কংগ্রেসের ভরাডুবি, রাহুলের দায়
১৫ মে ২০১৪বুথ ফেরত জনমত সমীক্ষার ছবিটা যদি মেনে নেয়া যায়, তাহলে কংগ্রেস ১৯৮৪ সালের পর থেকে সব থেকে খারাপ ফল করতে চলেছে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে৷ এ জন্য দায়ী কে? স্বাভাবিকভাবেই দায়টা এসে পড়ে রাহুল গান্ধীর ওপর৷ যেহেতু তিনি কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এবং ভোট প্রচারের ‘স্ট্র্যাটেজি' ছিল মূলত তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত৷ কাজেই ধরে নেয়া যেতে পারে যে, নির্বাচনি লড়াইয়ে রাহুলের কৌশল নীতি এবং প্রচারাভিযানে ভূমিগত বাস্তবতায় নিশ্চয় কোনো খামতি ছিল৷
প্রশ্ন হলো, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর ওজন কি রাহুল গান্ধী আঁচ করতে পারেননি? শুধু হিন্দুত্ববাদ ও সাম্প্রাদায়িকতার ইস্যুতে মোদীকে কাত করার চেষ্টা করা হলেও সেটা ভোটদাতাদের মনে গেঁথে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল৷ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের জনসভা ও পথসভাতে রাহুলকে দেখা গেলেও ঐ ইস্যুতে মোদীকে বিদ্ধ করতে যেসব যুক্তি-তর্কের অবতারণা করেছেন তিনি, তা জনমনে ছাপ রাখতে পারেনি৷ বক্তা হিসেবে রাহুলের ট্র্যাজিডিটা হলো তাঁর কথা জনতা কানে তোলে না৷ ভাষণের মাঝপথেই সভা ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে৷ মিডিয়াও তাঁকে তেমন আমল দেয় না৷ এক কথায়, নির্বাচনি জনসভায় ভোটারদের ধরে রাখতে না পারাটা তাঁর একটা চরম ব্যর্থতা৷ তাই ডাক পড়ে প্রচারের শেষ পর্বে সোনিয়া কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর৷
জনগণের সঙ্গে মানসিক নৈকট্য বা সংযোগসেতু তৈরি করা ভোটের ময়দানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷ এই নিয়ে দলের অন্দরে ও বাইরে রাহুলকে দায়ী করা হতে পারে বলে ইতিমধ্যেই তাঁকে আড়াল করার চেষ্টা চলেছে৷ ভোটের প্রকৃত ফলাফল ঘোষণার পর যদি দেখা যায় সত্যিই কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে, তাহলে বলা হবে রাহুল কখনই সরকারে ছিলেন না৷ গত ১০ বছরে সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধেই যদি এই জনাদেশ হয়ে থাকে, তাহলে এর দায়ভাগ রাহুলের ওপর কেন বর্তাবে? এটা মনমোহন সিং সরকারের দায়৷
অন্যদিকে, বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে তিন লাখ কিলোমিটার সফর করে ৪৩০টা জনসভায় যেসব কথা বলেছেন যেসব বক্তব্য রেখেছেন, কিছু কিছু বিতর্কিত হলেও উপস্থিত জনতা তা মন দিয়ে শুনেছে, ভেবেছে, বিচার করেছে৷ ভোটারদের মনে রেখাপাত করেছে৷ কারণ গরম কথাটাও নরম করে বলতে জানেন৷ এমন চতুরতার সঙ্গে বলতে জানেন যে জনতা সহজেই ‘‘আ-মোদীত'' হয়ে পড়েন৷ মিডিয়ার ক্যামেরায় ব্যাপকভাবে ধরা পড়ে তাঁর প্রতিটি অভিব্যক্তি৷ মোদীর বিরুদ্ধে রাহুলের বক্তব্যে যুক্তি আছে, ধার নেই৷ রাহুলের পরিকল্পনায় সারবস্তু আছে, কিন্তু জোর নেই তা প্রতিষ্ঠিত করার৷ জনমোহিনী শক্তিতে রাহুল ধারেকাছে আসেনা মোদীর৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাহুল মোদীর তুলনায় রাজনৈতিক দিক থেকে অনভিজ্ঞ৷ পরিবারতন্ত্র-বিরোধী আবহে পরিবারতন্ত্র প্রসঙ্গ তুলে ইতিমধ্যেই তিনি সমালোচনার মুখে৷ কাজেই দলকে যদি পুনরুজ্জীবিত করতে হয়, তাহলে রাহুলকে গলার জোর বাড়াতে হবে৷ প্রতিটি নির্দেশ দলকে শুনতে বাধ্য করতে হবে৷