1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কমছে পাখি, বাড়ছে দালানকোঠা

২২ জানুয়ারি ২০১৯

পাখি কমছে কেন? কীভাবে পাখিদের আবাসস্থল বাড়ানো যায়? কি করলে পাখির সংখ্যা বাড়তে পারে? এসব বিষয়ে এবার ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল-হক৷

https://p.dw.com/p/3BvEi
Bangladesch Zugvögel in Tanguar Haor in der Provinz Sunamganj
ছবি: DW/M.M. Rahman

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে কত প্রজাতির পাখি আছে?

ইনাম আল-হক: বাংলাদেশে ৭০০ প্রজাতির পাখি আছে৷

এর মধ্যে দেশি পাখির সংখ্যা কেমন?

দেশি-বিদেশি নয়, যে পাখি একদিন এদেশে দেখা যায়, সেটাও এদেশের পাখি৷ কিছু পাখি এ দেশে সারা বছর থাকে, কিছু থাকে না৷ পাখি এরকমই হয়৷ পাখির খাবার সারা বছর এক মহাদেশেও হয় না৷ কিছু পাখি আছে গ্রীষ্মে বা শীতে খাবারের জন্য একেক জায়গায় থাকে৷ আবার প্রজননের জন্য আলাদা জায়গায় থাকে৷ তাহলে কোন পাখি কোন দেশের? সারা বিশ্ব যেটি মেনে নেয়, সেটি হলো, পাখিরা একদিনের জন্য যে দেশকে নিয়মিত ব্যবহার করে, পাখিরা সেই দেশের৷ এক পাখি বহু দেশের হতে পারে৷ যেমন ধরেন, সুমচাও নামের পাখি গ্রীষ্মে বাংলাদেশে জন্মায়, শীতে তাদের কিন্তু খাবার নেই, তাই তারা দক্ষিণে, যেমন মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় চলে যায়৷ আবার তারা গ্রীষ্মে এই দেশে ফিরে আসে৷ এই পাখি তাহলে কোন দেশের? এটা বাংলাদেশেরও, মালয়েশিয়ারও৷ আবার অনেক পাখি আছে যারা শীতে বাংলাদেশে আসে৷ এরপর প্রজননের জন্য হিমালয়ে চলে যায়, তিব্বতে চলে যায় বা তুন্দ্রা অঞ্চলে চলে যায়৷ তারা কি তাহলে বাংলাদেশের পাখি নয়? অবশ্যই বাংলাদেশের পাখি৷ ওরা সাইবেরিয়ারও পাখি৷ এই হিসেবে আমাদের যে ৭০০ প্রজাতির পাখি আছে, এর মধ্যে সাড়ে ৩শ' প্রজাতির পাখি সারা বছর বাংলাদেশে থাকে না৷

শীতের মৌসুমে তো অনেক পাখি বাংলাদেশে আসে৷ এই ধরনের কত প্রজাতি আছে যারা একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে বাংলাদেশে আসে? 

প্রায় সাড়ে ৩শ' প্রজাতির পাখি শীতে বাংলাদেশে থাকে, কিন্তু প্রজনন করে না৷ প্রজননের সময় হলো উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্ম৷ তখন তারা উত্তরে চলে যায়৷ হিমালয়, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া বা আরো উত্তরে সাইবেরিয়ায় চলে যায়৷ আর ১০ থেকে ১২ প্রজাতির পাখি আছে, যারা গ্রীষ্মেই শুধু বাংলাদেশে থাকে, শীতে এখানে থাকে না, দক্ষিনে চলে যায়, যেখানে শীতেও কিছুটা আর্দ্র৷

ইনাম আল হক

বিশেষ সময়ে বাংলাদেশে আসা পাখির সংখ্যা কমছে, নাকি বাড়ছে?

কমে যাচ্ছে, কারণ, সারা বিশ্বেই পাখির সংখ্যা কমছে৷ তবে এক বছরের চেয়ে আরেক বছর বেশি হতে পারে৷ আমরা এবার যে গণনা করেছি, তাতে দেখা যাচ্ছে গত বছরের চেয়ে এবার পাখির সংখ্যা বেশি হবে৷ কিন্তু আমরা যদি গত ৩০ বছরের হিসাব করি, তাহলে ট্রেন্ডটা কমতির দিকেই৷

কেন কমে যাচ্ছে?

বাংলাদেশে কমে যাচ্ছে, কারণ, সারা বিশ্বেই কমে যাচ্ছে৷ গত ৩০ বছরের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বেই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ আর আমরা এশিয়া মহাদেশে হিসাব করে দেখেছি, এ অঞ্চল অনেক বেশি উন্নত হচ্ছে৷ উন্নত বলতে আমরা বুঝছি, এখানে রাস্তাঘাট হচ্ছে, দালানকোঠা হচ্ছে৷ ফলে পাখির বসবাসের জায়গা কমে যাচ্ছে৷ আমাদের যেমন বসবাসের জায়গা লাগে, তেমনি পাখিরও বসবাসের জায়গা লাগে৷ পাশাপাশি আমরা যে পরিবেশ দূষণ করছি, তার কারণে অনেক পাখি মারা যাচ্ছে৷ মোট কথা, সবাই ধরে নেয়, পাখি কমে যাচ্ছে তাদের জায়গা কমে যাচ্ছে৷ তাদের তো প্রজননের জায়গা লাগে, থাকার জায়গা লাগে৷

বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে পাখি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়?

