সরকার পতনের আন্দোলনে সামনে আসছে খালেদা জিয়ার মুক্তি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩কিন্তু সরকারের দিক থেকে এব্যাপারে কোনো সাড়া নেই। তাই বিএনপি মনে করছে তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও সরকারের পতন ঘটাতে হবে। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরাও সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি যুক্ত করেছে। তারা আরো মনে করছে, এরমধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ সরকারের ওপর আরো বাড়বে । আন্তর্জাতিক চাপ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যু সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনকে আরও তীব্র করবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনে এক সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। পরদিন সোমবার ধোলাইখালে এক সমাবেশে তিনি বলেন,"আজকে তিনি (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, এতোই বেশি তার শরীর অসুস্থ যে ডাক্তাররা বলছেন, অবিলম্বে তার বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। সেই কারণে আমরা গতকাল বলেছি, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, অন্যথায় এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব এই সরকারকেই নিতে হবে।”
বিএনপির দেয়া ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামের সময় প্রায় শেষ। গত দুই দিনে এনিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন,"খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে আদালতের অনুমতি লাগবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া এটা সম্ভব নয়। কারণ তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আর বিদেশে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।”
আর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন,"খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে সরকারের কিছু করার নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্তযুক্তভাবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায়। এখন আইনের যে পরিস্থিতি, তাতে যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়াকে আগে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটিকে বাতিল করতে হবে।''
এর জবাবে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন,"এখানে আদালতের কোনো বিষয় নেই। বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছে সরকার। এখন সরকার চাইলে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতেও অনুমতি দিতে পারে। এখানে আইন বা আদালতের কোনো বাধ্যবাধকতার বিষয় নেই। সরকার তাকে শর্ত সাপেক্ষে তার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দিয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় শর্তহীনভাবেও মুক্তি দেয়ার বিধান আছে। তাকে এখন শর্তহীনভাবে মুক্তি দিলেই হলো।”
খালেদা জিয়ার দণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন,"নির্বাহী ক্ষমতা দণ্ডপ্রাপ্তদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। ১৯৭৬ সালে আ স ম আব্দুর রবও দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। তাকেও কিন্তু নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দেয়া হয়েছিল।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আমরা আদালতে গিয়েছি। কিন্তু আদালত জামিন দেননি। এই কারণেই তাকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়। আর গত ৫ সেপ্টেম্বর আমরা সরকারের কাছে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করেছি।”
"চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার জন্য বাংলাদেশে আর কোনো চিকিৎসা নেই। ফলে বিদেশে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই,” বলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
খালেদা জিয়াকে সর্বশেষ ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৯ আগস্ট। তিনি এখনো হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগরে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হয়। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে কারাগারের বাইরে নিজ বাসায় রাখা হচ্ছে তাকে।
বিএনপি এখন তার চূড়ান্ত মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন,"বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখন আমরা কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছি। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। সরকারকে ৪৮ ঘন্টার সময় দেয়ার পরও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সুতরাং আমাদের কঠোর আন্দোলন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
বিএনপির ৩ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া আছে। আহমেদ আজম খান বলেন, "৩ অক্টোবর বা তার আগেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি আগেও ছিল। এখন আরো সামনে চলে আসল। কারণ তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। আমরা মনে করি এই ইস্যুতে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। সারাদেশের নেতা কর্মিরা তার মুক্তির অপেক্ষায় আছেন।”
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন,"খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়টি আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যেও আছে। সরকার পতনের আন্দোলনে এটি এখন সামনে চলে এসেছে।”
তিনি জানান,"অক্টোবর মাসেই আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নেয়া হবে। আমরা সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আদালত ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়ে আসছি। হরতালও আমাদের বিবেচনায় আছে। এছাড়া অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচিসহ আরো অনেক টানা কর্মসূচি দেয়া হবে। যুগপৎ এই কর্মসূচি সহসাই ঘোষণা করা হবে।”
তিনি মনে করেন,"মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকরই শেষ নয়। এর পর আরো স্যাংশন আসবে। প্রতিষ্ঠানের ওপর স্যাংশন আসতে পারে। তখন সরকার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়বে। সাংবাদিকরাও ভিসা নীতির আওতায় আসায় সরকারে ওপর চাপ পড়বে। সংবাদমাধ্যমে বিরোধীদের খবর পাওয়া যাবে। এখন তো প্রায় সব খবরই সরকারের খবর।”
এদিকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন । নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে।
সাইফুল হক বলেন,"তাই অক্টোরই আমাদের সময়। এই সময়েই আমরা যুগপৎভাবে সরকারের পতন ঘটাতে যা করা দরকার করব।”