1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব চাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র আছে’

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট চিঠি দিয়ে তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে ১১ জন সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব চেয়েছে৷ এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই পন্থি সাংবাদিক নেতারাই আছেন৷

https://p.dw.com/p/40kNQ
ছবি: DW

এই চিঠি দেওয়ার পর থেকে আন্দোলন করছেন সাংবাদিক নেতারা৷ সরকার তো যে কারও ব্যাংক হিসাব চাইতেই পারে? তাহলে আন্দোলন কেন? ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এসব প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন৷

ডয়চে ভেলে : সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করায় আপনারা এত ক্ষুব্ধ কেন? যে কারো ব্যাংক হিসাব তো সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক চাইতেই পারে?

ফরিদা ইয়াসমিন : সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ সেটা কিন্তু ঠিক না৷ আমরা প্রথমদিন থেকেই বলছি, যে কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব চাইতেই পারে৷ তবে যে কোন মানুষের ব্যাংক হিসাব চাওয়া যাবে না৷ তার বিরুদ্ধে সন্দেহ থাকতে হবে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে৷ আমাদের ব্যাংক হিসাব চাইতে পারে তাতে কোন আপত্তি নেই, আমাদের কারও তাদের সন্দেহ হতে পারে তাতেও আপত্তি নেই৷ কিন্তু কথা হল, একটি নির্দিষ্ট পেশার প্রতিটি সংগঠনের শীর্ষ নেতার, সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, সেক্রেটারি, সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর (দুই গ্রুপ) সভাপতি, সেক্রেটারি সবমিলিয়ে ১১ জন নেতার ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়েছে৷ তফসিলি ব্যাংকগুলোতে যখন এই চিঠিটা যায় তখন খটকা লাগে, ব্যক্তি হিসেবে হিসাব না চেয়ে সংগঠনের পরিচয়ে কেন চাওয়া হয়েছে? এটা উদ্দেশ্যমূলক৷ কে কোন মতাদর্শের সেটাও চিঠির পাশে উল্লেখ করা হয়েছে৷ সুতরাং আমরা মনে করি, এর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে৷

‘সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য অতিউৎসাহী কোনো মহল এই ঘটনা ঘটিয়েছে’

আপনারা কী মনে করছেন, কেন এই হিসাব চাওয়া হলো?

কেন চাওয়া হলো, এই প্রশ্নটা আমাদেরও৷ এর কোনো উত্তর আমরাও খুঁজে পাচ্ছি না৷ সাংবাদিকদের অভিভাবক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও কিন্তু ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অনুষ্ঠানে এসে সরাসরি বলেছেন, তিনি এই চিঠির ব্যাপারে কিছুই জানেন না৷ তিনি পত্রিকায় দেখেছেন৷ আমাদের দু'একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনিও বলেছেন কিছুই জানেন না৷ কেন এই চিঠি, এর উত্তর জানার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কেউ কিছুই জানে না৷ আমি এর কোন সদুত্তর খুঁজে পাইনি৷ আমার মনে হয়, এটা একটা ষড়যন্ত্র৷ সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টির জন্য অতিউৎসাহী কোনো মহল এই ঘটনা ঘটিয়েছে৷

এই হিসাব চাওয়ার মধ্য দিয়ে সরকার বা সরকারি কোনো সংস্থা সাংবাদিকদের বিশেষ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে কী?

আমরা যতটুকু জেনেছি, সিআইডি এই চিঠি দিয়েছে৷ আমরা জানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে সিআইডি যৌথভাবে কাজ করে৷ সিআইডি যে চিঠি দিয়েছে সেখানে তাদের ভাষা ছিল, সন্দেহভাজন এই ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তারা চায়৷ এখানে আইনে কিন্তু দু'টি বিষয় উল্লেখ আছে৷ এক. তার একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে এবং দুই. জঙ্গিদের অর্থায়নে এই অর্থ কাজ করেছে বা মানি লন্ডারিং হয়েছে৷ তাহলে আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হল৷ প্রমাণ না হলেও অভিযোগের তীর আমাদের দিকে ছোড়া হল৷ এখন প্রশ্ন হল, নির্বাচিত ১১ জন নেতা সবাই কী এর সঙ্গে জড়িত? এমন একটি ঢালাও চিঠি দেওয়ার প্রতিবাদ আমরা করছি৷ আমরা মনে করি, সরকারের সঙ্গে সাংবাদিকদের দূরত্ত তৈরীর একটা চেষ্টা৷

