সার্চ কমিটির তালিকায় নাম থাকা সুনাম না বদনাম?
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২তবে সবচেয়ে বড় কথা এই তালিকা থেকেই যে সার্চ কমিটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম পাঠাতে হবে তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷
এদিকে সার্চ কমিটি নাম প্রস্তাবের সময় ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে৷ এই সময়ের মধ্যে যেসব রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব করেনি তারা করতে পারবে৷ ওই দিনই সার্চ কমিটির মেয়াদ শেষ হবে এবং ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে৷
সার্চ কমিটিতে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান আমলারা রয়েছেন শীর্ষে৷ তাদের সংখ্যা ১০০ জন৷ দ্বিতীয় অবস্থান আছেন শিক্ষাবিদেরা ৬১ জন৷ বিচারক রয়েছেন ৩৮ জন৷ সাবেক সামরিক কর্মকর্তা আছেন ৩৮ জন, আইনজীবী ২৬ জন, মানবাধিকার কর্মী ১১ জন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা নয় জন৷ এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী, শিল্পপতি ও সাংবাদিকও আছেন৷
সোমবার এই তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পর কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘শুকরিয়া’ আদায় করে পোস্ট দিয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ এভাবে নাম প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন৷ কেউ বলেছেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়ে সারা জীবনের অর্জন খোয়াতে চাই না৷’’ আবার কেউ বলেছেন, ‘‘দায়িত্ব পেলে তা নিতে রাজি আছি৷’’ আরেকজন বলেছেন, ‘‘মানুষের ধারণা বদলে দিতে কাজ করবো৷’’
নানা মহলে কথা বলে জানা গেছে নাম প্রকাশ হওয়ার পর তো বটেই, নাম প্রকাশ হওয়ার আগেই কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পেতে নানাভাবে তদবির শুরু করেন৷ আর নাম প্রকাশের পর সেই তদবির আরো জোরদার হয়েছে৷ নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা তো কমিশনার পদে নিয়োগ পাবেন আশা করে চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন৷ তার নিয়োগ অবশ্য চুক্তিভিত্তিক ছিলো৷
সার্চ কমিটির তালিকায় থাকা সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘‘তালিকায় আমার নাম প্রকাশ হওয়ায় আমি বিব্রত৷ আমার নাম কে দিয়েছেন তাও আমি জানি না৷ আমরা অনুমতিও নেয়া হয়নি৷ এতে ব্যক্তি হিসেবে আমাকে বিব্রত করা হয়েছে৷ আবার একটি সাংবিধানিক পদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয়েছে৷’’
তার মতে, ‘‘এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম পাঠানো হবে তার মধ্যে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন৷ এখন তাদের ১০ জনের নাম যদি আগেই আবার প্রকাশ করা হয় তাহলে যে পাঁচজন নিয়োগ পাবেন না তারা একটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়বেন৷ সামাজিকভাবে তারা হেয় হতে পারেন৷’’
সার্চ কমিটি ব্যক্তি, সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নাম নিয়েছে৷ কিন্তু এখান থেকেই যে তাদের ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে তা নয়৷ এমনও হতে পারে এখান থেকে কারোর নামই ওই প্রস্তাবে নাও থাকতে পারে৷ তাহলে এদের নাম প্রকাশ করে তাদের বিব্রত করার এই প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মনে করেন৷ তার কথা, ‘‘যার নাম প্রস্তাব করা হবে সঙ্গে তার সম্মতিপত্র দিতে হবে৷’’
তবে সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘তালিকায় আমার নাম প্রকাশ করায় আমি বিব্রত নই৷ তবে আমি নির্বাচন কমিশনে যেতে আগ্রহী না৷ নাম প্রকাশের পর তা জানিয়ে দিয়েছি৷’’
নাম প্রকাশে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই৷ এটার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে৷ আমি তো যারা নাম প্রস্তাব করেছেন তাদের তালিকাও প্রকাশের দাবি করেছি৷’’
তিনি বলেন, সার্চ কমিটি এই তালিকা থেকেই যে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম পাঠাতে বাধ্য তা নয়৷ তারা তালিকার বাইরে থেকেও নাম পাঠাতে পারেন৷ তবে এর মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে৷ দেশের মানুষ জানতে পারবে কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো এবং কাদের নির্বাচন কমিশনে নেয়া হয়েছে৷ তারা তুলনা করতে পারবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তাই সার্চ কমিটি সর্বশেষ যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের নামও প্রকাশ করতে হবে৷’’
কেউ কেউ সার্চ কমিটিতে নাম প্রকাশ করিয়ে প্রচার প্রচারণায় ব্যবহার করছেন এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এরকম হতেই পারে৷ এতে কোনো ক্ষতি হয়েছে? সঠিক লোক নিয়োগই আসল কথা৷’’
এপর্যন্ত মধ্যে ২৫টি রাজনৈতিক দল, ছয়টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে নাম জমা দিয়েছেন৷ বিএনপি ও সিপিবিসহ ১৫টি দল নাম জমা দেয়নি৷ তারপরও যেসব দল বাকি রয়েছে, তাদের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে৷
এদিকে হুদা কমিশন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার শূন্য আছে৷