সোনার থেকেও দামি সাপের বিষ
২৬ মার্চ ২০১৭শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও কথাটা সত্যি৷ হ্যাঁ, সোনার চেয়েও সাপের বিষের দাম বেশি এখন বাজারে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও মাদকাসক্ত লোকের অভাব নেই৷ এদের মধ্যে কিছু লোকের মাদকাসক্তি এমন স্তরে পৌঁছেছে, যে কোকেন, হেরোইন, মারিজুয়ানা, আফিমেও নেশাটা ঠিক জমছে না৷ তাঁদের আরও কড়া নেশা দরকার৷ তাই তাঁদের মাদকে এখন মেশানো হচ্ছে সাপের বিষ৷ ফলে সাপের বিষের চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ ফুলে ফেঁপে উঠছে ড্রাগ সিন্ডিকেটের অবৈধ ব্যবসা৷
বলা বাহুলয, সাপের বিষের ব্যবসা অসম্ভব লাভজনক৷ কোটি কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরেও৷ এ মুহূর্তে এক লিটার সাপের বিষের বাজার দাম প্রায় চার কোটি টাকা৷ ভারতে বিষ নিষ্কাশনের জন্য ধরা হয় প্রধানত চার প্রজাতির সাপ – গোখরো, রাসেল ভাইপার, পিট ভাইপার এবং শাখামুটে৷ বিষ নিষ্কাশনের পর সেই বিষ চালান করা হয় দেশে এবং বিদেশে৷ দেশে চোরা চালানকারীদের নারকটিক সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক ব্যাপক৷ সরকারি নজরদার এজেন্সিও নাকের ডগায়৷ কিন্তু তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না৷
তবে একেবারে ধরাও যে পড়ছে না, তা নয়৷ বিষের চোরা চালানকারীরা প্রায়ই ধরা পড়ছে বন বিভাগের জালে৷ কিন্তু তাতে চোরা ব্যবসায় ইতরবিশেষ কিছু হয়নি৷ গত মাসে বন্যজীবন অপরধ দমন ব্যুরো এবং গুজরাটের বন বিভাগ আমির খান নামে একজন চোরা চালানকারীকে গ্রেপ্তার করে৷ তার কাছে পাওয়া যায় ৮০ মিলি লিটার সাপের বিষ, যার বাজার দাম সাত-আট লাখ টাকা৷ বিহারের পুর্ণিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় আরো দু'জনকে৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক বোতল সাপের বিষ৷ এতে ছিল ৯০০ গ্রাম গোখরো সাপের বিষ, যার বাজার দাম তিন কোটি টাকা৷ বোতলের গায়ে লেবেলে লেখা ছিল মেড ইন ফ্রান্স৷ জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে বিহারে ঢোকে সেই বিষ৷
দিল্লির রাজধানী এলাকায় সম্প্রতি ধরা পড়ে সাপের বিষের আরো কিছু চোরা চালানকারী৷ উত্তর প্রদেশ রোডওয়েজের বাসে তারা যাচ্ছিল মিরাটের দিকে৷ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে৷ তাদের কাছে ছিল সফটড্রিঙ্কের বোতলে ৫০০ মিলি লিটার সাপের বিষ৷ শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দু-দু'টো জ্যান্ত সাপও, যা রাখা ছিল থার্মোকলের বাক্সে৷ বিষের বোতল ও বাক্সটা যে ট্রাভেল ব্যাগে ছিল, তাতে ঝুলছিল বিমান সংস্থার ট্যাগ৷ অর্থাৎ সেসব এসেছিল দেশের বাইরে থেকে৷ মিরাট হয়ে সম্ভবত তা যাচ্ছিল নেপালে৷
তবে শুধু নেপাল নয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে এ সব চালান হয়ে থাকে ইউরোপীয় দেশগুলিতেও, বলেন ‘পিপলস ফর অ্যানিমেলস' নামে এক এনজিওর কর্মকর্তা সৌরভ গুপ্ত৷ সাপের বিষ দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলি তৈরি করে অ্যান্টি-ভেনাম সিরাম৷ এটা সাপে কাটা মানুষের জীবনদায়ী ওষুধ৷ তাই সাপের বিষের এই অবৈধ ব্যবসার ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলি পড়েছে নানা ধরনের সমস্যার মুখে৷ সাতপুরা ফাউন্ডেশনের এক পরিবেশবিদ বলেন, অ্যান্টি-ভেনাম ওষুধ তৈরি চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক বাড়ছে৷ একমাত্র সরকারি হফকিন ইনস্টিটিউটই সাপের বিষ নিষ্কাশনের বৈধ সংস্থা৷ তাই এই পরিবেশবিদের মতে, এই ধরনের আরো বৈধ সংস্থা থাকা দরকার৷
ওষুধের পাশাপাশি গবেষণার কাজেও ব্যবহার করা হয় সাপের বিষ, বলেন ভারতের বন্য জীবন মনিটারিং নেটওয়ার্ক সংক্ষেপে ট্রাফিক ইন্ডিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শাখার অধিকর্তা৷ এই চার প্রজাতির সাপ ধরার পর দু-তিনবার বিষ বের করে আবার সাপগুলো জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হয়৷ বছর দুই আগে মহারাষ্ট্র সরকার সাপের বিষের ব্যবসাকে বৈধ করতে চেয়েছিল৷ বৈধ সাপুড়েদের সাপ ধরার অনুমতি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা৷ বিষধর সাপ হামেশাই বসত অঞ্চলে ঢুকে পড়ে৷ তাই ভাবা হয়েছিল, সেইসব সাপ ধরে সাপুড়েরা বিষ বের করে বনে জঙ্গলে ছেড়ে দেবে৷ ঠিক হয়েছিল, বছরে আট হাজারের বেশি সাপের বিষ বের করা যাবে না৷ কিন্তু এই সিদ্ধান্তে খাপ্পা হন পরিবেশবিদরা৷ তাঁদের আশংকা, এতে সাপের বিষের চোরাচালান বাড়বে বই কমবে না৷ তাছাড়া সাপের বিষ ছাড়াও বাড়বে সাপের চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চোরা ব্যবসা৷
কীভাবে মাদকে মেশানো হয় সাপের বিষ? সাপের বিষ নিষ্কাশনের পর প্রথমে তা রাখা হয় খুব কম তাপমাত্রার আধারে৷ কিছুদিন পর তরল বিষ শুকিয়ে দানা বেঁধে গেলে তা গুঁড়ো করা হয়৷ তারপর তা মেশানো হয় মদ বা অন্যসব মাদকে৷ সাধারণত ১০০ লিটার মদে ১০ গ্রাম সাপের বিষের গুঁড়ো মেশানো হয়৷
বন্ধু, কেমন লাগলো প্রতিবেদনটি? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