সিরিয়ায় শরণার্থীদের সহায়তা কমছে, দুশ্চিন্তা বাড়ছে
তহবিল সংকটের কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ২০২৪ সাল থেকে সিরিয়ায় নিয়মিত সহায়তা প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফাতেমা এবং তার পরিবারের মতো আরও হাজার হাজার শরণার্থী এই সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
এগারো বছর ধরে শরণার্থী শিবিরে
ওর নাম ফাতেমা আহমেদ আল-হাসান৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের মাঝেই আলেপ্পোতে জন্ম হয় তার৷ তবে সেখানে মাত্র দুই বছর কাটিয়েছে ফাতেমা৷ আলেপ্পোয় একদিন বিমান হামলায় প্রাণ হারায় তার বাবা৷ এরপর ছেলেমেয়েকে নিয়ে সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমে চলে যান ফাতেমার মা৷
প্রতিকূল পরিস্থিতি
সেই ঘটনার পর থেকে আল-হাসান পরিবার সিরিয়ার ইডলিব প্রদেশের আল-খানসা শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন৷ শুধুমাত্র এই অঞ্চলটি এখনো বিদ্রোহী এবং আন্তর্জাতিক যোদ্ধাদের দখলে রয়েছে৷ শরণার্থী শিবিরটিতে ফাতেমার নিত্যদিনের জীবন সহজ নয়৷ আলেপ্পোয় বিমান হামলায় সে শুধু তার বাবাকে নয়, নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হয়৷ তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে৷
ভবিষ্যতের দিকে নজর
গত চার বছর ধরে স্কুলে যাচ্ছে ফাতেমা৷ শরণার্থী শিবিরের বাইরে পড়তে যেতে প্রতিদিন এক কিলোমিটারের মতো হাঁটতে হয় তার৷ তার মা সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের নাম প্রকাশের আগ্রহী নন৷ তিনি ফাতেমাকে হোমওয়ার্ক শেষ করতে সহায়তা করেন৷
সহায়তার উপর নির্ভরশীলতা
যুদ্ধ এবং কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ৪৫ লাখ বাসিন্দার ৯০ শতাংশের বেশি আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ তাদের মধ্যে বিশ লাখ বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করছেন যেখানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে৷ স্যানিটারি ব্যবস্থারও করুণ দশা৷ ফাতেমা এবং তার পরিবার আরো কয়েক ডজন মানুষের সঙ্গে একটি পানির ট্যাংকি শেয়ার করেন৷
মানবিক সহায়তা কমে যাচ্ছে
শিবিরের অন্যান্যদের মতো আল-হাসান পরিবারও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ অতীতে তারা নিয়মিত বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি)-এর ফুড প্যাকেজ পেতেন৷ সেটা দিয়ে তারা চলতে পারতেন৷ কিন্তু তহবিল সংকটের কারণে ২০২৪ সাল থেকে সেই নিয়মিত সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে৷ ভবিষ্যত নিয়ে তাই শঙ্কিত আল-হাসান পরিবারের মতো শিবিরের আরো অনেক বাসিন্দা৷
শীতকালে পরিস্থিতি আরো সঙ্গিন হয়
শীতকালে ঠান্ডা এবং কর্দমাক্ত রাস্তা ফাতেমার জীবন আরো কঠিন করে দেয়৷ এই পরিস্থিতির মধ্যেও অবশ্য এখনো টিকে আছে সে৷ তবে ভবিষ্যতে দরকার হলেও চিকিৎসা সেবা পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত শিশুটি৷
চিকিৎসক হতে চায় ফাতেমা
বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে তার মতো অন্যান্য বিশেষভাবে সক্ষমদের সহায়তা করতে চায় ফাতেমা৷ তার মাও তাকে চিকিৎসক হতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর৷ ‘‘পরিস্থিতি সহজ না হলেও আমি যেকোনোভাবে তাকে সহায়তা করে যাবো,’’ বলেন ফাতেমার মা৷