সেনেগালের মাদ্রাসাগুলোয় কী ঘটছে?
সেনেগাল পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ কিন্তু সেখানের মাদ্রাসাগুলির পরিস্থিতি ভয়ানক৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
‘দারা’র ভেতরে কী ঘটছে?
ছবিতে আট বছরের ওমরকে ‘দারা’ বা স্থানীয় মাদ্রাসার বাইরে ভিক্ষা চাইতে দেখা যাচ্ছে৷ সেনেগালে বাবা-মা’রা প্রায়ই তাঁদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য মাদ্রাসা বা ‘দারা’য় পাঠান৷ কিন্তু পবিত্র কোরান পড়তে শেখার পাশাপাশি শিশুদের রাস্তায় ভিক্ষা করাতে বাধ্য করা হয় সেখানে৷
অত্যাচারী শিক্ষক
দারায় যে ছাত্ররা পড়ে, তাদের বলা হয় ‘তালিবে’৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই তালিবেরা শিক্ষকদের চাপ সহ্য করতে পারে না৷ দিন শেষে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা না নিয়ে ফিরলে এই শিক্ষকরা, যাদের স্থানীয়রা ডাকেন ‘মারাবৌত’ নামে, হয়ে ওঠেন অত্যাচারী৷ ফলে, সেখান থেকে তালিবেরা প্রায়ই পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার৷
টাকা না মুক্তি?
দশ বছর বয়েসি সুলেমানের কোরানপাঠ শেষ না হলে বাবা-মায়ের কাছে যাবার সুযোগ নেই৷ শুধু তাই নয়, দিনের শেষে যদি ২০০ ফ্রাঙ্ক (যা ২৮ টাকার সমান) না নিয়ে ফেরে সুলেমান, তাহলে তাকে বেদম প্রহার করে শিক্ষক, এমনটাই জানাচ্ছে সে৷ প্রহারের ভয়েই তার মতো অনেক শিশুরা পালাতে চায়৷
অন্য কোনো উপায়?
সেনেগালে রয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা, যারা এই তালিবেদের জন্য কাজ করে৷ স্নান করার জন্য পরিষ্কার ঘর বা বালতি প্রভৃতি দেয় তারা৷ উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই এক ছাত্রকে৷ তার হাতে ধরা আছে একটি বালতি, যা সে স্নান করবার জন্য জল রাখতে ব্যবহার করে৷
মাদ্রাসাকে ঘিরে রয়েছে ‘ট্যাবু’
অনেকদিন ধরেই সেনেগালে তালিবেদের অত্যাচার বিষয়ে আলোচনা ছিল ‘ট্যাবু’৷ কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নানা শিক্ষামূলক প্রচারের ফলে বেড়েছে সচেতনতা৷ ২০১৬ সালে সেনেগালের প্রেসিডেন্ট একটি প্রকল্পের প্রস্তাব আনেন যার ভিত্তিতে তালিবেদের ওপর অত্যাচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়৷
শিশুদের যৌন নির্যাতন
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য, সেনেগালে দারা’র আড়ালে চলছে গুরুতর যৌন নির্যাতনের ঘটনাও৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সমাজকর্মীকে, যিনি এক তালিবের সাথে ঘটা ভয়ানক অত্যাচারের বিবরণ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন৷
বাবা-মায়েরা কি জানেন না?
প্রাক্তন তালিবেদের অনেকেই আজ নিজেরা প্রতিষ্ঠিত৷ এর মধ্যে এল হাডজ ডিয়ালু একজন ডাক্তার৷ তিনি জানান যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তালিবেদের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ওপর ঘটা অত্যাচারের কথা জানলেও কিছু করেন না, কারণ তাঁরা চান যে তাঁদের সন্তানরা ভবিষ্যতে শিক্ষিত ইমাম বা ধর্মীয় শিক্ষক হোক৷ কিন্তু সঠিক শিক্ষার বদলে তালিবেদের কপালে জোটে নানা রকমের চর্মরোগ ও মানসিক অসুস্থতা, জানান তিনি৷
সুরক্ষার জন্য ‘কারাটে’
অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তালিবেদের স্বনির্ভর করে তুলতে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তাঁদের শারীরিক শিক্ষাও প্রদান করে৷ রাতের অন্ধকারে ভিক্ষা করতে গিয়ে প্রায়ই এই শিশুদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়৷ এর মোকাবিলা করতে তালিবেদের কারাটে’র মতো মার্শাল আর্ট শেখানো হয় এখানে৷
এখনও বিপদে যারা...
অনেক তালিবেরাই অত্যাচার না সইতে পেরে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু পরে ক্ষুধার তাড়নায় তাদের দেখা যায় বিভিন্ন আস্তাকুঁড়ে খাবারের খোঁজ করতে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিসংখ্যান বলছে, এখনও সেনেগালে শিক্ষকদের চাপে লক্ষাধিক শিশু পথে-ঘাটে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়৷