1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাহসী নারী ‘বীরপ্রতীক’ ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান

৩১ জানুয়ারি ২০১২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য যে দুই নারী ‘বীরপ্রতীক’ খেতাব পেয়েছেন তাঁদের একজন ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান৷ অন্যজন তারামন বিবি৷ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে এই দুই বীর নারীর নাম৷

https://p.dw.com/p/13tQd
Dr Sitara Rahman, 1971 während der Freiheitskämpfe in Bangladesch Datum: Juli 1971 Eigentumsrecht: Dr Sitara Rahman, Dhaka,  Bangladesch
১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমানছবি: privat

১৯৪৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্ম সিতারা বেগমের৷ বাবা মোহাম্মদ ইসরাইল এবং মা হাকিমুন নেসা৷ তবে বৈবাহিক সূত্রে তিনি সিতারা রহমান নামে পরিচিত৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৯৭০ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সিতারা৷ এসময় তাঁর বড় ভাই এটিএম হায়দারও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন৷ স্বাধিকার আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন সিতারা৷

ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তৎকালীন লেফটেন্যান্ট সিতারা রহমান জানালেন কীভাবে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য কাজ শুরু করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাক সেনারা যখন বাঙালিদের উপর হামলা শুরু করল, তখন আমি এক মাসের ছুটিতে ছিলাম৷ ছুটিতে আমি কিশোরগঞ্জে আব্বা-আম্মার কাছে আসি৷ আমার সাথে ভাইয়াও এসেছিলেন৷ তবে ভাইয়ার ছুটি ছিল মাত্র এক সপ্তাহ৷ ভাইয়া ছুটি শেষ করে চলে গেলেন৷ কিন্তু আমি বাসায় থেকে গেলাম৷ মার্চ মাসে হত্যাকাণ্ড শুরুর পর কুমিল্লা কম্বাইন্ড মেডিকেল হসপিটাল - সিএমএইচ থেকে তিনটা-চারটা টেলিগ্রাম আসতে লাগল৷ আমাকে ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনের কার্যালয়সহ বেশ কিছু কাছাকাছি স্টেশনের উল্লেখ করে কাজে যোগ দিতে বলা হলো৷ কিন্তু আব্বা মিথ্যা কথা লিখে টেলিগ্রামের জবাব দিলেন৷ একবার লিখলেন, সিতারা অসুস্থ৷ তারপরেও কাজে যোগ দিতে বলা হয়৷ তখন বাবা লিখলেন, তার পা ভেঙে গেছে৷ তাই হাঁটতে পারে না৷ এভাবে কিছুদিন টেলিগ্রাম লেনদেন হলো কিন্তু আমি কাজে যোগ দিলাম না৷ এর মধ্যেই একদিন দেখলাম ভাইয়া তৎকালীন মেজর নাসিম এবং ভারতীয় একজন সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলেন৷ আমি তো আশ্চর্য যে, কী ব্যাপার? তখন ভাইয়া থানায় গিয়ে বৈঠক করলেন এবং জানালেন যে, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের মধ্যে একটি সেতু উড়ানোর জন্য আমরা এসেছি৷ তো সেতুটি উড়ানোর সময় খুব জোরে শব্দ হবে৷ তাতে আপনারা কেউ আতঙ্কিত হবেন না৷ ভাইয়ারা খাওয়া-দাওয়া করে সন্ধ্যায় চলে গেলেন৷ এর পরদিনই ঐ এলাকায় পাক সেনাবাহিনীর বিমান উড়তে থাকল৷ কিছু কিছু জায়গায় তারা বোমা ফেললো৷ আমাদের ভয় হচ্ছিল যে, আমরা যেহেতু সেনাবাহিনীতে চাকুরি করতাম, তাই আমাদের বাসার ঠিকানা তো পাক সেনাদের কাছে রয়েছেই৷ ফলে তারা আমাদের ধরতে আসতে পারে৷ তাই আমরা বড়বাগ গ্রামে গিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় কয়েকদিন থাকলাম৷''

চিকিৎসক ও সেনা সদস্য সিতারা রহমান তখন শুধুই পথ খুঁজছিলেন কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানো যায়৷ এর মধ্যেই ভাই মেজর হায়দারের চিঠি পান সিতারা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷ এরপর কীভাবে আগরতলা পাড়ি জমান সিতারা এবং তাঁর পরিবার, সেব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘জুলাই মাসের শেষ দিকে ভাইয়া দু'টি ছেলের হাতে পেন্সিল দিয়ে লেখা একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন৷ চিঠিতে তিনি আমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন৷ বিশেষ করে আমাকে নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন সেটাও উল্লেখ করেন৷ এছাড়া তাদের হাতে আমার জন্য একটা ছোট পিস্তল পাঠিয়েছিলেন৷ এই নির্দেশ দিয়ে যে, যদি পথে কোথাও পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়ি, তাহলে যেন আমি সেই পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করি৷ তো আমি ভাইয়ার পাঠানো সেই ছোট্ট পিস্তলটা ব্লাউজের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতাম৷ পরেরদিন আমরা রওয়ানা করলাম৷ গ্রামের মেয়েদের মতো শাড়ি পরে খালি পায়ে আমি অন্যদের সাথে রিক্সায় উঠলাম৷ গুজাদিয়ার ঘাটে এসে নৌকায় উঠলাম৷ নৌকায় সাত দিন সাত রাত কাটিয়ে আমরা সিলেট সীমান্ত দিয়ে টেকেরঘাট পৌঁছি৷ সেখানে পৌঁছার পর দেখি ভাইয়া এসে হাজির৷ অথচ আমাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিল না৷ কিন্তু তারপরও কীভাবে ভাইয়া আমাদের খবর জানলেন সেটা এখনও একটা রহস্য বলে মনে হয়৷ এর মধ্যে ভাইয়া এক ভারতীয় মেজরকে বলে রেখেছিলেন যে, আমার পরিবারকে নিয়ে যাবো, একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবে৷ সে অনুসারে সেই মেজর একটি পিকআপ ভ্যান রেখেছিল আমাদের জন্য৷ কিন্তু পেছনে দেখি সিমেন্টের বস্তা ভর্তি৷ এটা দেখে প্রথমে আশ্চর্য হলেও পরে বুঝলাম যে, খুব উঁচু-উঁচু বোল্ডারের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটি যেন খুব বেশি লাফাতে না থাকে, সেজন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই সিমেন্টের বস্তা রাখা হয়েছিল৷ সেই পিকআপে করে আমরা বালাটে পৌঁছি৷''

Dr Sitara Rahman, Bir Protik und Freiheitskämpferin aus Bangladesch Datum: August 1971 Eigentumsrecht: Dr Sitara Rahman, Dhaka,  Bangladesch
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা করছেন ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান এবং অন্যরাছবি: privat

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য