1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেপসিস বা রক্তদুষ্টির দ্রুত শনাক্তকরণে চুম্বকের ব্যবহার

২৬ এপ্রিল ২০১১

সেপসিস অর্থাৎ রক্তদুষ্টি জীবন বিপন্নকারী অসুখ৷ তবে এই অসুখটিকে সহজে ধরা যায়না৷ গবেষণাগারে ৪৮ ঘন্টা লেগে যায় রক্তদুষ্টির জীবাণুগুলিকে শনাক্ত করতে৷ গবেষকরা রক্তের দূষণ দ্রুত শনাক্ত করতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন এখন৷

https://p.dw.com/p/113re
ছবি: Sruthi Pinameneni

জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন দ্রুত শনাক্তকরণ

রক্তদুষ্টিকে বলা হয় সেপসিস৷ এই রোগে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাক কিংবা এসব থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থ রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করার চেষ্টা করে৷ সাধারণত শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ শক্তি রক্তদূষণকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে৷ শুরুতে ধরা পড়লে রক্তদুষ্টিকে আয়ত্তে আনা সহজ৷ তা না হলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক৷ শরীরের কোনো জায়গা কেটে বা পুড়ে গেলে কিংবা অপারেশনের ক্ষত দিয়ে অথবা নাকে, মুখে নল লাগালেও প্রবেশ করতে পারে জীবাণু৷ জ্বর, গায়ে ব্যথা, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি রক্তদুষ্টির লক্ষণ৷

আধুনিক পদ্ধতিতে দেখা যাচ্ছে আশার আলো

জার্মানির লাইপৎসিগ শহরের ফ্রাউয়েনহোফার ইন্সটিটিউটের গবেষকরা এখন নতুন এক পদ্ধতি বের করেছেন, যাতে রক্তদূষণের জীবাণুগুলিকে সহজেই শনাক্ত করা যায়৷

জার্মানিতে প্রতিবছর ৬০ হাজার মানুষ মারা যান সেপসিস বা রক্তদূষণে৷ এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ৷ কেননা তাদের রোগটাই ধরা যায় অনেক দেরিতে৷ যার ফলে চিকিৎসাও কঠিন হয়ে পড়ে৷ গবেষকরা নতুন এক ধরনের পদ্ধতি বের করেছেন, যাতে রক্তদূষণ সহজেই ধরা পড়বে৷ রক্ত পরীক্ষার টিউবে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ন্যানো মিটার ব্যাসের ম্যাগনেটিক আয়রন অক্সাইড পার্টিকেলস বা চুম্বকের কণা ঢুকিয়ে রাখা হয়৷

Sonne mit Magnetfeld
ছবি: AP

ফ্রাউয়েনহোফার ইন্সটিটিউটের ইমিউনোলজিস্ট ড. ডিয়ের্ক কুলমায়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কয়েক মিনিট ধরে চুম্বককণা রক্তের ভেতর এদিক সেদিক ঘোরাতে হয়৷ তারপর বড় একটি চুম্বক দিয়ে ব্যাকটেরিয়াসহ ক্ষুদ্র চুম্বকগুলি বের করে আনা হয়৷''

অতি ক্ষুদ্র চুম্বক কণাগুলি খালি চোখে দেখা যায়না৷ প্রায় ৩০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ৭ রকমের ছত্রাক সেপসিস বা রক্তদূষণ ঘটাতে পারে৷ গবেষণাগারে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করার পর চুম্বকের সাহায্যে এগুলিকে আটকানো সম্ভব হয়৷ প্রথমে কৃত্রিম এক ধরনের পদার্থ দিয়ে ক্ষুদ্র চুম্বক কণাগুলির ওপর প্রলেপ লাগিয়ে নিতে হয়৷ এ প্রসঙ্গে ড. কুলমায়ার বলেন, ‘‘এটা রক্তের অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধমূলক পদার্থ হতে পারে৷ যা কিনা নির্দিষ্টভাবে ব্যাকটেরিয়াগুলিকে আটকাতে পারে৷ কিংবা সেপসিস উদ্দীপক মারাত্মক জীবাণুগুলিকে টানতে পারে৷''

অল্প জীবাণু দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব

চুম্বকের সাহায্যে আটকানো ব্যাকটেরিয়াগুলিকে একটি প্লাস্টিক কার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়৷ যেখানে থাকে ১২টা খোপ৷ অত্যন্ত সরু নালির মাধ্যমে যোগাযোগ থাকে এই খোপগুলির মধ্যে৷ জীবাণুগুলির ডিএনএ বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে সম্প্রসারণ করা হয়৷

ড. কুলমায়ার ব্যাখ্যা করে জানান, ‘‘আমরা এই ডিএনএকে চুম্বক কণাতে আটকাতে পারি এবং খোঁজ করি সেই সব ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের, যেগুলি রক্তদুষ্টির জন্য দায়ী৷ অবশেষে অল্প কিছু জীবাণুর ডিএনএ সম্প্রসারণ করে বিশ্লেষণ উপযোগী করা সম্ভব হয়৷''

এই ভাবে সেপসিসকে প্রথম অবস্থাতেই ধরা সম্ভব৷ অর্থাৎ যখন মাত্র কয়েক শ ব্যাকটেরিয়া রক্তে দেখা দেয়৷ বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষায় ব্যাকটেরিয়াগুলিকে শনাক্ত করতে দুই দিন লেগে যায়৷ কেননা এজন্য জীবাণুর প্রচুর ডিএনএ'র প্রয়োজন৷ চুম্বক পদ্ধতিটা খুব কার্যকর বলে অল্প কিছু জীবাণু থাকলেও তাদের শনাক্ত করা সম্ভব৷ আধ ঘন্টার মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যায়৷

জীবাণু দ্রুত শনাক্ত করা গেলে অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তদুষ্টির হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক