সুইজারল্যান্ডের পর্বত শিখরে রাতের নির্মল আকাশ
২ সেপ্টেম্বর ২০২১সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতের উপর নক্ষত্রখচিত আকাশের প্যানোরামা ছবি তোলা অনেক শখের ফটোগ্রাফারের স্বপ্ন৷ তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের স্বপ্ন বাস্তব হতে পারে৷ ব্যার্ন শহর থেকে গাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা দূরে গিয়ে কেবল কারে চেপে প্রায় ৩,০০০ মিটার উপরে শিল্টহর্ন শৃঙ্গের উপর উঠে সেই সুযোগ পাওয়া গেছে৷
১১ জন ফটোগ্রাফার তাঁদের শিক্ষক মার্কুস আইশেনব্যার্গারের সঙ্গে নক্ষত্র শিকার করতে চলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই লোকেশনের বৈশিষ্ট্যই আলাদা৷ কারণ এখান থেকে গোটা প্যানোরামা দেখা যায়৷ অর্থাৎ, আইগার, ম্যোনশ ও ইয়ুংফ্রাউ পর্বতসহ গোটা বায়ুমণ্ডলের ছবি তোলা যায়৷ আপাতত সামান্য কয়েকটা মেঘ রয়েছে এবং রাতে আলোর দূষণ আসলে খুবই কম৷ ফলে নক্ষত্রগুলি ভালোভাবে দেখা যাবে এবং মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিও চোখে পড়বে৷’’
সুইজারল্যান্ডের ফটোগ্রাফার মার্কুস আইশেনব্যার্গার ছবি তুলে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন৷ ২০১৭ সাল থেকে তিনি নক্ষত্রের ছবি তোলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন৷ অংশগ্রহণকারীরা ক্যামেরার লেন্সে নজর দেবার আগে তাত্ত্বিক কিছু শিক্ষা ও শোবার তাঁবু খাটানোর পালা৷ পর্যটকদের পক্ষে সাধারণত শিল্টহর্ন শৃঙ্গের উপর রাত কাটানো সম্ভব নয়৷
ধীরে ধীরে দিগন্তে শেষ আলও উধাও হয়ে গেল৷ অমাবস্যার আশেপাশের সময়ে ওয়ার্কশপগুলির আয়োজন করা হয়৷ তখন আলোর দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম থাকে৷ মার্কুস আইশেনব্যার্গার বলেন, ‘‘নৈশ ফটোগ্রাফির আসল সমস্যা হলো, ক্যামেরাগুলি রাতে ছবি তোলার কথা ভেবে আদৌ তৈরি হয় নি৷ দিনের আলোয় ছবি তোলার জন্যই ক্যামেরা উপযুক্ত৷ প্রত্যেক ক্যামেরার আলোর প্রয়োজন হয়৷ যাবতীয় সেটিং সত্ত্বেও আলো ছাড়া ছবি তোলা অত্যন্ত কঠিন৷ ফলে অতি উচ্চ আইএসও ও শাটার স্পিড মাত্রা সম্বল করে কাজ করতে হয়৷ সবে গত দশ-পনেরো বছর ধরে সেটা সম্ভব হচ্ছে৷’’
হালকা মেঘের শেষ টুকরোগুলি উধাও হবার পর রাতের আকাশ স্পষ্ট হয়ে গেল৷ সবাই তো সেই দৃশ্য দেখতেই সেখানে এসেছে৷ মার্কুস আইশেনব্যার্গার বলেন, ‘‘মানুষ দৈনন্দিন জীবন থেকে দূরে এসে নিজেদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে কাজের ক্ষেত্রে যাবতীয় চাপ ভুলে যাবেন, সেটাই আমার কাছে জরুরি৷’’
এবার পুঁথিগত শিক্ষা প্রয়োগের সময় এসে গেছে৷ মার্কুস আইশেনব্যার্গার শেষ পরামর্শ দিচ্ছেন৷ রাত দুটো নাগাদ মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়৷ মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পর বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখেছেন৷ এতটা জায়গা জুড়ে এমন অপরূপ দৃশ্য সত্যি অসাধারণ৷
তাঁদের মতে, ‘‘উদ্যোগ সত্যি সার্থক৷ নানা ধরনের খুব ভালো ছবি তোলা হয়েছে৷ বিশেষ করে সূর্যোদয় খুব সফল হয়েছে৷ অনেক কিছু শিখলাম, বিশেষ করে অজানা ক্যামেরা সেটিং ও ফাংকশন সম্পর্কে জানলাম৷’’
১৮ ঘণ্টা পর ওয়ার্কশপ শেষ হলো৷ গোটা দল আবার উপত্যকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো৷ কিছু সময় পর নক্ষত্র শিকারীদের পরের দল আসতে চলেছে৷ তারাও শ্বাসরুদ্ধকর ছবি তোলার আশা করছে৷
টোনি গুনারসন/এসবি