সামরিক কমান্ডারের হত্যার পর লিবিয়ার বিদ্রোহী শিবিরে সংকট
২৯ জুলাই ২০১১ইউনেস'এর পরিচয় ও তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য
১৯৬৯ সালে যে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি ক্ষমতা দখল করেছিলেন, তাতে ইউনেস'ও জড়িত ছিলেন৷ পরে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হন৷ বেনগাজি থেকে বিদ্রোহীদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তিনি প্রায় ৮,০০০ সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে গাদ্দাফি-বিরোধীদের শিবিরে চলে আসেন এবং তাঁকে বিদ্রোহীদের সামরিক কমান্ডার হিসেব নিযুক্ত করা হয়৷ সম্প্রতি তাঁকে গাদ্দাফি প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্রেগা পাঠানো হয়েছিল৷ আচমকা তাঁকে বেনগাজি'তে তলব করা হয়৷ বৃহস্পতিবার শোনা গিয়েছিল যে তাঁকে আটক করা হয়েছে৷ তারপর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিরোধীরা জানায়, দুই দেহরক্ষী সহ তাঁকে হত্যা করা হয়েছে৷ বিদ্রোহীদের নেতা মুস্তফা আব্দেল জলিল জানান, ইউনেস তাদের সামনে হাজির হওয়ার আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়৷ শুক্রবার ইউনেস'এর অনুগামীরা তাঁর বুলেট-বিদ্ধ মরদেহ কফিনে করে বেনগাজির কেন্দ্রীয় চত্বরে নিয়ে এসেছে৷ বুলেট ছাড়াও শরীরের কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে তাঁর এক আত্মীয় দাবি করেছেন৷ তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ ইউনেস টেলিফোনে নিজের ফেরার কথা জানিয়েছিলেন৷ তারপর বেনগাজিতেই তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়৷ ইউনেস'এর পরিবার অবশ্য বিদ্রোহী নেতা জলিলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে৷
হত্যাকাণ্ডে কে বা কারা জড়িত?
একদল মনে করছে, বিদ্রোহীদের শিবিরেই ফাটল দেখা দিয়েছে৷ অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে আব্দেল ফাতাহ ইউনেস'কে হত্যা করা হয়েছে৷ অথবা গাদ্দাফি প্রশাসন প্রতিশোধ নিতে ত্রিপোলি থেকে হত্যাকারী পাঠিয়েছে, এই অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ তাছাড়া এর মাধ্যমে বিরোধীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছে অনেকে৷ বিদ্রোহীদের মধ্যে গাদ্দাফির অনেক চর লুকিয়ে রয়েছে বলে শুরু থেকেই সন্দেহ করা হচ্ছিল৷ ইউনেস'এর হত্যার খবর পেয়ে ত্রিপোলিতে উল্লাসের খবর পাওয়া গেছে৷
বিদ্রোহীদের সংগ্রামের উপর প্রভাব
লাগাতার হামলা সত্ত্বেও গাদ্দাফি প্রশাসন ত্রিপোলি সহ দেশের একাংশের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে ঠিকই, কিন্তু বিদ্রোহীদের সামরিক অভিযান আগের তুলনায় স্থায়ী সাফল্য অর্জন করতে পারছে৷ দেশের পশ্চিমে তারা আরও এলাকা দখল করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে তারা আরও স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে৷ গাদ্দাফির সঙ্গে আলোচনা এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ হওয়ায় রমজান মাসেও যুদ্ধ চালাবার জন্য তারা প্রস্তুত হচ্ছিল৷ অর্থাৎ গাদ্দাফির প্রস্থানের সময় এগিয়ে আসছে, ঠিক এমন এক অবস্থায় ইউনেস'এর মৃত্যু বিরোধীদের জন্য মোটেই সুবিধাজনক হবে না বলে মনে করা হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক