সরকারি 'মূর্খতা' আর কত!
২৭ মার্চ ২০২০ফলে করোনার আগমনি ধ্বণি তাঁদের আরো বেশি শুনতে পাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের কিছু কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে, করোনার বার্তা পেয়েও তাঁরা যথেষ্ট প্রস্তুতি না নিয়ে বসেছিলেন।
বেশি উদাহরণে না গিয়ে দুটি বিষয়ের কথা বলতে চাই।
এক, বুধবার স্ৱাস্থ্য় মন্ত্রণালয় সকালে একটি আদেশ জারির পর ঐ দিনই তা বাতিল করে। এছাড়া স্ৱাস্থ্য় অধিদপ্তরও একটি আদেশ স্থগিতের কথা জানায়।
দুই, বৃহস্পতিবার তথ্য় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য় মন্ত্রণালয়ে তাঁদের সহকর্মীদের অনুসরণ করেন। তাঁরাও সকালে একটি পরিপত্র জারি করে সমালোচনার মুখে ঐ দিনই তা বাতিল করেন। ঐ পরিপত্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংবাদ নিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে কোনো গুজব ছড়ানো হচ্ছে কিনা জানতে ১৫ সরকারি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল৷
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে কোনো নাগরিক চিকিৎসাসেবা না পেলে তাঁদের সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি বা থানার ওসিকে জানানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
এ কেমন কথা! এই মহামারির সময়ে যে চিকিৎসকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদেরকে সম্মান জানানোর পরিবর্তে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিচ্ছে সরকারি কর্তৃপক্ষ, ভাবা যায়!
আর স্ৱাস্থ্য় অধিদপ্তর তো আরেক কাঠি সরেস! তাদের চিঠিতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ছাড়াই করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে এমন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
স্বস্তির কথা, নির্দেশ দুটো দ্রুতই বাতিল করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে সই করেছিলেন স্ৱাস্থ্য়সেবা বিভাগের উপসচিব রোকেয়া খাতুন। এমন আদেশকে 'মূর্খতা'র সঙ্গে তুলনা করেছেন তাঁর বিভাগেরই সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, "যা হয়েছে সেটা মূর্খতা। আদেশটি আমাকে না জানিয়ে করা হয়েছে। কীভাবে এই আদেশ এলো সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আমি জানার পরই আদেশটি বাতিল করে দিতে বলেছি।"
মাননীয় সচিব মহোদয়ের কাছে আমাদের প্রশ্ন, আপনাকে না জানিয়ে কীভাবে আপনার বিভাগ থেকে এ ধরনের একটি আদেশ জারি হলো? আমরা কি ধরে নিতে পারি যে, চিকিৎসকরা সমালোচনা করায় হয়ত আদেশটি আপনার চোখে পড়েছে এবং সমালোচনার কারণেই হয়ত আপনি তা বাতিল করতে তৎপর হয়েছেন? নাকি আপনাকে জানিয়েই আসলে আদেশটি জারি হয়েছিল, কিন্তু সমালোচনা হওয়ায় এখন অনেক বসদের মতোই তা অধঃস্তনদের ওপর চাপিয়ে দিলেন?
যা-ই হোক, আপনি আপনার মন্ত্রণালয়ের আদেশকে 'মূর্খতা' বলেছেন। আমরা আমজনতা আর ভবিষ্য়তে এমন 'মূর্খতা' দেখতে চাই না। বিশেষ করে এমন মহাসংকটের সময় তো নয়ই।