙ্গে আমি বৈঠক ডেকেছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তাই করব। আমি নিজে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। ”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "এখনতো আর আনুষ্ঠানিকভাবে আর প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিতে হবে। তা না হলে তো দল আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করবে না। তবে সেটা বড় বিষয় নয়। সাধারণ মানুষ ও এলাকার মুরব্বিরা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তাই করব।”

‘আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি’

বিএনপির সহযোগী সংগঠন মহানগর শ্রমিক দল গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ সরকার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ১৫ নাম্বার ওয়ার্ডে। তিনি এর আগেও দুইবার কাউন্সিলর ছিলেন। তার কথা, "আমার তো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নাই। আমি তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে গেছি। তবে দল যে আমাকে বহিষ্কার করেছে সে ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নাই। তারা যেটা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন।”

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করাতে এখন তিনি কাউন্সিলর হিসেবে শপথ নেয়া থেকে বিরত বা পদত্যাগ করবেন কী না জানতে চাইলে বলেন, "আমাকে জনগণ নির্বাচিত করেছে। তাদের ভোটে দুইবার আগে নির্বাচিত হয়েছি। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি। তাদের প্রতি তো আমরা দায়িত্ব আছে। দেখি আমার ভোটার আর জনগণ কী বলে।”

জানা গেছে আজীবন বহিষ্কার করা হলেও যাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে তারা নির্বাচন থেকে সরবেন না। তাদের মধ্যে ১৭ জন আছেন বর্তমান কাউন্সিলর।

তফসিল অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২৭ এপ্রিল, বাছাই ৩০ এপ্রিল ও ৮ মে ছিলো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

‘আমার তো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই’

খুলনা ও বরিশাল সিটিতে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিলো ১৬ মে, বাছাই আজ ( ১৮ মে) ও ২৫ মের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে নির্বাচনে ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে, বাছাই ২৫ মে ও ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

বরিশাল ও খুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার) বাছাই হয়েছে। বরিশালের মোট ৩০ টি ওয়ার্ডের সব কয়টিতেই বিএনপির প্রার্থী আছে। বরিশাল মহানগর বিএনপির ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু। তিনি এবার সিটি নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে তিনি দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, "আমাদের এখনো নোটিশ বা বহিষ্কারের কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। তবে গাজীপুরে যেহেতু বহিষ্কার করা হয়েছে আমাদেরও করা হবে। বহিষ্কার করলেও আমি নির্বাচনে থাকব। দল থেকে বহিষ্কার করলে সেই সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেব। আমি এর আগেও দুইবার কাউন্সিলর ছিলাম। সাধারণ মানুষ আমাকে  আবার চায়। আমাকে তো সাধারণ মানুষকে নিয়ে থাকতে হবে। তাদের নিয়েই এর আগে আমি মিছিল মিটিং সফল করেছি। তাই আমি তাদের নিয়ে নির্বাচনেও থাকব।”

তিনি বলেন, "তৃণমূলে আমরা কাউন্সিলর না থাকলে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পায় না। তারা সরকারে কোনো দপ্তরে যেতে পারে না। তাদের কথা বলার জায়গা থাকে না। ফলে তাদের জন্যই আমাকে নির্বাচন করতে হবে।”

আর বরিশালের ২২ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য এবং ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী  আ ন ম সাইফুল আহসান আজিম অবশ্য নির্বাচন থেকে সনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমি দুইবার কাউন্সিলর ছিলাম তারাপরও সরে দাঁড়াচ্ছি কারণ দলে আমার আরো ভালো পদ পাওয়ার সম্ভবনা আছে। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে রাজনীতি করতে চাই।”

‘শেষ দিনেও প্রত্যাহার না করলে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে’

তবে তার কথা,"অনেকেই নির্বাচন করবেন বহিষ্কার হলেও। এ ব্যাপারে দলের আরেকটু উদার হওয়া দরকার ছিলো। কারণ বিএনপির কাউন্সিলর না থাকলে আমাদের লোকজন বয়ষ্ক ভাতাসহ আরো অনেক সুবিধা পাবেন না।”

দেশের অন্য সিটিগুলোতেও  বহিষ্কার হলেও অধিকাংশই নির্বাচন করবেন। বিশেষ করে বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলর, আগে যারা কাউন্সিলর ছিলেন এবং যারা মনে করেন জিতবেন তারা নির্বাচন করবেন। তাদের কথা,"আমাদের প্রত্যাহারের সময় তো এখনো আসেনি। দল এখনো নোটিশ দেয়নি। গাজীপুর থেকে বুঝতে পারি বহিষ্কার করা হবে। তারপরও সময় আসুক তখন সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।” অনেকে আবার এই সময়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচেছন না।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,"গাজীপুরে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের আমরা আগে নোটিশ দিয়েছি। মহানগর নেতারা তাদের সঙ্গে বার বার কথা বলেছেন। তারপরও তারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে আছেন। তাই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য চারটি সিটিতে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বা প্রার্থী হবেন তাদের তালিকা আমরা সংগ্রহ করেছি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেও যারা প্রত্যাহার না করবেন তাদের দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।''

তিনি দাবি করেন,"বর্তমান সরকারে ও প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে ও প্রলোভনে তারা প্রার্থী হয়েছেন। সরকার একাট ফাঁদ পেতেছে। আমরা সবাইকে ফাঁদে পা না দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

আওয়ামী লীগের সংকট:

গাজীপুরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মাকে নিয়ে সংকটে আছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি ও তার মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। মেয়র পদে জাহাঙ্গীরের  মনোনয়ন পত্র বাতিল হওয়ার পর তিনি হাইকোর্টে যান। সেখানেও বাতিল বহাল রাখার পর তিনি আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি তার মা মেয়র প্রার্থী সায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন । এই কারণে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।  তারপরও আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে নিয়ে নির্ভার হতে পারছে না। এখন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাগুলো সচল করা হয়েছে।