আপনারা কী এই হিসাব চাওয়ায় ভীত? আপনি হয়ত আপনার একাউন্টের হিসাব জানেন, কিন্তু অন্য কারও একাউন্টে কী অস্বাভাবিক লেনদেন হতে পারে না?

আমি অন্যের দায়িত্ব নিচ্ছি না৷ আমি আমার কথা বলছি৷ সন্দেহ যে কারও বিরুদ্ধে হতে পারে৷ কিন্তু আপনার কী মনে হয়, সব নেতার হিসেবে গড়মিল থাকতে পারে? এজন্য তো প্রাথমিক তদন্ত হওয়া উচিৎ৷ যখন সবার হিসাব চাওয়া হয় তখন তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়৷

এই ১১ জন নেতার মধ্যে যদি কারও একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া যায়, তখন আপনাদের অবস্থান কী হবে?

কেউ তো আইনের উর্ধ্বে না৷ কারও বিরুদ্ধে পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে৷ তখন তো আমরা এর প্রতিবাদ করব না৷ এখন যেটা হয়েছে, সবাইকে এক কাতারে অপরাধী চিন্তা করা হচ্ছে৷ এখানে একটু সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল৷ আমি ধন্যবাদ দেব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে৷ তিনি বলেছেন, এখানে মিস ম্যানেজমেন্ট হয়েছে৷ এখানে সবাই সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি৷ এই কারণে এখানে আরও সতর্কতার সঙ্গে, সাবধানতার সঙ্গে চিঠিগুলো দেওয়া উচিৎ ছিল৷ এখানে কেউ থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে৷ আমার কথা হচ্ছে, ১১ জন নেতাই এর মধ্যে থাকবে, সেটা ওনারা কেমনে ধরে নিলেন৷

আপনারা অনেকেই বলছেন, সাংবাদিকদের মধ্যে যারা বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক তাদের হিসাব না চেয়ে শুধু নেতাদের কাছে হিসাব চাওয়ায় সমাজে খারাপ বার্তা যাচ্ছে৷ এখন যদি ওইসব সাংবাদিকের কাছে ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়, তখন আপনাদের অবস্থান কী হবে?

আমি প্রথম থেকেই বলছি, ঢালাওভাবে এটা চাওয়া যাবে না৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে৷ সাংবিধানিকভাবে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনেও বলা আছে৷ এখন ওনার অনেক টাকা আছে, ওনার হিসাব চাইব? তা তো হতে পারে না৷ এখন ওনার আয়ও তো অনেক হতে পারে৷ এখন সাংবাদিকরা কী আগের মতো ফকির নাকি? এখন আপনি চিন্তা করেন, আমাদের যে পত্রিকাগুলো বের হয় অধিকাংশই কিন্তু বড় কর্পোরেট হাউজের পত্রিকা৷ তাদের পয়সার অভাব নেই, তারা কাগজ বের করছে৷ একমাত্র ইত্তেফাক ট্রেডিশনালি সংবাদপত্র৷ এর আগেও ইত্তেফাকে সাংবাদিকদের যে বেতন, বোনাস ছিল সেটা অন্য সবার জন্য ঈর্ষণীয় ছিল৷ এখন এই প্রতিযোগিতায় এসে হয়ত সেটা একটু কমেছে৷ মানিক মিয়া যে পত্রিকা বের করেছিলেন, সেটা তিনি সাংবাদিকতার জন্যই বের করেছিলেন৷ এখন কর্পোরেট হাউজগুলো অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে৷ প্রচুর বেতনে একজন এখান থেকে ওখানে যাচ্ছে৷ সাংবাদিকতার মান কতটুকু, সেটা অন্য প্রশ্ন৷ আমি মনে করি, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, প্রাথমিক তদন্তের পর সেটা করতে পারে৷ সবাই ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব দাও এটা তো কোন রাজ্যে, কোথাও হয় না৷ 

সরকার তো বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদসহ নানা পেশার মানুষের ব্যাংক হিসাব তলব করে৷ তারাও যদি আপনাদের মতো আন্দোলন শুরু করে তাহলে তো সরকার কারও হিসাবই তলব করতে পারবে না? সেক্ষেত্রে জঙ্গি অর্থায়ন বা মানি লন্ডারিং রোধে ব্যবস্থা নেবে কীভাবে?

