সরকারের ‘দ্বৈত নীতি’
২৪ জুলাই ২০১৩গত শনিবার ঢাকায় নিজের অফিসে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই সাংবাদিক ইমতিয়াজ রনি এবং মোহসিন মুকুলকে মারধোরের মামলায় সাংসদ গোলাম মাওলা রনি আদালত থেকে পরদিনই জামিন নেন৷ কিন্তু সেই জামিন বাতিলের আবেদন জানানো হলে বুধবার দুপুরে মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান শুনানি শেষে রনির জামিন বাতিল করে তাঁকে গ্রেপ্তারে নির্দেশ দেন৷ এরপর মাত্র দু'ঘণ্টার মধ্যেই বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বাড্ডা এলাকা থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, রনিকে ঢাকা মাহানগর গোয়েন্দা বিভাগের হাজতখানায় রাখা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হতে পারে৷ ওদিকে, গ্রেপ্তার হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে রনি ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন যে, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার এবং আইনজীবীদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে কথা বলছেন৷ তিনি তখন বলেন, তাঁর জামিন বতিল করা হলেও আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছ না৷ অথচ একই ঘটনায় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের মালিক সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রনি৷
গত শনিবার তোপখানার মেহরাবা প্লাজায় রনির অফিসে নির্যাতনের শিকার হন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার ইমতিয়াজ রনি এবং ক্যামেরাম্যান মোহসিন মুকুল৷ তাঁদের দাবি, দুই কোটি টাকা ঘুস লেনদেন হতে পারে এ খবর পেয়ে তাঁরা ঐ অফিসে গিয়েছিলেন৷
এদিকে রনিকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সাংবাদিকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তবে গত ১৫ মাসেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা৷ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, রনি সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্য, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করায় সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য৷ কিন্তু সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না কেন? তিনি বলেন, সরকার অবশ্যই জানে সাগর-রুনির হত্যাকারী কারা৷ কিন্তু এরপরেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না৷ তাই সরকারের এই দ্বৈত নীতির সমালোচনা করেন ইলিয়াস খান৷
সাগরের মা সালেহা মনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, সরকার ইচ্ছা করেই সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করছে না৷ তিনি মনে করেন, তদন্তকারীরা অবশ্যই হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে৷ কিন্তু সরকারের কাছের লোক হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না৷ নানা নাটক আর ডিএনএ পরীক্ষার নামে সময় কাটানো হচ্ছে৷ তিনি প্রশ্ন করেন, একজন সংসদ সদস্যও যেখানে সাংবাদিক নির্যাতন করে রেহাই পায় না সেখানে সাগর-রুনির হত্যাকারীরা কত শক্তিশালী যে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে? তারা সরকারের কত কাছের লোক তা জানতে চান সালেহা মনির৷