সার্বিয়ার ওপর ন্যাটোর বিমান হামলার ১০ বছর
২৪ মার্চ ২০০৯উদ্দেশ্য ছিল কসোভোয় সংখ্যাগুরু আলবেনীয় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তখনকার ইউগোস্লাভ নেতা মিলোসেভিচের সেনাদেরশুদ্ধি অভিযানে বাধা দেয়া৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ফেডারেল জার্মানির সৈন্যরাও ন্যাটোর এই যুদ্ধ তৎপরতায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়৷
সার্বিয়ার ওপর দশ বছর আগের বিমান হামলায় জার্মানি সহ তখনকার ন্যাটো জোটের ১৯ সদস্য দেশের সকলেই অংশ নেয়৷ সার্বিয়ার সেনাদের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে ১৯৯৮ সালের শেষাশেষি কসোভোর তিন লাখ মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়৷ মিলোসেভিচ সরকারের নির্দেশিত শুদ্ধি অভিযান আটকাতে, কসোভোর জনগণকে রক্ষা করতে ন্যাটোর প্রিসিশন বোমাধারী বিমান ১০৪৮৪ বার অপারেশন চালায়৷ আর এই বিমান হামলায় যোগ দেয় জার্মানির টর্নেডো৷ হামলা শুরু হবার অল্প পরে তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্রোয়েডার সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্দেস্তাগে ঘোষণা করেন, কসোভোয় গুরুতর মানবাধিকার লংঘন থামাতে এবং সেখানে একটি মানবিক বিপর্যয় রোধ করতেই ন্যাটো জোটের এই পদক্ষেপ৷ তিনি বলেন: ‘‘আমরা সকলেই জানি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই প্রথম জার্মান সৈন্যরা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে৷ তাই আপনাদের এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজটা সহজ হয় নি৷ তবে জার্মান জনগণ এবং জার্মান বুন্দেস্তাগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সহমতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''
ফ্রান্সের রামবুইয়ে-তে সংকটের সমাধান অর্জনে মিলিত হন ইউগোস্লাভ সরকার, কসোভোর আলবেনীয় জনগোষ্ঠা ও ন্যাটোর প্রতিনিধিরা৷ সে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর ন্যাটো বেলগ্রেড ও অন্যান্য শহরে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর ওপর জঙ্গি বিমান থেকে বোমাহামলা শুরু করে৷ সার্বিয়া তথা ইউগোস্লাভিয়ার বিমানধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আটকাতে তৎপর হয় ১৮টি জার্মান টর্নেডো৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন যুদ্ধে জার্মান সৈন্যদের প্রথম অংশগ্রহণ এবং তাও জাতিসংঘের ম্যান্ডেট ছাড়া, জার্মানির রাজনৈতিক মহলে বিশেষ করে সবুজ দলের ভিতরে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে৷ ১৯৯৯ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত সবুজ দলের বিশেষ সম্মেলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়৷ বিক্ষুব্ধ পার্টি সদস্যরা সবুজ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ‘খুনী, খুনী' বলে শ্লোগান তোলেন৷ সবুজ দলের অনেক সদস্যই এসেছেন এক সময়কার শান্তি আন্দোলন থেকে৷ ফলে তাঁরা ছিলেন সামরিক শক্তি প্রয়োগের বিরোধী৷ সমালোচনার একেবারে কেন্দ্রভাগে ছিলেন সবুজ দলের শীর্ষ নেতা, তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়শকা ফিশার৷ এক বিক্ষোভকারী রংভরা ছোট পুঁটলি ছুঁড়ে মারেন তাঁর দিকে৷ ফিশার অবিলম্বে ন্যাটোর বিমান হামলা বন্ধের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন৷
১৯৯৯ সালের জুন মাসে মিলোসেভিচ নতিস্বীকার করেন৷ তাঁর সৈন্য সরিয়ে নিয়ে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন কেফর শান্তিবাহিনী মোতায়েনের পথ প্রশস্ত করেন৷ এখনও আড়াই হাজারেরও বেশি জার্মান সৈন্য কসোভোয় মোতায়েন৷ তবে ন্যাটোর আর এক সদস্য স্পেন সদ্য কসোভো থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে৷
লেখক: নিনা ভেয়ার্কহয়জার/আব্দুল্লাহ আল-ফারুক, সম্পাদক: আবদুস সাত্তার