যেখানে মানুষের বসতি কম, সেখানেই পাখির বসবাস বেশি৷ যেমন ধরেন, উপকূলে মানুষের বসতি কম, কারণ, সেখানে মানুষ বসবাস করতে পারে না৷ সেখানে পাখির বসতি বেশি৷ আবার সিলেটের বিস্তীর্ন হাওরঞ্চালে মানুষের পক্ষে বসবাস করা কঠিন, সেখানেও পাখির বেশি বসবাস৷ অর্থাৎ, যেখানে মানুষের বসবাস বা চলাফেরা কম সেখানেই পাখির বসবাস বেশি৷

পাখির অভয়ারণ্যের জন্য সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?

বাংলাদেশের সরকার কিছু শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই এখনো কিছু পাখি টিকে আছে৷ এ ব্যাপারে সরকারের প্রশংসা না করলেই নয়৷ কিছু এলাকায় সরকার মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করেছে৷ হাওরাঞ্চলের কিছু এলাকা সংরক্ষিত করেছে৷ কিছু বন সরকার সংরক্ষিত করেছে৷ ফলে সেখানে কিছু পাখি বসবাস করতে পারছে৷ সুন্দরবনকে সরকার সংরক্ষিত করেছে৷ আমি প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেখেছি, তারা কিভাবে তাদের ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে নষ্ট করে সেখানে লবণ চাষ করছে৷ কিন্তু আমাদের সরকার সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে৷ আমরা কিন্তু আমাদের সুন্দরবনকে নষ্ট করিনি৷ কিছু কিছু যে নষ্ট হয়নি, তা নয়৷ মানুষ সেখানে ঢুকছে৷ কিন্তু সরকারের তরফ থেকে আমরা দেখছি, গত ৪০ বছরে সরকার এটিকে রক্ষা করারই চেষ্টা করছে৷ আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গেও যান, সেখানে দেখবেন সুন্দরবনের মধ্যেও মানুষের বসতি আছে৷ কিন্তু আমাদের দেশে এত মানুষের বাস, তারপরও সুন্দরবনের মধ্যে সরকার কাউকে বসতি গড়তে দেয়নি৷ খালি সমালোচনা করলেই হবে না, ভালো দিকগুলোও বলতে হবে৷ যদিও হয়ত যথেষ্ট করা হচ্ছে না, আমরা হয়ত আরো বেশি চাই, তারপরও সরকার যেটা করছে, সেটা অনেক৷

বাংলাদেশে কি পাখির অভয়ারণ্য আছে?

সরাসরি অভয়ারণ্য নাম দিয়ে হয়ত নেই৷ তবে ৪০টি সংরক্ষিত বন আমাদের আছে৷ সেখানে কেউ চাইলেও বাড়ি করতে পারে না৷ কেউ পাখি, পশু পাখি মারতে পারে না৷ রক্ষিত এলাকা হলে সেখানে সব পশুই রক্ষিত৷ সেখানে সবাই নিরাপদ৷ যেমন, সুন্দরবন সংরক্ষিত৷ সেখানে বাঘ মারা যাবে না৷ তার মানে কি পাখি মারা যাবে? কেউ আপনাকে কিছু বলবে না? আসলে তা নয়, যেখানে সংরক্ষিত, সেটা সবার জন্য রক্ষিত৷ বাঘও যেমন রক্ষিত, সেখানে পাখিও রক্ষিত৷

এই রক্ষিত জায়গায়গুলোতে পাখির থাকা বা প্রজননের ভালো বন্দোবস্ত আছে?

দেখেন পাখি তো একটা বন্য প্রাণী৷ যদি ভালো পরিবেশ থাকে, তাহলে সবকিছুই সে নিজে করবে৷ তার খাবার আপনাকে দিতে হবে না, তার থাকার ব্যবস্থা আপনাকে করতে হবে না, সে নিজেই করে নেবে৷ কোনো বন্য প্রাণীর জন্যই তা করে দিতে হয় না৷

পাখির প্রতি সাধারণ মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?

আগে আমাদের আচরণ খুবই খারাপ ছিল৷ এটা আমাদের ঐতিহাসিক কারণ৷ আমাদের থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী যাঁরা, তাঁরা কিন্তু পাখির প্রতি বা যে কোনো প্রাণীর প্রতি একটু সহানুভূতিশীল ছিল৷ কিন্তু আমরা মনে করতাম, এটা প্রকৃতি দিয়েছে আমাদের খাবারের জন্য৷ একশ' বছর আগেই এখানকার মানুষ ওভাবে চিন্তা করত না৷ গত ৫০ বছরে এই ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ এখন অনেকেরই পাখির প্রতি মমতা বা ভালোবাসা তৈরি হয়েছে৷ এখন কিন্তু বন্য পাখি ধরে আপনি কোথাও বিক্রি করতে পারবেন না৷ এটা কিন্তু প্রশাসন বন্ধ করেনি৷ সাধারণ মানুষই বন্ধ করে দিয়েছে৷ ঢাকায় আগে খাঁচার মধ্যে পাখি বিক্রি হতো৷ এখন কিন্তু সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে৷ শিক্ষিত মানুষ সচেতন হয়েছেন৷ আমাদের দু'টো জিনিস ভালো হয়েছে, একটা মানুষ সজাগ হয়েছে আর দ্বিতীয়টা হলো সরকারি পদক্ষেপগুলো ভালো হয়েছে৷

সাক্ষাৎকারটি কেমন লাগলো জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য