সিত্রাংয়ের বৃষ্টি যশোরের কৃষকদের জন্য প্রকৃতির ‘আশীর্বাদ'
২৬ অক্টোবর ২০২২ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মঙ্গলবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কারণে আমরা যে ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলাম তার কিছুই হয়নি৷ ঝড় মূলত উপকূলবর্তী এলাকায় ক্ষতি করেছে৷”
‘‘জেলায় এই সময়ে পুরো মাঠজুড়ে আমন ধান রয়েছে৷ এর মধ্যে কিছু ধান পাকতে শুরু করেছে৷ আবার কিছু ধানের থোড় বড় হচ্ছে৷ এ অবস্থায় পানির খুব প্রয়োজন ছিলো৷ সে কারণে একদিনের এ বৃষ্টিপাত আমাদের জন্য বড় ধরনের উপকার হয়ে দেখা দিয়েছে৷ এটাকে প্রকৃতির আশীর্বাদ বলা যায়৷”
‘‘ঝড়ের তোড়ে যে ধান নুয়ে পড়েছে, তার অধিকাংশই পাকা; ফলে এর কোনো ক্ষতি হবে না৷ কৃষক ঘরে তুলতে পারবেন৷”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তথ্য বলছে, সোমবার রাতের ঘূর্ণিঝড়ে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং ১ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি৷ মোট ৪১৯টি ইউনিয়নে ঝড় ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে৷ উড়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার ঘর, কিছু স্থানে সড়ক ভেঙেছে, বাঁধও ভেঙেছে৷
রোববার ভোর রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যশোরে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়৷ ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সঙ্গত কারণেই এ জেলার চাষি ও কৃষি বিভাগের লোকজন মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন৷ টানা এ বৃষ্টির কারণে এ অঞ্চলের সদ্য রোপণকৃত শীতের সবজি, আমন ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছিল যশোর কৃষি বিভাগ৷
তবে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে যশোরে থেমে যায় ঝড় ও বৃষ্টি৷ মাঝে মাঝে মৃদু ঝড়ো হাওয়া ও ঝিরঝির বৃষ্টি হয়েছে৷ রাতে আবহাওয়ার অবস্থা ক্রমশ ভাল হতে হতে সকালে দেখা মেলে রোদের৷ ফলে যেসব ধানক্ষেতে পানি জমে গিয়েছিলো তা সহজে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছে৷ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যশোর অঞ্চলে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে৷ আর এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে৷
যশোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, ‘‘এখন রবি ফসল চাষের প্রস্তুতি চলছে৷ ঠিক সেই সময়ে এ বৃষ্টিপাত ফসলের ক্ষেতের উর্বরতা বৃদ্ধি করবে৷ পাশাপাশি যশোরের যে শীতের সবজি রয়েছে তার জন্য বড় উপকার হয়েছে এ বৃষ্টিপাতে৷ তবে সহসা আবার যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে রবি ফসলসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ক্ষতি হয়ে দেখা দিতে পারে৷”
মঙ্গলবার সকালে যশোর সদরের নোঙরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সবজি ক্ষেতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন চাষিরা৷
সবজি চাষি আশরাফ আলী বলেন, ‘‘আগের ঝড়গুলোতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এবারকার ঝড়ে কোনো ক্ষতি হয়নি৷ জমিতে পানি জমে গেলেও সেগুলো আইল কেটে সরানো সম্ভব হয়েছে৷” তিনি বলেন, ‘‘একদিন বৃষ্টি হওয়ায় আমরা অনেকটা ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছি৷”
সবজি চাষি গোলাম হোসেন বলেন, ‘‘বৃষ্টির কারণে বাঁধাকপি ক্ষেতের ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলাম৷ তবে (মঙ্গলবার) সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় সেই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছি৷ সামনে আর বৃষ্টি না হলে সব ধরনের সবজি চাষের বড় উপকার হবে৷”
পাশের ইছালী মাঠে রাস্তার পাশে দেখা যায়, কিছু ক্ষেতের আধাপাকা আমন ধান নুইয়ে পড়েছে৷ ওইসব ক্ষেতের আইল কেটে পানি অপসারণের চেষ্টা করছেন চাষিরা৷
চাষি হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান মাটিতে পড়ে গেছে৷ তবে বেশি বাতাস না হওয়ায় ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি৷ সামনে আর বৃষ্টিপাত না হলে এসব ধান সহজেই ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)