1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুড়ঙ্গের চোরাপথ গাজার অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছে

৯ জুলাই ২০১১

গাজায় হামাস সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েলের দক্ষিণে অবস্থিত এই এলাকাকে কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছে৷ কিন্তু চোরাচালানের বাড়বাড়ন্তের কারণে সেই বাধা দূর হয়ে যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/11rzJ
সেই টানেলছবি: picture alliance/landov

গাজার পূর্ব ও উত্তর সীমান্তে ইসরায়েল৷ দক্ষিণে মিশর৷ পশ্চিমে সমুদ্র৷ সেখানেও ইসরায়েলের কড়া নজরদারি৷ মিশরের হোসনি মুবারক সরকার ইসরায়েলের চাপে সীমান্ত কার্যত নিশ্ছিদ্র রেখেছিল৷ এই অবস্থায় গাজা ও মিশরের মধ্যে গড়ে ওঠে অসংখ্য গোপন সুড়ঙ্গের এক জাল৷ প্রায় ৩০০ সুড়ঙ্গ ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় রয়েছে বলে অনুমান করা হয়৷ অস্ত্রশস্ত্র, সিমেন্ট থেকে শুরু করে আস্ত মোটর গাড়িরও চোরাচালান চলে এই সব সুড়ঙ্গ দিয়ে৷ মাসে প্রায় ২০০টি গাড়ি এভাবে গাজায় পাচার করা হয়৷

২০০৬ সালে ইসরায়েলি সৈন্য গিলাদ শালিতের অপহরণের পর ইসরায়েল গাজার উপর অবরোধ চাপিয়েছিল৷ তারপর ২০০৭ সালে হামাস ক্ষমতায় আসার পর সেই অবরোধ আরও জোরালো করা হয়৷ কিন্তু তার ফলে হামাস মোটেই দুর্বল হয়ে পড়ে নি৷ তারা গড়ে তুলেছে সমান্তরাল এক প্রশাসন ব্যবস্থা৷ সুড়ঙ্গ দিয়ে মিশর থেকে যে লক্ষ লক্ষ লিটার পেট্রোল ও ডিজেল গাজায় প্রবেশ করছে, তার বিক্রির একটা অংশ কার্যত ‘বিক্রয় কর' হিসেবে আদায় করছে হামাস প্রশাসন৷ চোরাই সিগারেট ও গাড়ি বিক্রির অর্থেরও একটা অংশ পায় হামাস৷

ইসরায়েল অবরোধ আগের তুলনায় কিছুটা শিথিল করেছে বটে, কিন্তু এখনো অস্ত্রশস্ত্র ও ১৯টি বিভিন্ন পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ ইসরায়েলের আশঙ্কা, এই সব পণ্য বোমা তৈরির মাল-মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে৷ কিন্তু এই সরকারি অবরোধ সত্ত্বেও বাস্তবে সব পণ্যই চোরাপথে গাজায় প্রবেশ করছে৷ ফায়দা হচ্ছে গোপন সুড়ঙ্গের মালিকদের৷ এমনকি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা অনুযায়ী ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে৷ যেমন ২৫০ মিটার লম্বা, দেড় মিটার চওড়া ও দেড় মিটার উঁচু সুড়ঙ্গের মাসিক ভাড়া ৪,০০০ মার্কিন ডলার৷ যে ভাড়া নেবে, সে সারা মাস ধরে মিশর থেকে পণ্যের চোরাচালান করে ভাড়া মিটিয়েও যথেষ্ট মুনাফা করে নিতে পারবে৷ কিছু সুড়ঙ্গ এত বড় আকারের, যে সেগুলিকে গাড়ির রাস্তা বা পাতাল রেল বলে মনে হয়৷ এমন সুড়ঙ্গও আছে, যার মধ্য দিয়ে দিব্যি গাড়ি চালিয়ে অপর প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া যায়৷ মুবারক জমানায় মিশরের নিরাপত্তা বাহিনী সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দিত বা সেগুলি ভেঙে দিত৷ এখন আর সেই সমস্যা নেই৷

এই সব চোরাই সুড়ঙ্গের ভিতরের জগতও বেশ অদ্ভুত৷ মাটি খুব নরম ও ভঙ্গুর হওয়ায় রবারের নৌকোর উপর পণ্য চাপিয়ে সেগুলি টেনে-হিঁচড়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে হয়৷ তবে মাটিতে বালি থাকায় কিছুটা সুবিধা হয়৷ এই সব সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ বেশ কঠিন৷ প্রায় দম বন্ধ করা পরিবেশে টানা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় শ্রমিকদের৷ মজুরি দিনে মাত্র ৮ ডলার৷ কিন্তু গাজার বিপর্যস্ত অর্থনীতির কারণে সেই কাজ করার লোকেরও অভাব হয় না৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক