সিরিয়ায় ফরাসি সাংবাদিকের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
১২ জানুয়ারি ২০১২জিল জাকিয়ের হচ্ছেন প্রথম বিদেশি সাংবাদিক যিনি নিহত হলেন সিরিয়ায়৷ তিনি ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল ‘ফ্রঁস দো'-তে কাজ করতেন৷ গতকাল হোম্স শহরে সরকারের সহায়তায় একটি মিডিয়া দল একটি এলাকা পরিদর্শনে যায়৷ সেই এলাকাটি আসাদ সমর্থিত বলে জানা গেছে৷ কড়া এসকর্ট ছিল সেখানে৷ ফরাসি সাংবাদিক জিল জাকিয়েরও সেখানে ছিলেন বলে জানা গেছে৷ ৪৩ বছরের এই সাংবাদিক যে মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে ছিলেন সেই গ্রুপকে লক্ষ্যকরেই গোলা ছোঁড়া হয়৷ এএফপি-র একজন ফটো সাংবাদিক জানান,‘‘মিডিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক ছিলেন৷ জিল তাদেরই একজন৷ আসাদের সমর্থক বাহিনীর ওপরও আঘাত হানা হয়৷ যখন আমি নীচু হয়ে নিজেকে রক্ষা করছিলাম তখন আমি দেখি জিল রক্তে ভেসে যাচ্ছে৷ সে নিথর হয়ে শুয়ে আছে৷ একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে৷ জিলকে যখন তোলা হয় তখন আমি সঙ্গে যাই৷ হাসপাতালের অবস্থা আরো খারাপ ছিল৷ সবাই ছোটাছুটি করছে, চিৎকার ভেসে আসছে চারদিক থেকে৷ পাঁচ মিনিট পরপর গুরুতর আহত অবস্থায় মানুষ আসছে হাসপাতালে৷''
আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে ফরাসি সাংবাদিকের মৃত্যু প্রসঙ্গে৷
সিরিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ব্যাপকতর সুরক্ষা ব্যবস্থার দাবি উঠেছে চারিদিকে৷ ফ্রান্স এই মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, মিডিয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সরবরাহ করতে সিরিয়া ব্যর্থ হয়েছে৷ সিরিয়ায় ফরাসি রাষ্ট্রদূত, এরিক শোভালিয়েকে খবর দেয়ার পরই তিনি হাসপাতালে যান৷ জিল জাকিয়ের মৃতদেহ তিনি দেখেন৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি জিলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবদন করেছেন৷ প্রেসিডেন্ট সার্কোজি বলেন, ফ্রান্স আশা করছে সিরিয়া সরকার এ মৃত্যুর দিকে দৃষ্টি দেবে৷ আসল তথ্য উদঘাটন করেব৷ কারণ জিল শুধু তার কাজ করছিল এর বেশি কিছু নয়৷ বলা প্রয়োজন, জিল জাকিয়ের হচ্ছেন পুরস্কার প্রাপ্ত একজন সাংবাদিক৷ ১৯৯৯ সালে তিনি ফ্রঁন্স দো টেলিভিশন চ্যানেলে যোগ দেন৷ তিনি আফগানিস্তান, কসোভো এবং ইসরায়েলে কাজ করেছেন৷
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ, এই হামলার নিন্দা করেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান ক্যাথারিন অ্যাশটন এবং রিপোরটার্স উইদআউট বর্ডার্স সংস্থা দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন৷
আরব লীগের প্রতিনিধি দল সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিল৷ পর্যবেক্ষক দলের কয়েকজন কাজ সম্পন্ন না করেই সিরিয়া ত্যাগ করেছেন৷
আলজেরিয়ার পর্যবেক্ষক আনোয়ার মালিক এ সপ্তাহের শুরুতে পরিদর্শনের কাজ শেষ না করেই সিরিয়া ত্যাগ করেছেন৷ রয়টার্সকে তিনি টেলিফোনে জানান, ‘‘আমি বলতে পারবো না ঠিক কতজন মানুষ আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে৷ সবার কথা থেকে, বক্তব্য থেকে শুধু ক্ষোভ আর ক্রোধই ব্যক্ত হয়েছে৷'' তবে তিনি একা নন৷ মরক্কোর একজন আইনজীবী এবং মিশরের একজন পর্যবেক্ষক কাজ শেষ না করেই সিরিয়া ত্যাগ করেছেন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক