1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাত দিনে আড়াই কেজি চাল, দুই কেজি চিড়া

১৮ আগস্ট ২০১৭

উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বাড়ছে মধ্যাঞ্চলে৷ সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্যার্তদের কষ্ট৷ ত্রাণের অপ্রতুলতা ও আশ্রয়ের অভাব তাঁদের জীবনকে করেছে দুর্বিষহ৷ বাঁধ ও উঁচু সড়কে ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা৷ কিন্তু বিপদ সেখানেও৷

https://p.dw.com/p/2iTAk
কুড়িগ্রামের বন্যার্তরা ত্রাণের অপেক্ষায়ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Asad

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাট৷ রাজধানী ঢাকা থেকে চারশ' কিলোমিটারেরও বেশি দূরে৷ সেখানে ধরলা নদীর কাছেই তুলার হাট গ্রাম৷ উঁচু সড়কের কারণে কয়েকদিন ঐ গ্রামে পানি ঢুকতে পারেনি৷ কিন্তু ১২ আগস্ট পানির চাপে সেই সড়কের একাংশ ভেঙে গিয়ে তুলার হাটসহ আশেপাশের সব গ্রাম তলিয়ে যায়৷  কেউই তাঁদের ঘরবাড়ি, ধান চাল, ফসলের ক্ষেত, গবাদি পশু-পাখি কিছুই রক্ষা করতে পারেননি৷ জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন ঐ সড়কেরই উঁচু অংশে৷ কয়েক কিমি. সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশ' পরিবার৷

কিন্তু সড়কের ওপরেও যে পানি! তার ওপরেই চকি পেতে বা মাচা বেঁধে তাঁরা বসবাস করছেন গত সাত দিন ধরে৷ সেখানেই এখন আশ্রয় নেয়া ফরহাদ রেজা লালমনিরহাট কলেজের ছাত্র৷ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মা-বাবা ও ভাই-বোনসহ পাঁচজন ১২ তারিখ থেকে চকি পেতে রাস্তার ওপর আছি৷ সেই থকে আজ পর্যন্ত ত্রাণ হিসেবে আমরা পেয়েছি আড়াই কেজি চাল, দুই কেজি চিড়া ও আধা কেজি ডাল৷ আর কিছু না৷ আমাদের ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু সব ভেসে গেছে৷ কিছুই রক্ষা করতে পারিনি৷ দিনে এখন বড় জোর একবেলা খেতে পারি৷’’

মা-বাবা ও ভাইবোনসহ পাঁচ জন ১২ তারিখ থেকেই চকি পেতে রাস্তার ওপর আছি: ফরহাদ রেজা

তিনি আরো জানান, ‘‘এখানে প্রায় হাজার খানেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে৷ সবার অবস্থা একই৷ দিনে না খেয়ে থাকে তারা৷ আর রাতে সাপ-পোকা মাকড়ের আতঙ্কে থাকতে হয়৷ নারী ও শিশুরা আছে আরো কষ্টে৷ শিশুদের খবার নেই৷ বৃষ্টি হলে কষ্ট বেড়ে যায়৷ পলিথিনে বৃষ্টি থেকে বাঁচা যায় না৷ এখন পানি কমতে শুরু করেছে বটে, কিন্তু আমাদের কষ্ট কমার কোনো লক্ষণ নেই৷’’

একই ধরনের করুন গল্প কুঁড়িগ্রামের হাসেম আলির৷ লালমনির হাট থেকে ৫২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান এই উত্তরের জেলার৷ ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ' কিমি. উত্তরে এই জেলাটি৷ সেখানে যাত্রাপুর বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে কয়েকশ' পরিবার৷ হাসেম আলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বড় কষ্টে আছি৷ খাওয়া-দাওয়ার অনেক কষ্ট৷ ১০ জনের পরিবার নিয়ে বাঁধের ওপরই আছি গত ১০ দিন ধরে৷ এই বাঁধ কখন ভেঙে যায় সেই আতঙ্কে আছি৷ ১০ কেজি চাল পেয়েছি আর কিছু না৷ কীভাবে দিন কাটবে কিছু জানি না৷’’

১০ কেজি চাল পেয়েছি আর কিছু না: হাসেম আলি

তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এখন আর কিছুই নাই৷ যা ছিল সব কিছু পানিতে ভেসে গেছে৷’’

দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও, ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে৷ এই পানি কমা মানে নয় যে, বন্যার পানি চলে গেছে৷ একটু একটু করে পানি কমছে৷ বানভাসি মানুষ কবে বাঁধ বা সড়কের আশ্রয় ছেড়ে নিজের ভিটেয় ফিরতে পারবেন, তা এখনো বলা যাচ্ছে না৷

এছাড়া উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কিছুটা নামতে শুরু কলরেও, নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চল বলে পরিচিত ফরিদপুর, রাজবাড়ি, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুরের নিম্নাঞ্চল৷ এ সব জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ অমাবস্যার প্রভাবে আসা অতিমাত্রার জোয়ার উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরের দিকে নেমে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে৷ মধ্যাঞ্চলে থমকে যাচ্ছে পানির তোড়৷ এ বন্যা সর্বোচ্চ ১৫ দিন থাকতে পারে বলেও সতর্ক করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র৷

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের ছোট বড় ২৯টি নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে শুক্রবারও পানি বেড়েছে৷ ব্রহ্মপুত্র নদীর পানিও আরো ৩-৪ দিন বাড়বে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে এ পর্যন্ত বন্যায় ১০৭ জন মারা গেছেন৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দেশের ২২টি জেলার ৯৬টি উপজেলা বন্যা কবলিত৷ আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ৷ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৭৩ হাজার৷ নষ্ট হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ২৭০ হেক্টর জমির ফসল৷

হামলার সময় তারা বলে দেশে কোনো বন্যা নেই, তোরাই বন্যার গল্প বানাচ্ছিস: ডা. ইমরান

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রণালয়ের দাবি, প্রতিদিনই বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে৷ প্রতিটি জেলায় নিজস্ব মজুদও রয়েছে৷ এরপরেও প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকেদের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ৷ দুর্গতদের গত কয়েকদিনে এক হাজার ৩৬৫ মেট্রিকটন চাল এবং ৬৯ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে৷ বন্যা কবলিত এলকায় এক হাজার ৮২৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে৷

এদিকে বন্যাদুর্গতদের সহায়তার জন্য শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের র‌্যালিতে বৃহস্পতিবার হামলা করেছে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী৷ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের ওপর বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারও হামলা হয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলার সময় তারা বলে ‘দেশে কোনো বন্যা নেই, তোরাই বন্যার গল্প বানাচ্ছিস৷’’ এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, এই সরকার বন্যাকে অস্বীকার করতে চাইছে৷ মানুষের মৃত্যুকে অস্বীকার করতে চাইছে৷ এটা ফ্যাসিবাদী চরিত্র ছাড়া আর কিছুই না৷ যাঁরা বন্যার্তদের সহায়তা করছেন, সহায়তা করতে চাইছেন, তাঁদের ওপর হামলা করছে তারা৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...