আমরা প্রথম থেকেই বলছি, ব্যাংক হিসাব তলব করতে পারে৷ কিন্তু ১২ জন নেতাকে ধরে হিসাব চাওয়াটাই তো প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে৷ ব্যবসায়ীদের তো সব ব্যবসায়ীকে ধরে ব্যাংক হিসাব চায় না৷ অন্য কোন সংগঠনকে তো এখনও চায় নাই৷ সংগঠনের নেতারা কী দুর্নীতি করবে? দুর্নীতি করে কারা সেটা সবাই জানে৷ কারা প্রজেক্ট চালায়, কাদের হাতে কত টাকা? আমরা বলছি, একটু যাচাই বাছাই করে দেওয়া উচিৎ৷ আমাদের প্রতিবাদটা কিন্তু এইখানে৷

আপনারা কী আইনগত কোন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন?

না, আমরা এইসব কিছু ভাবছি না৷ আমরা মনে করছি, যারা এটা করেছে, নিশ্চয় তাদের বোধোদয় হবে৷ তারা বলবেন, কী কারণে এটা করেছেন৷ আমরা তো এটাই বলছি, কে কে মানি লন্ডারিং করেছে সেটা স্পষ্ট করে দেন৷ এখন তো মানুষের মধ্যে একটা কিন্তু এসে গেছে৷ এরা মনে হয় দুর্নীতি করে৷ এটা তো পরিস্কার করতে হবে৷ এখন কি পেলেন সেটাও প্রচার করতে হবে৷ মানুষ তো ভুল বুঝছে৷ যে প্রক্রিয়ায় দেওয়া হয়েছে সেটা ঠিক না৷ আপনি ব্যক্তি ফরিদা ইয়াসমিনের তদন্ত করেন৷ কিন্তু আপনি তো আমাকে প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ আমার কষ্ট হয়েছে সেখানে৷

সাংবাদিক মহলে আলোচনা হচ্ছে, সাংবাদিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে দুই ফোরামের সাংবাদিক নেতারা কখনই এক মঞ্চে আসতে পারেন না৷ কিন্তু সাংবাদিক নেতাদের বিরুদ্ধে যখন আঘাত এসেছে বা তাদের হিসাব তলব করা হয়েছে তখন দুই ফোরামের নেতারাই একসঙ্গে, এক মঞ্চে বসে আন্দোলন করছেন৷ এটা কী আপনাদের স্বার্থের কারণে না কমিউনিটির স্বার্থের কারণে?

এটা আমাদের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ না৷ আমি বারবার বলছি, আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দেওয়া হয়নি৷ আমার সংগঠনকে জড়ানো হয়েছে, আমার সাংবাদিকতা পেশাকে জড়ানো হয়েছে৷ আমার কমিউনিটিকে জড়ানো হয়েছে৷ আপনি একটা চিঠিতে সবাইকে উল্লেখ করেছেন৷ এখন যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে তাদেরও এক কাতারে ফেলে দিলেন৷ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমার অনেক লেখা আছে৷ এটা তো এত সহজে মেনে নেওয়ার না৷ আমার কষ্ট তো আছে৷ আমি যে আদর্শের জন্য লড়াই করছি, তাহলে আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে গেলেন? এখন এটা ক্লিয়ার করতে হবে৷ না পেলেও জানান, কারও কিছু নেই৷ আমরা তো একটা ইমেজ নিয়ে কাজ করি৷ আমার ইমেজে যদি ধস নামে তাহলে এই নেতৃত্বের কোন মূল্য আছে?

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