অ্যালিস পাস্কিনির স্ট্রিট আর্ট
১১ মার্চ ২০১৬অ্যালিস পাস্কিনির ছবি আজকাল আর্ট গ্যালারিতে ঝোলে৷ তবে তিনি আজও দেয়ালে ছবি আঁকেন৷ অ্যালিস বলেন, ‘‘একটা দেওয়ালে ছবি আঁকা ক্যানভাসে ছবি আঁকার চেয়ে অনেক বেশি৷ দেয়ালের একটা ইতিহাস থাকে, রং থাকে, মানুষজন থাকেন, যারা ঐ দেয়ালের কাছাকাছি বাস করেন৷ নিজের স্টুডিওতে একটা ক্যানভাস নিয়ে কাজ করে আমি কোনো প্রেরণা পাই না৷ একটা বাস্তব কাহিনি আছে, এমন কিছু নিয়ে কাজ করার জন্য দেওয়াল বা অন্য কোনো রিসাইকেল্ড মেটিরিয়াল নিয়ে কাজ করতেই আমার বেশি ভালো লাগে৷''
সারা বিশ্বে দেয়ালে দেয়ালে রং স্প্রে করে ছবি এঁকেছেন অ্যালিস৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি তাঁর নিজের শহর রোমের পথেঘাটে৷ রোমের রাস্তাতেই অ্যালিস তাঁর ছবির বিষয় খুঁজে পান: মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো সব মুহূর্ত৷ নিজের স্কেচবইতে সেগুলোকে ধরে রাখেন৷ অ্যালিস বলেন, ‘‘আরো বেশি নাড়া দেয় সেই সব জিনিস, যা পঞ্চাশ বছরেও বদলায়নি৷ কী জানেন তো? বিশ্বজনীন কিছু একটা৷ এভাবে আমি যখন ঘুরে বেড়াই, তখন আমি যেন প্রমাণ পাই যে, মস্কো থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে সিডনি পর্যন্ত মানুষের আবেগ-অনুভূতি একই থাকে৷''
গ্র্যাফিটি থেকে আর্ট
অ্যালিস পাস্কিনির স্টুডিও শিল্পীদের মহল্লা সান লোরেঞ্জোয়৷ এখানেই তিনি ছবি আঁকেন, অলংকরণ বা অন্যান্য ফরমায়েশি কাজ করেন৷ ইটালির মেয়ে অ্যালিস আর্ট কলেজে পড়ার সময় গ্র্যাফিটির সংস্পর্শে আসেন – আর্ট সম্বন্ধে ওপরমহলের নাকউঁচু ধারণার প্রতিবাদ হিসেবে৷ অ্যালিস স্মৃতিচারণ করলেন, ‘‘আমার খারাপ লাগছিল, কেননা নতুন ছাত্রী হিসেবে সে আমলে কোনো চিত্রপ্রদর্শনীতে গেলেই আমার নিজেকে খুব বোকা মনে হতো, কারণ আমি কিছুই বুঝতে পারতাম না৷ শিল্পকলা যেন অনুভূতির ব্যাপার নয়, মগজের ব্যাপার৷ এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমি রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি – তাছাড়া আমার ছোটবেলা থেকেই আঁকতে ভালো লাগত৷''
বাড়ির দেওয়াল অথবা ক্যানভাস, অ্যালিস যেখানেই আঁকুন, তাঁর ছবির উপজীব্য হল মানুষ আর মানুষের সম্পর্ক৷ অ্যালিস সবচেয়ে ভালোবাসেন মহিলাদের আঁকতে, তাঁরা ঠিক যা, সেইভাবে, কোনোরকম ন্যাকামি করে নয়৷ অ্যালিস বললেন, ‘‘বাবা-মা আর সমাজ মিলে আমাদের একটা চরিত্র গড়ে দেয়৷ সেই চরিত্র আগে থেকেই নির্দিষ্ট, আমাদের সেটা মেনে চলতে হবে৷ আমাদের ভদ্রসভ্য হতে হবে, সব কিছুতে নাক গলানো নয়, দুমদাম করে ঘুরে বেড়ানো নয়, বেশি আওয়াজ করা নয়....অথচ সব মেয়েরাই কৌতূহলী আর প্রাণচঞ্চল, সে তো আপনারা জানেনই৷''
স্তরে স্তরে
‘প্রাচীরের মধ্যে – স্তরে স্তরে', এই নাম দিয়ে অ্যালিস একটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছেন: ত্রিমাত্রিক স্ট্রিট আর্ট৷ সাথে নিয়েছেন এক আলোকচিত্রশিল্পীকে৷ প্রস্তুতি হিসেবে অ্যালিস বেশ কিছু ছোট মডেলের দেওয়াল তৈরি করেছেন, ‘‘একটি দ্বিমাত্রিক ছবিকে ত্রিমাত্রিকে রূপান্তরিত করার জন্য সেটিকে একাধিক স্তরে ভাগ করতে হয়৷ এখানে চারটে স্তর দেখা যাচ্ছে৷ বাস্তবে কিন্তু সাতটা স্তর, সেই সঙ্গে পটভূমি৷''
দর্শকরা ত্রিমাত্রিক চশমা নাকে দিয়ে প্রাচীরের ভেতরে ঢুকতে পারেন৷ প্রদর্শনীর স্থানটি হলো রোম৷ দর্শকদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্কটাই অ্যালিসকে প্রেরণা দেয়৷ সেজন্যই তিনি বারংবার জনসমক্ষে ছবি আঁকেন, ‘‘প্রত্যেকেই একটু অন্যরকম করে দেখে আর তা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই কথাবার্তা হয়৷ দর্শকরা পরস্পরকে বলেন, তাদের কিরকম লাগছে, কিরকম বোধ হচ্ছে৷''
এখানেও আদানপ্রদানটাই বড় কথা৷ রোমের এই উদ্বাস্তু আবাসনে অ্যালিস অভিবাসী কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে গত এক বছর ধরে কাজ করছেন, তাদের অভিজ্ঞতা চিত্রপটে ধরে রেখেছেন৷ ৩৫ বছর বয়সি শিল্পীর লক্ষ্য খুব সহজ: ‘‘বলতে কি, মানুষের ইতিহাস তো শিল্পকলায় ভরা৷ আর্ট হলো মানুষের হিস্টরি, মানবজাতির ইতিহাস৷ আর্ট আমাদের প্রয়োজন৷ আর্ট দুনিয়া বদলাতে পারে না, কিন্তু পৃথিবীটাকে আর একটু ভালো করে তুলতে পারে৷''
অ্যালিস পাস্কিনি এভাবেই দুনিয়াটাকে আর একটু ভালো করে তুলছেন৷