স্ট্রোকের থেরাপিতে স্টেমসেলের ব্যবহার
১০ জানুয়ারি ২০১২স্ট্রোকের রোগীদের জন্য সময়ের ব্যাপারটা অত্যন্ত জরুরি৷ কয়েক ঘন্টার মধ্যে চিকিত্সা করাতে না পারলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায়৷ কথাবার্তা অস্পষ্ট কিংবা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যেতে পারে৷ জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউট স্টেমসেল-থেরাপির মাধ্যমে এই ধরণের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হ্রাস করার চেষ্টা করছে৷
ফাউনহফার ইন্সটিটউট -এর নিউরোলজিক্যাল বিভাগের পরিচালক ড. বোল্টসে লাইপজিস শহরের ভেটেরিনারি ইন্সটিটিউটের প্রাঙ্গনে তাঁর ভেড়াগুলিকে দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন৷ এগুলি সাধারণ ভেড়ার মত দেখতে হলেও একটু পার্থক্য রয়েছে৷ নিতম্বের দিকে খানিকটা জায়গায় পশম কামানো৷ ড. বোল্টসে এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা এই ভেড়াগুলির নিতম্ব থেকে কোষের নমুনা নিয়েছি৷ এই সেলগুলি এখন গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে৷ এসব সংগ্রহ করার সময় যাতে দূষিত না হয়, সেজন্য নিতম্বের ওপরের লোম কামানো হয়েছে৷''
কৃত্রিম স্ট্রোকে আক্রান্ত করা হয় প্রাণীগুলিকে
এই সেলের গবেষণার ওপর নতুন থেরাপির সাফল্য নির্ভর করছে৷ কয়েকটি ভেড়াকে কৃত্রিম উপায়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত করে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ড. বল্টসে জানান, ‘‘এক বিশেষ পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে স্ট্রোক সৃষ্টি করা হয়৷ এতে অবশ্য প্রাণীগুলির তেমন কষ্ট হয়না৷ কিছুটা সময় পার হয়ে গেলে শারীরিক কোনো অসুস্থতা বোঝাই যায় না৷ কেননা আমরা ওষুধের ডোজটা এমন ভাবে দেই, যাতে ভেড়াগুলির দৈনন্দিন জীবনে কোনো সীমবদ্ধতা দেখা না দেয়৷''
ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স বা বা এমআরআই-এর মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভেড়াগুলির শারীরিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়৷ প্রাণীগুলির চলাফেরাও পরীক্ষা করা হয়৷ মানুষের মত ভেড়াদেরও স্ট্রোক থেকে স্বাভাবিক চলাচলে অসুবিধা দেখা দেয়৷ ভেড়াগুলির সামনের একটি পা এক পাশে সরিয়ে রেখে পরীক্ষা করা হয়৷ বল্টসের ভাষায়, ‘‘ভেড়াটি চেষ্টা করে চার পায়ে ভর করে দাঁড়াতে৷ আমরা লক্ষ্য করি, ভেড়াটি ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে কিনা৷ যদি কোনো অসুবিধা দেখা যায়, তা হলে বোঝা যাবে যে স্ট্রোকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়ে গেছে৷ আর ভেড়াটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পারলে সেল থেরাপির সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা বোঝা পাওয়া যাবে৷''
পরবর্তীতে পরীক্ষা করা হবে মানুষের ওপর
গবেষকরা ভেড়ার নিজের শরীরের স্টেমসেলই ইনজেকশন করে ঢুকিয়ে দেন তার দেহে৷ পরের ধাপে মানুষের সেল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে৷ ফ্রাউনহফার ইন্সটিটিউটের গবেষক আলেক্সান্ড্রা স্টলসিং মানুষের ত্বক থেকে স্টেমসেল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন৷ তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হল, ত্বকের কোষ সেরকম নিষ্কলুষ হয়না৷ আদি স্টেমসেলে ফিরতে গেলে এই কোষকে আবার শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করতে হয়৷ এরপরই কেবল অন্যান্য কোষ তৈরি করা সম্ভব৷ গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে এ পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল বেশ আকর্ষণীয়৷
স্টলসিং বলেন, ‘‘আমার মূল গবেষণা ক্ষেত্র বার্ধক্য নিয়ে৷ একটি পুরানো কোষকে যে ভাবে আবার নবীন কোষে পরিণত করা যায়, তা মুগ্ধ করার মত৷ এই বিষয়টি আমরা এখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি৷ কোষের ক্ষতিগুলোকে কী দূর করা হবে, নাকি মেরামত করা হবে? জিনোমের অবস্থাই বা কী রকম হবে? এগুলিকে কী আবার তরুণ জিনোমে রূপান্তরিত করা যাবে? এ সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি আমরা''
ইতিবাবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা গেছে
স্ট্রোকের পর স্টেমসেল প্রবেশ করালে শরীরে কী ঘটে, তা এখনও গবেষকদের অজানা৷ তবে এটা স্পষ্ট যে, স্নায়ুকোষ মেরামত করার জন্য এই সেল সরাসরি মস্তিষ্কে ঢোকে না৷ এই ধরণের প্রক্রিয়ার জন্য কমপক্ষে চার সপ্তাহ প্রয়োজন৷ কিন্তু স্টেমসেলের ইনজেকশন দেয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই ভেড়াগুলির শরীরে ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা যায়৷ বল্টসের ভাষায়, ‘‘স্টেমসেলগুলি স্ট্রোকের কারণে সৃষ্ট শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রোধ করতে পারে, নিয়ন্ত্রিত করতে পারে সংক্রমণ প্রক্রিয়াকে৷ তাই সব মিলিয়ে বলা যায় স্টেমসেলের থেরাপি দিলেই ফলাফলটা ভাল হয়৷''
স্টেমসেল-থেরাপি স্ট্রোকের চিকিত্সায় একটি ধাপ মাত্র৷ আসল কথা হল, রোগীকে দ্রুত উপযুক্ত কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া, যাতে মাথায় জমাটবাধা রক্তকে দ্রুত তরল করা যায়৷ শিগগিরই মানুষের ওপর এই থেরাপির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হবে৷ তবে গবেষণায় সাফল্য দেখা দিলেও স্টেমসেল থেরাপি সহজলভ্য হতে কম পক্ষে বছর দশেক লাগবে৷ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রতিরোধ থেরাপির চেয়ে ভাল৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক