‘স্ত্রীকে ধর্ষণ’ নিয়ে বিভক্ত ভারত
৩০ মার্চ ২০১৮‘‘আমি ঘুমিয়ে থাকলেও আমাকে জোর করে তুলতো৷ এরপর জোর করে যৌনসঙ্গম করতো৷ আমার শরীর খারাপ, নাকি ঘুমাচ্ছি, কোনোকিছুই আমলে নিতো না,'' বলেন ২০ বছর বয়সি প্রিয়া৷ ভারতীয় এই নারী স্বামীর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন একাধিকবার৷ এখন তিনি বিচার চান৷
প্রিয়া একাই এমন অবস্থার শিকার নন৷ ৬০ বছরের সুরেশও ২০ বছর ধরে ম্যারিটাল রেপের শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতন থেকে বাঁচতে স্বামীর সঙ্গ ত্যাগ করেছেন তিনি৷ সুরেশ বলেন, ‘‘সে মদ্যপান করে এসব করতো৷ জোর করে করতো৷ যেখানে করার কথা নয়, সেখানেও করতো৷''
নারী অধিকার কর্মী চৈতালী ম্যারিটাল রেপের শিকার নারীদের নতুন চাকুরি বা বসবাসের আশ্রয় খুঁজে দেন৷ তবে আইনি সহায়তা দিতে পারেন না৷ কেননা, ভারতে যদি একজন স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে জোর করে যৌনসঙ্গম করে, তবে তা এখনো কার্যত অপরাধ নয়৷
ভারতীয় ছবি ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্কা'-তে নারীর যৌনজীবনের পাশাপাশি ম্যারিটাল রেপের ইস্যুটি তুলে ধরা হয়৷ ভারতের সেন্সরবোর্ড শুরুতে ছবিটি নিষিদ্ধ করলেও পরে বেশ কয়েকটি কাটছাটের পর মুক্তি পায় সিনেমাটা৷ ছবির পরিচালক অলংকৃতা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘বিবাহের মধ্যে বড় ধরনের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ সম্পর্কের মধ্যেও ঘটে৷ তবে বিয়ের মধ্যে বেশি ঘটে৷ এর থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন, কেননা, সেগুলো মিটমাট করে ফেলতে বলা হয়৷''
আশার কথা হচ্ছে, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ম্যারিটাল রেপের বিষয়টি আমলে নিয়েছে এবং শীঘ্রই এটাকে বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচনার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ তবে ভারতীয় সমাজ এখনো বিষয়টি নিয়ে বিভক্ত৷ এমনকি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পাওয়া গেল দু'ধরনের বক্তব্য৷ এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘যৌতুক আইনের অপব্যবহারের অনেক ঘটনা ঘটেছে ভারতে৷ মেরিটাল রেপের আইনের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে৷''
আরেক শিক্ষার্থীর মতে, ‘‘দৈহিক ঘনিষ্ঠতা একটি দম্পতির ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ কিন্তু তা যদি ধর্ষণ হয়, তাহলে তা অবহেলার সুযোগ নেই৷''
উল্লেখ্য, ধর্ষণ ভারতে এক বড় সমস্যা৷ ২০১২ সালে নতুন দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার এক তরুণীর মৃত্যুর পর ধর্ষণ রোধে পুলিশের তৎপরতা বাড়লেও আইনি জটিলতায় এখনো এ ধরনের অপরাধের শাস্তি অনেক সময় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না৷ দেশটিতে এখনো প্রতি ২০ মিনিটে একটি ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনা ঘটছে বলে জানাচ্ছে পরিসংখ্যান৷
প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