স্ট্রেস যখন বংশানুক্রমিক হয়
২৭ আগস্ট ২০১৮স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা৷ অপ্রত্যাশিত, অনিবার্য, ভোলা যায় না – মনের মধ্যে এমন সব ছবি ভেসে ওঠে চরম পীড়া দেয়৷ শুধু স্মৃতিভাণ্ডারে নয়, জিনের মধ্যেও তা থেকে যায়৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন৷ ট্রমা বা চরম অভিজ্ঞতার ছাপ বংশানুক্রমিক হতে পারে৷
যেমন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে একটি ইঁদুরের ঠিক তেমনই ট্রমা হয়েছে৷ অথচ তার এমন কোনো সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা হয়নি৷ কিন্তু তার এক পূর্বপুরুষের তেমন ট্রমা হয়েছিল৷ বাচ্চা বয়সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তার মা'কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেই চরম স্ট্রেসের অভিজ্ঞতার ছাপ কয়েক প্রজন্ম ধরে বংশের মধ্যে থেকে গেছে৷
প্রায় ৮ বছর আগে নিউরোবায়োলজিস্ট ইসাবেল মানসুই সেই আবিষ্কার করেন৷ তারপর থেকে তিনি বিষয়টি চর্চা করে চলেছেন৷ তিনি নাতি-পুতিদের মধ্যে প্রপিতামহের ট্রমার চিহ্ন খুঁজছেন৷ এমন আচরণ সংক্রান্ত পরীক্ষার সময়ে যতটা সম্ভব নীরব থাকতে হয়৷ ইসাবেল বলেন, ‘‘ইঁদুরটিকে দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই৷ যেমন কোনো মানুষ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে ট্রমায় ভুগলেও তাকে দেখে সেটা বোঝা যাবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায় না৷''
অর্থাৎ এর জন্য এক পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে৷ ইঁদুরটিকে ঠান্ডা পানির শক বা ধাক্কা দেওয়া হবে৷ এর মাধ্যমে মানসিক অসুস্থতা প্রকাশ পায়, এমনকি তা পরিমাপও করা যায়৷ ইঁদুরটি কেমন আচরণ করবে? দেখা গেল, ইঁদুরটি মরিয়া হয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে৷
পরীক্ষাটি দেখতে নিষ্ঠুর মনে হলেও জেলা কর্তৃপক্ষ এর অনুমতি দিয়েছে৷ ইসাবেল মানসুই বলেন,‘‘অবশ্যই, কিন্তু বলপূর্বক এই সাঁতারের পরীক্ষা স্বাভাবিক মানদণ্ড হিসেবে স্বীকৃত৷ প্রাণীটির জন্য এটা স্ট্রেস বৈকি৷ দেখা যাচ্ছে, ইঁদুরটি হাল ছেড়ে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে৷''
এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ইঁদুরের আচরণ কিন্তু একেবারে বিপরীত হয়৷ সে লড়াকু মনোভাব দেখিয়ে কয়েক মিনিট ধরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে৷ ট্রমা থাকলে ইঁদুর অনেক দ্রুত হাল ছেড়ে দেয়, এক্ষেত্রে যেমনটা দেখা যাচ্ছে৷ ইসাবেল মানসুই অবশ্য মনে করেন, ৬ মিনিট অত্যন্ত দীর্ঘ সময়৷ সেক্ষেত্রে ইঁদুরটিকে পানি থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত৷
আন্দ্রেয়া ফিশলি/এসবি