সৌদিতে সংস্কার, নাকি ক্ষমতার খেলা?
২৮ জুন ২০২১চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরবে একটি আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷ ফলে এখন থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী তার বাবা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি না নিয়ে স্বাধীনভাবে বাস করতে পারবেন৷
এর কিছুদিন পর আরেক ঘোষণায় বলা হয়, এখন থেকে মেয়েরা মক্কায় হজ করতে চাইলে নিবন্ধন করতে পারবেন৷ সেজন্য তাদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়বেনা৷ চাইলে অন্য মেয়েদেরও সঙ্গে নেয়া যাবে৷
চলতি সপ্তাহে সৌদি সরকার বিদেশ থেকে বই ও ম্যাগাজিন আমদানির নিয়ম সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ অর্থাৎ আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সেন্সরশিপের যে নিয়ম ছিল সেটা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷
এর আগেও সৌদি আরবে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০' ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
‘কোনো কিছু স্পর্শ করছে না, সবকিছু পরিবর্তন করছে'
ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি থিংক ট্যাংক ‘দ্য কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস' এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ের ভিজিটিং ফেলো ইয়াসমিন ফারুক ও সিনিয়র ফেলো নাথান ব্রাউন সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, যা তাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে৷ শিরোনাম- ‘সৌদি আরবের ধর্মীয় সংস্কার কিছু স্পর্শ করছে না, কিন্তু সবকিছু পরিবর্তন করছে'৷
তারা বলছেন, এই যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই অর্থপূর্ণ পরিবর্তন নয়৷ এগুলো আসলে প্রক্রিয়াগত, আমলাতান্ত্রিক ও আইনগত পরিবর্তন৷ তারা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো এই পরিবর্তনগুলো আবার বাতিল করে দেয়া যেতে পারে৷
ফারুক ও ব্রাউন লিখেছেন, এই পরিবর্তনগুলো মোহামেদ বিন সালমানের ক্ষমতা বাড়ানো ও তার প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করার কেবল আরেকটি উপায় বলে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে৷
শুধুমাত্র প্রোপাগাণ্ডা?
সামাজিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসলেও সৌদি শাসকেরা কীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন সেই বিষয়ে এখনও অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা থেকে গেছে৷
সৌদি সরকারের সমালোচকরা বলেন, সামাজিক উদারতা ও রাজনৈতিক উদারতার মধ্যে পার্থক্য এখনও একটি সমস্যা৷ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা সৌদি আরবে চলা কয়েকটি ভণ্ডামির উদাহরণ তুলে ধরেছে৷ যেমন গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া নারী অ্যাক্টিভিস্টদের এখনও জেলে রাখা হয়েছে৷ এছাড়া মৃত্যুদণ্ড কমানোর অঙ্গীকার করার পরও দেশটি এখনও মৃত্যুদণ্ড দেয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ৷
বার্লিনের ইউরোপিয়ান সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষক দুয়া ঢায়নি বলছেন, সৌদি আরবে যে সংস্কারগুলো করা হচ্ছে তার প্রভাব আছে, তবে তা সীমিত৷ ‘‘কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তবে রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে ব্যবহার কিংবা বাকস্বাধীনতা বিষয়ে প্রকৃত পরিবর্তন হয়নি,'' বলেন তিনি৷ ঢায়নি বলেন, ‘‘এই পরিবর্তন (সংস্কারগুলো) মানবাধিকার বিষয়ে অর্থপূর্ণ উপায়ে প্রভাব ফেলেনা, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো শুধুই প্রোপাগাণ্ডা৷''
ক্যাথরিন শায়ের/জেডএইচ