সাগর-রুনি হত্যা
৪ মার্চ ২০১২গত ১০ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সাগর সরওয়ার এবং মেহেরুন রুনিকে হত্যার পর এখনও খুনিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷ তাই দিন দিন এই ঘটনা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে৷ কেবল দেশে নয় বিদেশেও এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে৷ নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ এই অবস্থায় প্রবাসী বাঙ্গালীরাও এই ঘটনার বিচারের জন্য সোচ্চার হয়েছে৷ ইউরোপ অ্যামেরিকার বেশ কয়েকটি জায়গায় এখন পর্যন্ত প্রবাসীরা এই হত্যার বিচার দাবিতে কর্মসূচী পালন করেছে৷ শনিবার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে সাগর-রুনির শোকসভা পরিণত হয় প্রতিবাদ সভাতেও৷ এতদিন পরও পুলিশ হত্যাকারীদের কোন খোঁজ না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তাদের একজন লিপি আহমেদ৷ হ্যানোভার থেকে তিনি ছুটে গিয়েছেন এই সভায় যোগ দিতে৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছুদিন আগে বলা হলো যে আমরা সব রহস্য উদ্ধার করে ফেলেছি৷ তারপর কিন্তু আর কোন কিছু বলা হচ্ছে না৷ তাই স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন চলেই আসে যে আসলে কী লুকানো হচ্ছে? আমরা কিন্তু এই ঘটনার পেছনে সব কিছু জানতে চাচ্ছি৷ আমরা চাই না সাগর রুনির মত আর কোন ঘটনা ঘটুক৷''
লিপি আহমেদের মত আরও অনেক বাঙ্গালী ফ্রাঙ্কফুর্টের এই সভায় যোগ দেন যারা অন্যান্য শহরে বাস করেন৷ অনেক অবাঙ্গালী এসে এতে সমবেদনা জানিয়েছেন৷ তাদের একজন ভারতের আনোয়ার জামাল আশরাফ৷ সাগর সরওয়ার সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘‘তিনি একজন বড় সাংবাদিক ছিলেন, এই কারণেই বিশ্বের অনেক বড় বড় সংবাদ মাধ্যমেও এই খবরটি জায়গা পেয়েছে৷ যেমন ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্টের কথা বলতে পারি৷ তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, ঘটনার পর বাংলাদেশের সরকার দুই দিনের কথা বললো, অথচ ২২ দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও তারা কিছুই করতে পারে নি৷''
সাগর-রুনির এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে নতুন করে একটি সামাজিক আন্দোলনের কথা ভাবছে প্রবাসী বাঙ্গালীরা৷ এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাজহারুল ইসলাম রানা বললেন, ‘‘প্রবাসী বাঙ্গালিরা এই হত্যাকাণ্ডকে বিশেষভাবে দেখতে চায় কারণ এই ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন না৷ তাছাড়া সাগর আমাদের অনেক ঘনিষ্ঠ ছিল৷ তাই এই ধরণের ঘটনা ঘটলে তার পরিবার ও স্বজনদের ওপর কী অবস্থা নেমে আসে তার কিছুটা এখন আমি টের পাচ্ছি৷ এই সমস্যাটা একদিনে তৈরি হয়নি বাংলাদেশে৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য আগে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে৷ তবে এই পরিবর্তন আনতে সময় লাগবে৷ কিন্তু আমরা শুরু করেছি এবং একটা ফলাফল নিয়ে আসবো৷''
সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর কেবল বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়ে গেছে৷ এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে প্রবাসী বাঙ্গালীদের দল-মত নির্বিশেষে অংশগ্রহণ প্রয়োজন৷ বাংলাদেশের সাংবাদিক মহলের মত দ্বিধাবিভক্তি এড়াতে পারলে প্রবাসীদের পক্ষে একটি ভালো ফল নিয়ে আসা সম্ভব হবে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী