সাকিব, মুশফিক বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, সুতরাং...
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭প্রথম ইনিংসে ভারতের ৬৮৭ রানের নিচে চাপা পড়া রুখতে ভালোই লড়ছিলেন সাকিব-মুশফিক৷ ১০৭ রানের জুটিটাকে আরো টেনে নিতে পারলে ফলো-অন এড়ানো হয়ত সহজ হতো৷ কিন্তু ৮২ রান করেই অশ্বীনকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন সাকিব৷ কয়েক দিন আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ঠিক এমনই করেছিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক৷ ওয়েলিংটনে ডাবল সেঞ্চুরির পরের ইনিংসেই খামোকা ছক্কা মারতে গিয়ে বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজের উইকেট৷ যে ম্যাচে অন্তত ড্র নিশ্চিত ছিল, কোনো রান না করে সাকিব ওভাবে আউট হওয়ায় সেবারও স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের৷
এবারও প্রায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি৷ হায়দ্রাবাদ টেস্টেও ব্যাট হাতে দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তটিতে নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ সাকিব৷ ওয়ানডের মেজাজে টেস্ট খেলতে গিয়ে সেঞ্চুরির আশা জলাঞ্জলি তো দিলেনই, দলকেও ফেললেন ঘোরতর বিপদে৷
যৌক্তিক কারণেই চলছে সমালোচনা৷ পাশাপাশি পরামর্শও দিয়েছেন অনেকে৷ ওয়ানডের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক এবি ডিলিভিয়ার্স যে দলের স্বার্থে টেস্ট ক্রিকেটে খুব ধীর লয়ে ব্যাট করেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে তিনি যে ২৯৭ বলে ৪৩ রান করেছিলেন সে কথা মনে করিয়ে দৈনিক প্রথম আলো'র এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়েছে, ‘‘ডি ভিলিয়ার্স হতে পারবেন সাকিব?''
ম্যাচের তৃতীয় দিনেই সাকিব জানিয়েছিলেন, তিনি সহজাত ঢংয়ে খেলে যেতে চান৷
প্রথম ইনিংসে সাকিব ৮২ করে আউট হয়ে গেলেও দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক৷ তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ব্যাটিংটাও অধিনায়কোচিত হয়নি৷ এবার তিনি ছক্কা মারতে গিয়ে আউট৷ এবং তারপর সেই ওয়েলিংটনের মতোই সামান্য প্রতিরোধ এবং অবশেষে বাংলাদেশ দলের অসহায় আত্মসমর্পণ৷
ভারত সফরে পরাজয় এড়ানো সব দলের জন্যই কঠিন৷ বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগও ছিল৷ সুযোগকে সাফল্যে রূপান্তরিত করতে সাকিব, মুশফিকদের মতো ক্রিকেটারদেরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে হয়৷ এ যাত্রা তাঁরা তা পারেননি৷ তাতে যাঁরা বেশি হতাশ, তাঁরা হয়ত ভুলে যাচ্ছেন, বাংলাদেশের পরাজয়ে সাকিবের যন্ত্রণা কারো চেয়ে কম নয়৷ তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পরের সাকিবের সেই কান্না৷
তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ক'দিন আগেই ভাঙা আঙুল, ভাঙা হাত, মাথায় বাউন্সারের আঘাত নিয়েও দেশের জন্য কী বীরের মতো লড়েছেন মুশফিক!
তাঁদের হাত ধরেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট৷ তাঁদের হাত ধরে আরো এগোবে৷ দু-এক ম্যাচে এক বলের জন্য কখনো কখনো সাকিব, মুশফিক হয়তো ভুলে যান ষোল কোটি মানুষ যাঁদের দিকে তাকিয়ে, তাঁদের দায়িত্বটা কত বড়! এবি ডিভিলিয়ার্সের এত পরিণত হতে প্রায় ১২ বছর লেগেছে৷ বাংলাদেশের সাকিব-মুশফিক-তামিমরাও এখন যথেষ্ট পরিণত৷ দেশকে তাঁরা ভালোবাসেন৷ তাঁরা খুব ভালো করেই জানেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আদতে মসৃণ মাঠের খেলা নয়৷ সেখানে ব়্যাংকিংয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে সব বিচারে সেরা হতে যে খেলার দাবি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে হয়, তাঁরা নিশ্চয়ই জানেন সেটা৷ ভবিষ্যতের পারফরম্যান্সে নিশ্চয়ই আমরা তা দেখতে পাবো৷